পরিযায়ী ভোটারের দিকে তাকিয়ে জঙ্গিপুর
ওঁরা নেই, সংখ্যায় প্রায় দু-লক্ষ।
জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনের প্রাক্কালে কপালে ভাঁজ ফেলেছে রাজনৈতিক দলগুলির।
স্থানীয় ভোটারদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। রাজমিস্ত্রি, দিনমজুর, হকার--বিভিন্ন পেশার এই সব মানুষেরা রুজির টানে গত ঈদের পর থেকেই জঙ্গিপুরের বাইরে। তাঁরা কেউ ফিরবেন অক্টোবরের শেষে কুরবানীতে। কেউ বা দুর্গাপুজোয়। এই দুই বড় উৎসবের ঠিক দিন পনেরো আগেই ১০ অক্টোবর জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই উৎসবের আগে রুজি, রোজগার ছেড়ে স্রেফ ভোট দেওয়ার তাগিদে যে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন না সে ব্যাপারে একরকম, নিশ্চিত রাজনৈতিক নেতারা। আর সেই কারণেই চিন্তার ভাঁজ।
যে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র তার ৫টিই লালগোলা, খড়গ্রাম, সুতি, রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুর কংগ্রেসের দখলে। একটি করে আসন রয়েছে সিপিএম ও তৃণমূলের দখলে। সাগরদিঘিতে রয়েছে তৃণমূল ও নবগ্রামে রয়েছে সিপিএম। এই উপনির্বাচনে তৃণমূল কোনও প্রার্থী না দেওয়ায় তাদের ভোটের একাংশ কংগ্রেসের ঝুলিতে যাওয়ার কথা।
জঙ্গিপুর লোকসভা আসনটি ১৯৭৭ থেকে কার্যত সিপিএমের দখলে। ১৯৯৬ সালে এক বার কংগ্রেস মাত্র ২ হাজার ভোটে জয়ী হলেও ২০০৪ পর্যন্ত তা ছিল সিপিএমের দখলে। ওই বছর প্রণব মুখোপাধ্যায় কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে আসনটি জেতেন। ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি তৎকালীন সিপিএম প্রার্থী আবুল হাসনাৎ খানকে। ২০০৯ সালেও প্রণববাবু সিপিএমের বর্তমান জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যকে প্রায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার ভোটের ব্যবদানে হারান। গত লোকসভায় জঙ্গিপুরে ভোট পড়েছিল ৯ লক্ষ ৩৪ হাজার। অর্থাৎ ৮৬.০৭ শতাংশ। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮৫.৭৭ শতাংশ। এবারে জঙ্গিপুর লোকসভায় ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার।
জঙ্গিপুরে ক্রমশ বাড়ছে প্রচারের তেজ। —নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের হিসেবমতো এর মধ্যে অন্তত ১ লক্ষ ৮০ হাজার ভোটার রুজির টানে বাইরে রয়েছেন। কংগ্রেসের হিসেবে সংখ্যাটা ২ লক্ষ। এইসব বাইরে থাকা ভোটারদের ৮০ শতাংশ তাদের সমর্থক বলে দাবি মহকুমা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, “বাইরে থাকা ভোটারদের নিয়ে সমস্যা তো রয়েছেই। আমরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা করে বাইরে থাকা ভোটারদের আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের একদিনের জন্য হলেও জঙ্গিপুরে নিজের এলাকায় এনে ভোট দেওয়ানোর চেষ্টা চলছে।” তাঁর মতে, এবার উপনির্বাচন বলে এমনিতেই ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে না। সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোটারদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিজেপি একটা হাওয়া তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই চেষ্টা সত্ত্বেও বিজেপির ভোট ২০ থেকে ৩০ হাজার ছাড়াবে না। তাই কংগ্রেস প্রার্থীর জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।”
সুতির বিধায়ক কংগ্রেসের ইমানি বিশ্বাসের মতে, “বাইরের ভোটারদের না আনতে পারলে জয়ের ব্যবধান কমবে। তাছাড়া সুতিতে পুর্নবাসন নিয়ে জমি আন্দোলন কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। বিজেপি তা কাজে লাগাতে চাইছে। তবে বিজেপি সেভাবে কাজে লাগাতে পারবে না বিজেপি। তাই কংগ্রেসের জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।” সিপিএম অবশ্য বিজেপিকে হেলায় উড়িয়ে দিতে রাজি নয়। দলের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “বাইরে থাকা ভোটাররা এই উপনির্বাচনে একটা বড় ফ্যাক্টর। পুজো ও ঈদের জন্য রুজি রোজগার বন্ধ রেখে ভোটের সময় তাঁদের এলাকায় আনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। প্রায় ১ লক্ষ হাজার ভোটার বাইরে রয়েছেন। এর মধ্যে ডান-বাম সব দলেরই সমর্থক রয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁদের কর্মস্থল থেকে আনানোর একটা খরচও রয়েছে। দলের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব নয়। আবার পেটের তাগিদে বাইরে যাওয়া মানুষদের সে আর্থিক সামর্থ্যও নেই। তাই এবার ভোটে ৬০ শতাংশের বেশি পোলিং হবে না।” অনুপস্থিতি ভোটার ও বিজেপির উত্থানে সিপিএমের যে ক্ষতি হবে তা স্বীকার করলেও মৃগাঙ্কবাবুর কথা, “এ বারে জঙ্গিপুর আসনটি আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারব। এবং তার জন্য কর্মীরা একটাই মন্ত্র মেনে চলছেন ‘বাড়ি বাড়ি যাওয়া, বারে বারে যাওয়া’। এতে ফলও হচ্ছে।” সিপিএম প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট সোমনাথ সিংহ রায়ের মতে, “জঙ্গিপুরের ৭টি বিধানসভা এলাকা থেকেই ভোটাররা বাইরে গিয়েছেন রুজির টানে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ভোটের দিনে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে বিজেপির ভোট কিছুটা বাড়বে। বাড়বে সংখ্যালঘু কিছু কট্টর মৌলবাদীদের ভোটও। তাতে সিপিএমের কোনও ক্ষতি হবে না।”
কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য ইতিমধ্যেই ৭টি বিধানসভা এলাকাই ঘুরে ফেলেছেন। সর্বত্রই ভালো সাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করে জয় নিয়ে তিনি নিশ্চিত। আর সিপিএম প্রার্থী মোজাফ্ফর হোসেনের কথা, “প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজের ভারে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বামেদের কাছ থেকে। এবারে সে সংশয় নেই। তাই জয় নিয়ে দল এবারে যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী।”
কি বলছেন বিজেপি নেতারা? এবারে লোকসভা উপনির্বাচনে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে সুতি। সেখানে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরি নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ তাদের অধিগৃহীত জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। এই আন্দোলন ইতিমধ্যে সংঘর্ষের রুপও নিয়েছে। ৬ জন বিজেপি কর্মকর্তা ২ মাস ধরে জেলবন্দি। ঘুরে গিয়েছেন রাহুল সিংহ, উমা ভারতীরা। বিজেপি প্রার্থী সুধাংশ বিশ্বাসের নির্বাচনী এজেন্ট রাম চৌধুরীর মতে, “বিজেপি সুতি ও জঙ্গিপুর থেকেই লক্ষাধিক ভোট পাবে। অন্য ৫টি বিধানসভা ক্ষেত্রের প্রাপ্ত ভোট মিলিয়ে জঙ্গিপুর লোকসভায় ভাল লড়াই দেবে এবারে বিজেপিও।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.