প্রাক্তন ফুটবলারের হাতে সেজে উঠছেন মা দুর্গা
বেশ কয়েক বছর আগে পায়ের চোট তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিল ফুটবল মাঠ থেকে। এই ক’বছরে গোবরডাঙার ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা, প্রাক্তন ফুটবলার সুদীপ দাস হয়ে গিয়েছেন পুরোদস্তুর প্রতিমা শিল্পী। প্রতিমা তৈরির কোনও প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও অধ্যবসায় এবং ভাল প্রতিমা বানানোর জেদই তাঁকে এনে দিয়েছে শিল্পীর মর্যাদা। সুদীপবাবুর তৈরি দুর্গাপ্রতিমা এলাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকী কলকাতাতেও পাড়ি দিচ্ছে।
সামনেই পুজো। সুদীপবাবু এখন বেজায় ব্যস্ত। কখনও সিংহের মুখ তৈরি করছেন, কখনও বা প্রতিমার গায়ে রং চাপাচ্ছেন। এ বার গোবরডাঙা এবং সংলগ্ন এলাকা মিলিয়ে ৩১টি পুজোর উদ্যোক্তারা সুদীপবাবুর কাছে প্রতিমার বায়না করেছেন। নিজের বাড়িতেই প্রতিমা গড়েন বছর চল্লিশের সুদীপবাবু। তাঁকে সহযোগিতা করেন বেশ কিছু শ্রমিক। আর কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর তৈরি প্রতিমা পাড়ি দেবে বিভিন্ন মণ্ডপে।
ছেলেবেলা থেকেই ভাল ফুটলার হিসেবে নাম-ডাক ছিল সুদীপবাবুর। এলাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে বারাসত, কলকাতা, অসম, শিলিগুড়ি-সহ বহু এলাকায় তিনি ফুটবল খেলেছেন। কলকাতার এরিয়ান ক্লাবে খেলেও সাড়া ফেলেছিলেন। বছর বারো আগে অসমের একটি টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে পায়ে বড় ধরনের চোট পান। খেলা ছেড়ে দিতে হয়।
ছবি: শান্তনু হালদার।
তার পরে বিয়ে করে ফেলায় সংসার চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। পোলট্রির ব্যবসা ছিল। কিন্তু তাতে খুব বেশি আয় হত না।
কী করা যায়, এই ভাবনা থেকেই প্রতিমা তৈরিতে হাতেখড়ি সুদীপবাবুর। বছর দশেক আগে শখের বশে স্থানীয় প্রতিমা শিল্পী বলরাম পালের সহযোগিতায় কয়েকটি সরস্বতী প্রতিমা বানিয়ে ফেলেছিলেন সুদীপবাবু। শিখেছিলেন প্রতিমা তৈরির নিয়ম-কানুন। তার পর থেকে মাঝেমধ্যেই ছোট মাপের প্রতিমা বা মূর্তি বানাতে থাকলেও দুর্গাপ্রতিমা বানানোর কাজে প্রথম হাত দেন ২০০৪ সালে। গোবরডাঙার গড়পাড়া বিধান স্মৃতি ক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁকে দুর্গাপ্রতিমা বানানোর বরাত দেওয়া হয়। এই পুজো ওই এলাকার অন্যতম বড় পুজো। বরাত নিয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখেছিলেন সুদীপবাবু। অবশ্য বলরামবাবুর সহযোগিতায় সে যাত্রায় উতরে যান। তার পর একাই প্রতিমা বানানোর জেদ ধরেন। দিনরাত খেটে সফলও হন।
২০০৬ সাল থেকে নিজেই প্রতিমা গড়ছেন সুদীপবাবু। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে! কয়েক বছরের মধ্যেই শিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর তৈরি দুর্গাপ্রতিমা সল্টলেক, বেহালাতেও পাড়ি দিয়েছে। এলাকার মানুষেরা এক জন ফুটবলারকে প্রতিমা শিল্পী হয়ে উঠতে দেখে অবাক। সুদীপবাবুর কথায়, “কেউ ভাবেননি আমি প্রতিমা গড়ব। অনেকেই অবাক হয়ে যান। আমার তৈরি প্রতিমা যখন মণ্ডপে পুজিত হয়, দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি। পাশ থেকে তখন অনেকেই প্রশংসা করেন। তখন যে কী অনুভূতি হয়, বলে বোঝাতে পারব না।”
বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী ও ছেলে রয়েছে। বাবা সুনীল কুমার এবং মা ইরা দেবী ছেলেকে উৎসাহ দেন। স্ত্রী পাপিয়া স্বামীর কাজে গর্বিত। তিনি বলেন, “ফুটবলার এবং প্রতিমা শিল্পী, দু’ক্ষেত্রেই সমান জনপ্রিয়তা ওর। ওর প্রশংসা শুনতে ভাল লাগে।” গড়পাড়া বিধান স্মৃতি ক্লাবের সম্পাদক শঙ্কর দত্ত বলেন, “ফুটবলার এবং শিল্পী, দু’টো কাজেই ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যখন খেলত, তখন সবাই প্রশংসা করত। শিল্পী হিসেবেও সুনাম পেয়েছে।”
আরও ভাল প্রতিমা তৈরি এবং আরও বড় শিল্পী হওয়ার স্বপ্নেই এখন বিভোর সুদীপবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.