সরকারি উদাসীনতায় ঝিল শহর আলিপুরদুয়ার থেকে ঝিল ক্রমশ কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক দশক ধরে সরকারি তরফে শহরের ঝিল সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস মিললেও হলেও কাজের কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সরকারি নথি ভুক্ত জলাশয় ভরাট করে শহরের এক শ্রেণির বাসিন্দা বাড়িঘর তৈরি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন চললে আগামী পাঁচ বছর বাদে শহর থেকে ঝিলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা পুরসভাকে জানিয়ে দিয়েছেন। ইনস্টিটিউট অব ওয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এনভারমেন্টাল স্টাডিজের বিজ্ঞানী নিতাই কুণ্ডু কয়েক মাস আগে আলিপুরদুয়ারে ঝিলগুলির পরিদর্শন করেন। দ্রুত সঙ্গে ঝিলগুলি দখল মুক্ত করে ঝিলে জমে থাকা আবর্জনা পলি সরানোর বিষয়ে জোর দেন। নিতাইবাবুর কথায়, “ঝিলগুলির জলের উপর স্তরে এক মিটার পর্যন্ত নিয়মিত জঞ্জাল ফেলা ও সংস্কার না করায় ভরাট হচ্ছে। এ ভাবে চললে তো পাঁচ বছরে ঝিল গুলি আর থাকবে না।” পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত আলিপুরদুয়ার শহরের ঝিলের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুভাষ বাবু বলেন, “এখন বৃষ্টির জলের ভাণ্ডার সীমিত বছরে ৩ মাস পর্যন্ত যে সমস্ত জলাশয়ে ২ ফুট পর্যন্ত জল থাকে সে সমস্ত জলাশয় ভরাট করা বে আইনি জলাশয় পরিবেশের পক্ষে কতটা জরুরি তা বুঝতে হবে। আলিপুরদপুয়ারকে কেউ বলেন, ডুয়ার্সের সদর দরজা। কেউ দিঘির শহর বলে থাকেন। কোচবিহারে মত আলিপুরদুয়ারকে ঝিলের শহর বলতেন পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, শহরে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ছটি ঝিলের অস্তিত্ব রয়েছে। শহরের বুকে হাসপাতাল পাড়া, হিন্দি স্কুল এলাকা,ওল্ড টাউন,বাবুপাড়া, স্টেশন রোড ও মরাডিমা যেগুলির মোট আয়তন ১৩ হেক্টর। ৩০ শতাংশ জলাশয়ে মাটি ফেলে ভরাট করে ইতিমধ্যে বাড়ি ঘর তৈরি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এখনও সমান ভাবে অবশিষ্ট ঝিলে মাটি ফেলে ভরাট করার কাজ চালানো হচ্ছে বলে নানা মহলের অভিযোগ। সাত দশক আগে শহরের পাশ দিয়ে কালজানি ও ডিমা নদী বয়ে যেত দুই নদী বাঁধ দেবার পর কালজানি ও মরা ডিমার পুরনো খাদগুলি ঝিলে পরিণত হয়। সারা বছর টলটলে স্বচ্ছ ও জল থাকত। তবে সংস্কার না হওয়ায় কচুরিপানা ও বাড়ির জঞ্জাল ফেলার ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসাবে ঝিলগুলিকে ব্যবহার করছেন কিছু বাসিন্দা। আলিপুরদুয়ার শহরে বৃষ্টি হলে এক দশক আগে পর্যন্ত বৃষ্টির জল ঝিলে পড়ায় শহরে জল জমে থাকার সমস্যা ছিল না। তবে এখন ঝিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলে শহরে জলজমে থাকার ঘটনা ঘটছে। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, “আলিপুরদুয়ারের ফুসফুস ছিল ওই ঝিলগুলি পুরসভা। প্রশাসন সকলে ঝিল সংস্কার নিয়ে উদাসীন এক সময় যে সমস্ত ঝিলে প্রতিমা পর্যন্ত বিসর্জন হতো। আজ ওই সমস্ত ঝিল ভরাট হয়ে গিয়েছে। পাল্লা দিয়ে দূষণ বাড়ছে। খুব দ্রুত পুরসভা উদ্যোগী না হলে মারাত্মক বিপদ হবে।” আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু বলেন, “আগুন লাগলে দমকল জল পায় না। শহরে এত গুলি ঝিল থেকেও সংস্কার না করায় সে গুলি আজ বুজিয়ে বেদখল হচ্ছে।” আলিপুরদুয়ার কলেজের শিক্ষক শৈলেন দেবনাথ বলেন, “যে ভাবে ঝিল বেদখল হচ্ছে তা মানা যায় না পুরসভা করছেটা কী? তবে ঝিল নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন ইস্টিটিউট অব ওয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যণ্ড এনভারমেন্টাল স্টাডিজের বিঞ্জানী নিতাই কুণ্ডু এবং পুর চেয়ারম্যান দীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। নিতাইবাবু জানান, এলাকার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বসা হয়েছিল, তাঁরা সকলে ঝিল সংস্কারে একমত বলে তিনি জানান। ঝিলের জমি দখলমুক্ত করে পলি ও জঞ্জাল সরিয়ে পুনরায় ঝিলগুলিকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি, ঝিলের পাড় সৌন্দর্যায়ন করার বিষয়ে ১৭ কোটি টাকা খরচ হবে। টাকার অনুমোদন পেতে সরকারের কাছে তারা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। নিতাইবাবুর কথায়, “আশা করি, ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হবে তিন বছরের মধ্যে ওই কাজ শেষ হবে।” চেয়ারম্যান বলেন, “কয়েক বছর আগে আমরা ঝিল দখল মুক্ত করার কাজে নেমে সফলতা আসে। এখনও সামান্য কিছু জমি দখল হয়ে আছে। নতুন করে দখল হচ্ছে না। সংস্কারের কাজ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে। আশা করি, ঝিলের শহর আলিপুরদুয়ারের পর্যটকদের নজর কাড়বে।” |