স্কুলের ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্রদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগ তুলে বুধবার সকাল থেকে ছাত্রাবাসের খাবার ‘বয়কট’ করে স্কুলের গেটের সামনে ধর্নায় বসল ছাত্রেরা। রাইপুর ব্লকের লাউপাড়া হাইস্কুলের ঘটনা। খবর পেয়ে ওই স্কুলে গেলে ছাত্রদের হাতে ঘেরাও হন রাইপুর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ও ব্লকের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের পরিদর্শক। এ দিন বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের স্কুলে আটকে রাখা হয়। দুপুরে যুগ্ম বিডিও (রাইপুর) কৌশিস রায় স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার পরে তাঁরা গেট অবরোধ মুক্ত করেন। এই ঘটনার জেরে এ দিন স্কুলের পঠন পাঠন বন্ধ ছিল।
লাউপাড়া হাইস্কুলে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ছাত্রদের জন্য একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। সেখানে ৭৯ জন আবাসিক ছাত্র থাকে। প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে এই ধরনের ছাত্রাবাসে আবাসিকদের জন্য প্রতি মাসে ছাত্রপিছু ৭৫০ টাকা দেয়। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, সরকার থেকে যে টাকা দেওয়া হয়, তার থেকে কম খরচ করে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। স্কুলের দশম শ্রেণির আবসিক ছাত্র প্রতাপ সর্দার, বিদ্যুৎ লোহার, প্রণব সর্দারদের অভিযোগ, “গত এক সপ্তাহ ধরে আমাদের সকলকে শুধু আলুসেদ্ধ ভাত আর ডাল খাওয়ানো হচ্ছে। প্রতিবাদে এ দিন খাবার ‘বয়কট’ করে আমরা থালা হাতে স্কুলের গেটের সামনে ধর্নায় সামিল হয়েছিলাম।” |
আগেই এই স্কুলের ছাত্রাবাসে নিম্নমানের খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক অজিত হেমব্রম। মাসখানেক আগে তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নির্মাণকাজে দুর্নীতি ও ছাত্রাবাসে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) কাছে। ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। এ দিনের ঘটনার পরে অজিতবাবু বলেন, “ছাত্রাবাসে বেশ কিছুদিন ধরেই অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। ওই ছাত্রাবাসের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক বিপদতারণ পাত্র। মাস খানেক ধরে তিনি স্কুলে না আসায় সমস্যা বেড়েছে।”
প্রধান শিক্ষক বিপদতারণবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “পরিচালন সমিতির সম্পাদক ব্যক্তিগত আক্রোশে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। গত আট মাস যাবৎ ছাত্রাবাসের জন্য বরাদ্দ অর্থ স্কুলের তহবিলে আসেনি। ঋণ হয়ে যাওয়ায় দোকানদাররাও ছাত্রাবাসের জন্য মালপত্র দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে ছাত্রাবাসে খাবারের মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।” তাঁর আশঙ্কা, এ নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্কুলে গেলে আমাকে হেনস্থা করা হতে পারে বলে কিছুদিন যাইনি।” এ দিনও তিনি স্কুলে আসেননি।
রাইপুর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পার্থসারথি মণ্ডল বলেন, “প্রধান শিক্ষক স্কুলে না আসার জন্যই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছাত্রদের নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের পরিদর্শক তপনকুমার সেনগুপ্ত বলেন, “ছাত্রাবাসের জন্য বরাদ্দ অর্থ শীঘ্রই স্কুলের তহবিলে যাতে জমা হয় তার চেষ্টা চলছে।” রাইপুরের বিডিও কিংশুক মাইতি দাবি করেন, “ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বিরোধ চলছে। তার জেরেই স্কুলের উন্নয়ন থেকে ছাত্রাবাস-সর্বত্র সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন স্কুলে না আসায় সমস্যা বেড়েই চলেছে।” তিনি জানান, আবাসিকদের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ দিন বারবার চেষ্টা করেও জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। শীঘ্রই আমি ওই স্কুল পরিদর্শনে যাব। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |