|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
বনশ্রী দেব (২৭)
ব্যাঙ্কে চাকরি • অবিবাহিত • থাকেন মুম্বইয়ে অফিসের দেওয়া ফ্ল্যাটে • পরিবারের দায় নেই
• ইচ্ছে ৫২ বছরে ব্যবসা শুরু আর ৪০ ছোঁয়ার আগেই বিদেশ ভ্রমণের • লক্ষ্য ভবিষ্যতের সুরক্ষাও
|
বনশ্রী
নিট মাস-মাইনে ৩০,০০০
(পিএফ কাটার পর) |
টাকা রাখেন (মাসে) |
• অফিসের পিএফ ৬,০০০ |
• এলআইসি এনডাওমেন্ট ২,০০০
বিমা মূল্য ৫ লক্ষ |
• রেকারিং ডিপোজিট ১,৫০০ |
• মিউচুয়াল ফান্ড ৪,০০০ |
• দু’টি ইক্যুইটি, একটি সোনা মাসে খরচ ১৬,৫০০ |
• দু’চাকার ইএমআই ৩,০০০ |
• মুদিখানা, বিদ্যুতের বিল, খাওয়া-খরচ ইত্যাদি ১৩,৫০০ |
• মাস শেষে হাতে থাকে ৪,০০০ |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
বনশ্রী বুদ্ধিমতী। তাই বয়স কম থাকতেই সঞ্চয়ে সজাগ। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য তাঁর যা পরিকল্পনা, তাতে জমাতে হবে আরও অনেকটাই বেশি। বিশেষত যেখানে মুম্বইয়ের মতো শহরে বাড়িভাড়া জোগাচ্ছে অফিস। আর যাতায়াতের খরচ কমাতে দু’চাকার বন্দোবস্তও করে ফেলা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তা ছাড়া, পরিবারের দায় এখনও সে ভাবে মাথায় চাপেনি।
একটা লক্ষ্য সামনে থাকলে সঞ্চয় করতে সুবিধা হয়। উৎসাহ মেলে। তা এখানে তো নিজের লক্ষ্য নিজেই ঠিক করে ফেলেছেন বনশ্রী। তিনি ৫০-৫২ বছর বয়সে নিজের ব্যবসা শুরু করতে চান। তাঁর মতে, ফি-বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কথা মাথায় রাখলে, তখন তার জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। আর বিদেশযাত্রার জন্যও খরচ পড়বে নিদেনপক্ষে ৫ লক্ষ। দেখা যাক, কী ভাবে সেই টাকা জোগাড়ের বন্দোবস্ত করতে পারেন বনশ্রী।
ব্যবসা করতে ‘ফান্ড’: একেবারে অঙ্ক কষে এগোনো যাক। বনশ্রী মনে করেন, যখন তাঁর ৫০-৫২ বয়স হবে, তখন ব্যবসা শুরু করতে লাগবে অন্তত ৪০ লক্ষ টাকা। আমার মতে, বনশ্রীর উচিত তার জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) পদ্ধতিতে জমানো।
ইতিমধ্যেই শেয়ার আর সোনা দু’ধরনের ফান্ডেই টাকা রেখেছে বনশ্রী। কিন্তু তা যথেষ্ট কী? দেখা যাক।
সাধারণত ফান্ডে ৫ বছর টাকা রাখলে রিটার্ন মেলে গড়ে বছরে ১২%। সেই হিসেবে এগোলে কত টাকা জমাতে হবে বনশ্রীকে? ছকে ফেলে দেখি।
সঞ্চয়ের মেয়াদ: ২৫ বছর
সুদ: ১২%
মাসে লগ্নি: ৩,০০০ টাকা
অতএব ২৫ বছর পর মোট পাওনা: ৫৬,৩৬,৫০০ টাকা
তা হলে মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রাখলেও ব্যবসা চালুর মূলধন জোগাড়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু যদি এমন হয় যে, ব্যবসার মূলধনের হিসেব কষার সময় মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথাতেই রাখেননি বনশ্রী? অর্থাৎ, এখন ব্যবসায় ঝাঁপালে ৪০ লক্ষ লাগতে পারে ধরে নিয়ে সেই অঙ্কই তুলে রাখতে চাইছেন ভবিষ্যতের জন্য। তা হলে কিন্তু মস্ত সমস্যা। কেন, একটা সহজ অঙ্ক কষে দেখি:
ধরা যাক, এই মূল্যবৃদ্ধির হার ৬%। যা ওই ৪০ লক্ষের মধ্যে ধরা নেই। সে ক্ষেত্রে কিন্তু নিট সুদ দাঁড়াবে (১২%-৬%)=৬%। সুতরাং, এ বার ছবিটা এ রকম
নিট সুদ: (১২%-৬%)=৬%
মেয়াদ: ২৫ বছর
মাসে সঞ্চয় প্রয়োজন: ৫,৭৭৩ টাকা
এ বার কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, সঞ্চয়ের বর্তমান হার বজায় রাখলে ব্যবসা শুরুর তহবিল তৈরি বনশ্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব মাসিক সঞ্চয় বাড়াতে হবে তাঁকে।
এখানে একটা কথা গুরুত্বপূর্ণ। তা হল, সঞ্চয়ের আগে সব সময় মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রাখুন। নইলে আজকে যে অর্থের অঙ্ক বিশাল মনে হচ্ছে, আগামী দিনে তা প্রয়োজনের সামান্য অংশও মেটাতে পারবে না। |
|
বিদেশ পাড়ির কড়ি:
চল্লিশ ছোঁয়ার আগেই বিদেশ যেতে চায় বনশ্রী। হিসাবের সুবিধার জন্য ধরে নিচ্ছি সেটা আজ থেকে ১০ বছর পরে। যখন তাঁর বয়স হবে ৩৭। এখন দেখা যাক, তখন ৫ লক্ষ টাকা হাতে পেতে কতটা সাহায্য করতে পারে রেকারিং ডিপোজিট। এখানেও সুবিধার জন্য মূল্যবৃদ্ধি ৬ শতাংশই ধরে নিচ্ছি আমরা। তা হলে হিসাব দাঁড়াচ্ছে
নিট সুদ: ২.৫% (রেকারিং-এ সুদ ৮.৫% - ৬% মূল্যবৃদ্ধি)
প্রতি মাসে দিতে হবে: ৩,৭০০ টাকা। এখন মাসে ১,৫০০ টাকা রেকারিং-এ জমা দেন বনশ্রী। কিন্তু তাঁকে জমাতে হবে আরও ২,২০০ টাকা।
সেই টাকা তিনি এসআইপি প্রকল্পে ঢালতে পারেন কিংবা জমা দিতে পারেন গোল্ড সেভিংস ফান্ডে।
দুই থেকে চার চাকা: দু’চাকার ইএমআই হিসেবে মাসে ৩ হাজার টাকা তুলে রাখতে হয় বনশ্রীকে। আগামী দিনে যদি তাঁর গাড়ি কেনার ইচ্ছে থাকে, তবে তার জন্যও টাকা জমাতে হবে এখন থেকেই। ধরে নিচ্ছি, তখন ৪.৫ লক্ষ টাকার গাড়ি কিনতে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিলেন তিনি। ৫ বছর মেয়াদে যার মাসিক কিস্তি পড়বে প্রায় ৬,৭০০ টাকা। কিন্তু তা হলেও তো বাকি ১.৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে নিজের পকেট থেকে। সে ক্ষেত্রেও তুরুপের তাস হতে পারে রেকারিং ডিপোজিট-ই। এখন তাঁর হাতে যে টাকা রয়েছে, সেই ৪ হাজার দিয়েই ৩ বছরের রেকারিং ডিপোজিট খুলতে পারেন তিনি। ৮.৫% সুদ ধরলে যা মেয়াদ শেষে দাঁড়াবে ১.৬০ লক্ষ টাকায়।
মূল্যবৃদ্ধি-সহ অন্যান্য বাধা ঠেলে তা হলে আর অসুবিধা হবে না গাড়ি কেনার দেড় লক্ষ টাকা উপুড় করতে।
বুড়ো বয়সের কথা মাথায় রাখুন: ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে এখন থেকেই। মাথায় রাখতে হবে, বিয়ের পর বাড়তি চাহিদার কথাও। সেই অনুযায়ী আয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়ও বাড়িয়ে যেতে হবে ক্রমাগত। বিশেষত বনশ্রী যেখানে পঞ্চাশের কোঠায় ঢুকে পড়ার পর ব্যবসার ঝুঁকি নেওয়ার কথা ভাবছে। ব্যবসা ভাল চললে হয়তো তাঁকে অবসরকালীন সঞ্চয় বা খরচ নিয়ে তেমন ভাবতে হবে না। কিন্তু যদি ব্যবসা মার খায়? সে ক্ষেত্রে তো হাতে থাকবে শুধুমাত্র পিএফ, গ্র্যাচ্যুইটি এবং পেনশন। শুধু তাতে কি আর প্রয়োজন মিটবে? তাই সেই সমস্যা কাটাতে আমার পরামর্শ:
• প্রথমেই লগ্নি করা দরকার একটি ভাল পেনশন প্রকল্পে
• আয়ের সঙ্গে সঙ্গে গোল্ড ইটটিএফ এবং গোল্ড সেভিংস ফান্ডে লগ্নি আরও অনেকটাই বাড়া দরকার। মনে রাখা ভাল, লগ্নি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সব প্রকল্প বেশ ভাল
• মন দিতে হবে স্থায়ী আমানতে। নিজের ব্যাঙ্কে তা করলে যেহেতু ১% সুদ বেশি পাবেন, তাই সেই সুযোগ কাজে লাগানো জরুরি
• বনশ্রী প্রায় ৫ লক্ষ টাকা নিশ্চিত রিটার্নের বিমা করেছেন। সে ক্ষেত্রে সংস্থা যদি বছরে প্রতি হাজারে ৫০ টাকা বোনাস দেয়, তা হলে মোট বোনাস হয় ২৫,০০০ টাকা। তবে এই টাকা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় না। ২০ বছর পর হয়তো এক সঙ্গে ফেরত পাওয়া যাবে মোট ১০ লক্ষ টাকা। যার জন্য এখন প্রতি বছর ২৪ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে তাঁকে। সুতরাং, রিটার্নের হার ৬.৩৯%। ফলে, খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না এই লগ্নিতে।
আমার মতে, তার থেকে বরং একটি মেয়াদি জীবন বিমা প্রকল্পে লগ্নি করা ভাল। সেখানে কম প্রিমিয়াম গুনে বরং বাকি টাকা রাখতে হবে চড়া রিটার্নের প্রকল্পে
• নিয়মিত নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অঙ্ক যাচাই করতে হবে। দেখতে হবে কত টাকা জমছে সেখানে। খতিয়ে দেখুন সুদের হারও
এই সমস্ত কথা মাথায় রাখলে কিন্তু বিদেশ বেড়ানো বা ব্যবসা করা কোনওটাই কঠিন হবে না বনশ্রীর পক্ষে। |
|
|
|
|
|