|
|
|
|
|
|
ঠিকানা |
ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখছেন বুঝলাম। কিন্তু ধারের জন্য ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়েছেন কি?
মনে করালেন প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী |
নিজের ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার জন্য আগে চুল পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করত গড়পড়তা মধ্যবিত্ত। মাথার উপর ছাদ জোগাড়ের জন্য হাঁ করে তাকিয়ে থাকত অবসরের পর হাতে আসবে এমন থোক টাকার দিকে। কিন্তু বয়স তিরিশ-চল্লিশের কোঠা ছুঁতেই পছন্দের ফ্ল্যাটের চাবি পকেটে পুরে ফেলছে আজকের প্রজন্ম। চটপট বাড়ি বাছাই সেরে পৌঁছে যাচ্ছে ব্যাঙ্কের দরজায়। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো হাতে আসছে গৃহঝণ। আর তার পর গৃহপ্রবেশ নেহাতই সময়ের অপেক্ষা।
দিতে তো চায় সক্কলেই
আপনাকে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার ধার জোগাতে এক পায়ে খাড়া প্রায় সব ব্যাঙ্কই। তা সে রাষ্ট্রায়ত্তই হোক বা বেসরকারি। এর বাইরেও গৃহঝণ দিতে মুখিয়ে রয়েছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ফ্ল্যাট কেনার জন্য ধার দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে এদের ফোন বা এসএমএস-ও এত দিনে নিশ্চয়ই অনেক বার পেয়েছেন আপনি। কিন্তু মনে রাখবেন, প্রাথমিক ভাবে দেখানো এই আগ্রহ কিন্তু আসলে কিছুই নয়। কারণ, সত্যি সত্যিই টাকা দেওয়ার আগে ব্যাঙ্ক অনেক কিছু জানতে চাইবে আপনার কাছে। দাখিল করতে বলবে হিসেব-নিকেশ, কাগজপত্র। পরখ করতে হবে আপনাকেও। দেখে নিতে হবে, কোন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঠিক কোন প্রকল্পটি আপনার জন্য মানানসই।
চাইলেই ঝণ পাব?
না। অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এই শর্ত আবার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে আলাদা।
তবে ধার পেতে যে স্থায়ী চাকরি করতেই হবে, এমনটা নয়। ঝণ দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো এঁদেরই সব থেকে বেশি পছন্দ করে যে কোনও ব্যাঙ্ক। কিন্তু তা বলে যাঁরা কোনও সংস্থায় চুক্তিতে কাজ করেন, গৃহঝণের দরজা তাঁদের জন্য বন্ধ নয়। ধার পেতে পারেন ব্যবসায়ী কিংবা স্বনিযুক্তরাও। তবে তার জন্য নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র থাকতে হবে তাঁদের হাতে।
ঝণ শোধের সময়সীমা
আপনি চাকরিজীবী হলে, অবসর নেওয়ার আগেই তা শোধ করতে হবে। সেই বুঝেই ঝণের মেয়াদ অনুমোদন করবে ব্যাঙ্ক। কিন্তু পেনশনের সুবিধা থাকলে, অনেক ক্ষেত্রে ৭০ বছর পর্যন্ত শোধের সুযোগ মেলে। অবশ্য তার জন্য পেনশনের অঙ্ক ও সাংসারিক দায় যাচাই করবে সংস্থা। |
|
|
দামের পুরোটা ধার?
না। কখনওই পুরোটা ধার হিসেবে পাবেন না আপনি। ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সাধারণত দামের ৮০-৮৫ শতাংশ গৃহঝণ হিসেবে পাওয়া যায়। বাড়ির বেলায় জমির দাম বাদ দিয়ে তৈরির খরচের ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে একটু খোঁজ নিয়ে দেখলে কোনও কোনও সংস্থার কাছে দামের ৯০% পর্যন্ত ধার পেতে পারেন। পাওয়া যেতে পারে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের (নথিভুক্তি) খরচও।
মনে রাখবেন, ঝণ পেতে এই বাকি টাকাটা (মার্জিন মানি) জোগাড় করা কিন্তু অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দামের যে-অংশ আপনি ধার হিসেবে পাচ্ছেন না (১০-২০ শতাংশ), তা কিন্তু উপুড় করতে হচ্ছে ঝণ পাওয়ার আগেই। যেমন, ফ্ল্যাট কেনার বেলায় এই ‘মার্জিন মানি’ মিটিয়ে দেওয়ার রসিদ দাখিল করতে হবে ব্যাঙ্কের কাছে। আবার বাড়ির ক্ষেত্রে ঝণদাতা সংস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখবে যে, নির্মাণের কাজেই ওই টাকা খরচ হয়েছে কিনা। তবে আজকাল অবশ্য এ সব ক্ষেত্রে ছাড় দিচ্ছে অনেক ব্যাঙ্কই।
আগেই বলেছি, সাধারণত বাড়ি করার জন্য জমি কিনতে গৃহঝণ মেলে না। কিন্তু ব্যতিক্রম আছে। কিছু সংস্থা তা দেয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে জমি ও বাড়ির জন্য একই সঙ্গে ঝণের আবেদন করতে হয়। শুধুমাত্র জমি কিনতে গৃহঝণ দেয় না কোনও সংস্থাই।
তা ছাড়া, প্রত্যেক ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থারই গৃহঝণের একটা সর্বোচ্চ সীমা রয়েছে। সংস্থা ভেদে তা বদলায়। ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঝণ দেয়, এমন সংস্থাও এখন বাজারে হাজির।
শোধের ক্ষমতাই কিন্তু ধারের মাপকাঠি
ফি-মাসে কত টাকা আপনার পক্ষে শোধ করা সম্ভব, তা যাচাই করেই ঝণ অনুমোদন করে যে কোনও ব্যাঙ্ক। তাই আপনার ঝণ পাওয়ার সীমা নির্ভর করছে খাতায়-কলমে তা শোধ করার ক্ষমতার উপরেই।
কী ভাবে?
সুদে-আসলে মিলিয়ে যে টাকা শোধ করতে হয়, সমান অঙ্কের মাসিক কিস্তিতে (ইএমআই) তা দেন আপনি। অধিকাংশ ব্যাঙ্ক মনে করে, এক জন চাকরিজীবীর যা নিট আয় (কেটে-কুটে মাস পয়লায় যা হাতে আসে), খুব বেশি হলে তার অর্ধেক (৫০%) ইএমআই দিতে পারেন তিনি। কেউ কেউ অবশ্য তা ধরে ৬০% পর্যন্ত।
ব্যবসায়ী বা বিভিন্ন পেশায় স্বনিযুক্তদের ক্ষেত্রে অবশ্য ঝণ শোধের ক্ষমতা নির্ধারণের ভিত্তি তাঁদের আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র। সেই অনুসারে প্রথমে ৩ বছরের গড় আয় হিসাবের ভিত্তিতে ঠিক করা হয় ইএমআই দেওয়ার ক্ষমতা। তবে সব ক্ষেত্রেই কিন্তু ব্যাঙ্ক যাচাই করে দেখে, ইতিমধ্যেই অন্য কোনও ঝণের বোঝা আপনার ঘাড়ে চেপে রয়েছে কি না।
মেয়াদ বাছুন ভেবেচিন্তে
সর্বাধিক ৩০ বছরের জন্য গৃহঝণ দেয় ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু কোন মেয়াদ আপনার উপযুক্ত , সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা অন্তত দশ বার ভাবুন। কারণ এক দিকে, বেশি মেয়াদের ঝণ নিলে অনর্থক বেশি সুদ গুনতে হতে পারে। আবার খুব কম মেয়াদে কমে যেতে পারে ঝণের অঙ্ক।
বিষয়টা সহজ করে ভাবুন। ধরা যাক, ফ্ল্যাট কিনবেন বলে ব্যাঙ্কের কাছে তার দামের ৮৫ শতাংশ ১০ বছরের জন্য ধার চাইলেন আপনি। ব্যাঙ্ক প্রথমেই দেখবে মাসিক নিট আয়ের ভিত্তিতে আপনার ইএমআই দেওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা কত। হয়তো দেখা গেল, তাদের হিসেব মাফিক যতটা ইএমআইয়ের দায় আপনি নিতে পারছেন, তাতে ১০ বছরে ঝণের টাকা শোধ করা সম্ভব নয়। তখন কিন্তু ধারের টাকা কমবে। তাই তা বাড়াতে, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর মেয়াদের কথা ভেবে দেখতে পারেন। অবশ্য কেমন মেয়াদ বাছতে পারবেন, তা অনেকখানি নির্ভর করছে আপনার বয়সের উপরেও।
না কুলোলে উপায়?
ব্যাঙ্ক যত টাকা ধার দিতে তৈরি, তাতে হয়তো পছন্দের ফ্ল্যাট নাগালে আসছে না। ঝণ দরকার আর একটু বেশি। কী কী করতে পারেন সে ক্ষেত্রে?
• সম্ভব হলে মেয়াদ বাড়ান
•
‘কো-বরোয়ার’ বাছুন।
যৌথ ভাবে ঝণ নিন তাঁর সঙ্গে। দু’জনের আয় জুড়ে গেলে ঝণের অঙ্কও বাড়বে
কো-বরোয়ার হতে পারেন কাঁরা?
ছেলে বা মেয়ে ঝণের আবেদন করলে, বাবা-মাকে কো-বরোয়ার বাছতে পারে। একই ভাবে ধারের জন্য ব্যাঙ্কের দরজায় কড়া নাড়তে ছেলে বা মেয়েকে সঙ্গে নিতে পারেন বাবা-মা। কো-বরোয়ার হতে পারেন স্বামী-স্ত্রীও। তবে সে ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট বা বাড়ির মালিক হতে হবে অন্তত এক জনকে।
|
ব্যাঙ্ককে দেখানোর কাগজ তৈরি তো? |
|
বাড়ির জন্য ধার দিতে ব্যাঙ্ক আপনার মোবাইলে বার বার হানা দেয় ঠিকই। কিন্তু তারা তো আর মুখের কথায় ধার দেবে না। বরং বুঝে নেবে একগুচ্ছ কাগজপত্র। দেখতে চাইবে, আপনার কাছে টাকা ফেরত পেতে কোনও সমস্যা হতে পারে কি না। তাই দেরি করে লাভ কী? জরুরি কাগজপত্রের ফাইল আজই গুছিয়ে ফেলুন। |
আপনার আয় মাস মাইনে হলে, রাখুন |
• তিন মাসের বেতনের স্লিপ (পে-স্লিপ)
• তিন বছরের ফর্ম-১৬
• ছ’মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
• অন্যান্য লগ্নির (যেমন, দীর্ঘ মেয়াদি জীবন বিমা প্রকল্প) নথি
•
পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড
•
বিদ্যুৎ বা টেলিফোন বিল ব্যবসায়ী বা স্বনিযুক্ত হলে ফাইলে রাখুন |
ব্যবসায়ী বা স্বনিযুক্ত হলে ফাইলে রাখুন |
• তিন বছরের আয়কর রিটার্ন
• ব্যবসার লাভ-ক্ষতির হিসেব
• ছ’মাসের সেভিংস অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট
• কারেন্ট অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট (প্রয়োজনে)
• অন্যান্য লগ্নির নথি
• পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড
• বিদ্যুৎ বা টেলিফোন বিল |
|
এ তো গেল আপনার পরিচিতি আর আয় সংক্রান্ত কাগজপত্তর। যা দেখে ঝণ দিতে নিশ্চিন্ত বোধ করবে ব্যাঙ্ক। কিন্তু তালিকা এখানেই শেষ নয়। এর সঙ্গে জমা দিতে হবে যে-সম্পত্তি (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) আপনি কিনছেন, তার নথিও। |
ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে জরুরি কাগজের তালিকা মোটামুটি এ রকম |
• কেনার বিষয়ে ডেভেলপার বা প্রোমোটারের সঙ্গে আপনার চুক্তিপত্র
• ডেভেলপার ও জমির মালিক আলাদা হলে, তাঁদের মধ্যে নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি
• পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি
• জমির দলিল
• গত ১৫ বছরে ওই জমি হস্তান্তরের নথি
• ফ্ল্যাটের চৌহদ্দির বিবরণ-সহ অনুমোদিত নক্শা
• ঝণের জন্য ডেভেলপারের কাছ থেকে ‘নো-অবজেকশন’ সার্টিফিকেট |
নিজে জমি কিনে বাড়ি করতে হলে, সঙ্গে রাখুন |
• জমির দলিল
• বাড়ির অনুমোদিত নক্শা
• জমির কর মেটানোর নথি
•
বাড়ি তৈরির আনুমানিক খরচ (এস্টিমেট) |
|
|
|
|
|
|