ফের শিরোনামে রায়গঞ্জের সূর্যোদয় হোম। এবার ঢিলেঢালা নজরদারির সুযোগে হোমের ছাদ থেকে গাছ বেয়ে নেমে পাঁচিল টপকে পালিয়েছে দুই কিশোরী। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে পালানোর পরে কর্তৃপক্ষ হইচই করলে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই এলাকার বাসিন্দাদের তৎপরতায় এক কিশোরীর হদিস মেলে। অন্যজনকে মঙ্গলবার প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। বাসিন্দারা কিশোরীকে রাতে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখে আগলে রেখে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন। ক’দিন আগে একই হস্টেলে বিভিন্ন হোটেল থেকে উদ্ধার শিশু শ্রমিকদের হোমের মূক ও বধির কিশোরদের সঙ্গে রাখায় হইচই হয়। শিশু শ্রমিকদের নানা অত্যাচারে মূক-বধিররা জেরবার বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পরে হোমে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সে যাত্রায় শিশু শ্রমিকদের বাড়িতে ফিরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন কর্তৃপক্ষ। তার পরে দুই কিশোরী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ফের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। হোম অধ্যক্ষ পার্থসারথি দাস বলেন, “নিরাপত্তায় গাফিলতি নেই। জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের কাছে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ও মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোর কিশোরী সহ শিশু শ্রমিকদের আলাদা হোমে রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আর্জি জানানো হচ্ছে।” হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারাধীন ওই দুই কিশোরীর নাম নূর নেসা (১৩) ও শাহিন খাতুন (১৬)। বাংলাদেশের দিনাজপুর এলাকার বাসিন্দা নূর গত এপ্রিল মাসে বিন্দোল এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ভুল করে এদেশে ঢুকে পড়লে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আদালতের নির্দেশে তার ঠাঁই হয় সূর্যোদয় হোমে! হাওড়ার ডোমজুড় এলাকার বাসিন্দা শাহিন প্রায় একমাস আগে রায়গঞ্জের এক যুবককে পালিয়ে বিয়ে করে। পরিবারের লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অপহরণের অভিযোগে ওই যুবককে গ্রেফতার করে। শাহিনকে উদ্ধার করে আদালতের নির্দেশে হোমে পাঠায়। সোমবার রাত ১১টা নাগাদ হস্টেলের ২২ জন মূক ও বধির কিশোরী, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ৫ জন কিশোরী ও তিন মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরী রাতের খাবার খাচ্ছিল। কেউ টিভি দেখছিল। সেই সুযোগে নূর ও শাহিন হস্টেলের কর্মী সুমিত্রা সরকারের ব্যাগ থেকে চাবি চুরি করে দোতলার ছাদে ওঠার দরজার তালা খুলে আমগাছ বেয়ে নামে। ১০ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে পালায় যায়। নূরের বক্তব্য, “ মূক ও বধিরদের সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করে না। কারণ ওরা কথা বলতে পারে না। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে। তাই পালিয়েছিলাম।” ওই হোমে ২২ জন মূক ও বধির কিশোরী, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ৭ জন কিশোরী। তিন জন মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরী ছাড়াও পৃথক হস্টেলে ৩৯ জন মূক ও বধির কিশোর ও তিন শিশু শ্রমিক রয়েছে। কিশোরীদের দেখাশোনার জন্য একজন মেট্রন, তিন জন সহকারী, হোমের নিরাপত্তার জন্য চার জন নিরাপত্তা রক্ষী সহ মোট ২৬ জন কর্মী-আধিকারিক রয়েছেন। এতসত্ত্বেও ওই দুই কিশোরী কী ভাবে পালাল? উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “দুই কিশোরী পালানোর ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসন যৌথ ভাবে তদন্ত শুরু করেছে।” |