রাজ্যপালের দ্বারস্থ দুই সংগঠনই
উপাচার্য-ডিন বাছাই নীতিতে আপত্তি জুটা-কুটার
শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েও উপাচার্য বাছাইয়ে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার ব্যবস্থা রাখতে কসুর করেনি নতুন সরকার। এই অবস্থায় উপাচার্য এবং ডিন বাছাইয়ে রাজ্য সরকারের নয়া পদ্ধতি নিয়েই আপত্তি তুলল যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি জুটা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি কুটা-র নেতারা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে তাঁরা আচার্য-রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য শিক্ষকদের এই আপত্তিকে আমল দিচ্ছেন না।
রাজ্যের ওই দুই অগ্রণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির মতে, উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য গড়া সার্চ কমিটিতে নিজেদের মনোনীত সদস্যকে জায়গা করে দিয়ে রাজ্য সরকার গোটা প্রক্রিয়াটিই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার খর্ব হবে। একই সঙ্গে সরকার ডিন বাছাইয়ের যে-পদ্ধতি ঠিক করেছে, তা-ও মোটেই যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই শিক্ষাজগতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, বিগত তিন দশক ধরে যে-ভাবে আলিমুদ্দিন থেকে এ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, তৃণমূল সরকার তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখল। এক প্রবীণ শিক্ষকের মতে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যায়ের উন্নতির ভার বিশিষ্ট শিক্ষকদের নিয়ে গড়া মেন্টর গ্রুপের উপরে ছেড়ে দিয়ে রাজ্যের নয়া সরকার সদর্থক বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু উপাচার্য ও ডিন নিয়োগের প্রক্রিয়ায় তারা যে-ভাবে হস্তক্ষেপ করছে, তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণমুক্তির আশা করা যায় না।
শিক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, রাজ্যের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অস্থায়ী উপাচার্যেরা কাজ চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট আইনের নতুন সংশোধনীকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকার সেই সব জায়গায় পছন্দের উপাচার্য নিয়োগ করতে চাইছে। এ ছাড়া ডিন নিয়োগের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য নির্বাচন এড়ানো। কারণ, অন্য অনেক ক্ষেত্রে বিগত দেড় বছরে তৃণমূলের প্রভাব বাড়লেও শিক্ষক সংগঠনগুলিতে কার্যত তা হয়নি। ফলে সেখানে নির্বাচন হলে তৃণমূল অনুগামী শিক্ষকদের জয়ী হওয়া কঠিন। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে এর প্রমাণও মিলেছে। তাই নির্বাচন এড়িয়ে মনোনয়নের মাধ্যমে ডিন বাছাই করতে চাইছে রাজ্য সরকার।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বুধবার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংসদ (ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল) বরাবরই তৈরি হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। নয়া আইনেও রাজ্য সরকার সেই ব্যবস্থাই বহাল রেখেছে। কিন্তু ওই নির্বাচিত কাউন্সিলের শীর্ষ ব্যক্তি ডিন ঠিক করা হবে মনোনয়নের মাধ্যমে। এত কাল ডিনদের নির্বাচন করতেন শিক্ষকেরা। সরকারের নতুন বন্দোবস্তে প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচিতদের মাথায় মনোনীত ব্যক্তিকে বসানো হবে কোন যুক্তিতে? নির্বাচিত না-হলে ডিন অন্য শিক্ষকদের আস্থাভাজন হতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেছেন পার্থবাবু।
গত বছর তৈরি হওয়া আইনে উপাচার্য বাছাইয়ের সার্চ কমিটিতে আচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউজিসি মনোনীত সদস্যেরা ছিলেন। নতুন নিয়মে ইউজিসি-কে বাদ দিয়ে সেই জায়গায় রাজ্য সরকার মনোনীত এক জন সদস্য রাখা হবে। সম্প্রতি বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল পাশ হয়েছে। বিলটি এখন রাজ্যপালের অনুমোদনের অপেক্ষায়। তার আগেই নিজেদের আপত্তির কথা তাঁকে জানাতে চাইছে জুটা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনও একই পথে হাঁটছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংখ্যায়ন চৌধুরী বলেন, “ডিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই বড় ভূমিকা থাকত। নতুন আইনে সেই সুযোগ থাকছে না। এ-রকম অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। রাজ্যপালকে তা জানানো হবে।”জুটা ও কুটা-র এই উদ্যোগের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী কী বলছেন? ব্রাত্যবাবু বলেন, “গণতন্ত্রে যে-কেউ চিঠি লিখতেই পারেন। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে যা করার, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেই তা করেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.