পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুকের ঢিলছোড়া দূরত্বে ‘শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতি’ এলাকার কাঁকট্যা বাজার থেকে রূপনারায়ণ নদী তীরবর্তী সোয়াদিঘি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাটির অবস্থা খুবই বেহাল। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সরকারের কাঁকট্যা স্টপেজ থেকে জেলার সুপ্রাচীন কৃষ্ণগঞ্জ কৃষি শিল্প বিদ্যালয় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তাটি। একমাত্র এই রাস্তাটি দিয়ে যাওয়া যায় জেলার গর্ব স্বাধীনতা আন্দোলনের শহিদ জননী মাতঙ্গিনী হাজরার বাড়ি আলিনান গ্রামে।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে এই গ্রামেই মাতঙ্গিনী হাজরার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। শুধু তাই নয়, উক্ত বিদ্যালয়টির সামনেই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী মণিলাল ভৌমিকের বাড়ি। ভারতের নানা প্রান্তের ঐতিহাসিক থেকে শুরু করে অত্যুৎসাহী পর্যটকরা প্রায়শই এই রাস্তা দিয়ে মাতঙ্গিনী হাজরার বাড়ি পরিদর্শনে আসেন। মণিলাল ভৌমিকের সঙ্গে মাঝেমধ্যে বিদেশি সহকর্মীরা আসেন তাঁর গ্রামের জন্মভূমিতে। মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মস্থান হওয়ার কারণে কাঁকট্যা থেকে কৃষ্ণগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি প্রায় ২৫-২৬ বছর আগে কোনও এক সময়ে পিচের তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাস্তাটি একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
|
সমস্ত রাস্তাটিতে বড় বড় বোল্ডার বেরিয়ে বিপজ্জনক ভাবে হতশ্রী চেহারা নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝে মাঝে মোরাম দিয়ে জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তা কোনও ভাবেই যাতায়াতকারীদের নিত্য দুঃসহ যন্ত্রণা কাটিয়ে ওঠার মতো নয়। অধিকাংশ জায়গায় বড় বড় গর্ত। বর্ষায় অবস্থা আরও করুণ। বোল্ডার, মোরাম এবং জল-কাদার সহাবস্থানে সে এক নিদারুণ অবস্থা।
এই এলাকার প্রায় ১৫-২০টি গ্রামের মানুষজনকে রুজি-রোজগারের তাগিদে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এবং কলকাতার অভিমুখে যাওয়ার মেচেদা স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য এই জরাজীর্ণ রাস্তাটিকেই ব্যবহার করতে হয়। তা ছাড়া, এলাকার পানচাষিদেরও পান নিয়ে আসতে হয় জেলার সর্ববৃহৎ এই কাঁকট্যা বাজারের পানআড়তে। এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তিনটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি বালিকা বিদ্যালয় ও বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের। এবং অবশ্যই শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও। ফলে বেশি কষ্ট হয় ছাত্রছাত্রীদের। গ্রামের পড়ুয়ারা যেহেতু সকলেই সাইকেল ব্যবহার করে, সেহেতু এবড়োখেবড়ো রাস্তার বড় বড় বোল্ডারে প্রায়ই এদের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। বেশ কয়েক জন পড়ুয়া ইতিমধ্যেই গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, রাস্তাটিকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় এনে পুনরায় পাকা করা হোক। অন্তত বোল্ডার সরিয়ে মোরাম রাস্তা করা হোক।
কার্তিক সাহু। সহ-শিক্ষক, রানিচক বেণীমাধব প্রাথমিক বিদ্যালয়, তমলুক গ্রামীণ চক্র, পূর্ব মেদিনীপুর |