|
|
|
|
চিন্তা বাড়ছে মমতার |
মুলায়মের বিজেপি বিরোধিতায় স্বস্তি কংগ্রেসে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কংগ্রেস-বিরোধিতার স্বপ্নে কাঁটা সেই মুলায়ম সিংহ যাদব।
কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে যে তিনি এখনই অস্থির করে তুলতে চান না, তা ক’দিন আগেই বলেছেন সমাজবাদী পার্টির এই বর্ষীয়ান নেতা। সেই কারণে, লখনউয়ে কংগ্রেস-বিরোধী যে প্রতিবাদ সভার পরিকল্পনা মমতা করেছেন, তাতে যোগ দিতে এখনও অনিচ্ছুক মুলায়ম। সপা-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা মমতা বলেছেন, তাতেও মুলায়মের সামিল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, আসন্ন গুজরাত বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রচার করবেন। মুলায়মের এই বিজেপি-বিরোধিতা আখেরে কংগ্রেস বিরোধিতার বাতাবরণকে লঘু করছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
সামগ্রিক ভাবে এই পরিস্থিতিতে খুশি কংগ্রেস। সন্দিগ্ধ তৃণমূল-সহ কংগ্রেস-বিরোধীরা। সপা সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে আপাতত কৌশলে এ ভাবেই ‘অধরা’ থাকতে চাইছেন ‘নেতাজি’। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করে তিনি যেমন বামেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তেমনই তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে চাইছেন। এমনকী ঘরোয়া আলোচনায় মমতাকে এ-ও জানিয়েছেন যে, ভেঙে পড়া ঘরে তিনিও থাকতে চান না। কিন্তু এরই পাশাপাশি মুলায়ম তাঁর নিজের স্বার্থও দেখতে চাইছেন। |
|
মুলায়ম-ঘনিষ্ঠ সপা-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, এই মুহূর্তে লোকসভা ভোট হলে উত্তরপ্রদেশে দলের আসন বাড়বে ঠিকই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারকে অস্থির করে তুলতে সপা যদি আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় কিংবা মুলায়মই যদি সরকারের পতনের কারণ হয়ে ওঠেন, তা হলে তার খেসারতও দিতে হতে পারে। কেননা, সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস দুর্বল হলে বিজেপি শক্তিশালী হবে। মুলায়ম সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন জোগালে উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘুরা তা ভাল ভাবে নেবেন না। আর সেই কারণেই মুলায়ম খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করলেও নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করছেন।
তা ছাড়া, কেন্দ্রে সরকারের স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করতে কংগ্রেস প্রতিনিয়ত সপা-কে তোয়াজ করে চলছে। তাতে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ সিংহ সরকারের সুবিধাই হচ্ছে। যেমন সম্প্রতি কলকাতা থেকে সরিয়ে আগরায় বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে রাজ্যের প্রকল্পভিত্তিক উন্নয়নে সাহায্য করছে কেন্দ্র। এই সব সাত সতেরো ভেবেই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে মমতার ধর্না মঞ্চে সামিল হওয়ার ব্যাপারে এখনও গররাজি মুলায়ম।
দিল্লির যন্তর-মন্তরে মমতার ধর্না মঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য ঘরোয়া ভাবে সপা নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছিল তৃণমূল। আবার সেই সভা থেকেই মমতা ঘোষণা করেন যে লখনউতে তিনি এ রকম একটি সভা করবেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব আশা করছেন, তৃণমূলের লখনউয়ের সভাতেও মুলায়ম বা তাঁর পুত্র অখিলেশ সামিল হবেন না। কেননা মমতার দিল্লির সভায় এনডিএ-র আহ্বায়ক শরদ যাদব ছিলেন।
সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাষিদের যে সংগঠনগুলি তৃণমূলের বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার অনুগামী।
বস্তুত মমতার বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি যাতে দূরত্ব বজায় রাখে তা এখন কৌশলে নিশ্চিত করতে তৎপর। আর সেই কারণে, বিজেপি তথা এনডিএ-র সঙ্গে তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠতা’ ও ‘যোগাযোগের’ কথা এখন তুলে ধরতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের কথায়, “কালো টাকা উদ্ধার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ঠিক যে ভাষায় বিজেপি কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই একই কথা বলছেন। তা ছাড়া, যে ভাবে এনডিএ-র আহ্বায়ক শরদ যাদব তৃণমূলের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তাতেও উভয় শিবিরের সমন্বয়ের ছবি স্পষ্ট।”
এমনকী অমিতাভ বচ্চনকে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ করার নেপথ্যেও রাজনীতি রয়েছে বলে কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি-র সঙ্গে আঁতাঁত করেই তৃণমূল সরকার এই পদক্ষেপ করছে। কারণ, অমিতাভ বচ্চন হলেন গুজরাতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ও নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ। |
|
|
|
|
|