|
|
|
|
মাওবাদী হামলা নয়: শুভেন্দু |
সিআরপি-র মাওবাদী তত্ত্ব নিয়ে ধন্দ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও গোয়ালতোড় |
কোথায় যেন মিলছে না অঙ্কটা!
সিআরপি-র দাবি, রবিবার রাতে তাদের দুই জওয়ান নিহত হয়েছেন মাওবাদীদের গুলিতে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এমনটা হলে ঘটনাস্থল, পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের মেটালা জঙ্গল শুধু নয়, গোটা জেলা জুড়েই শুরু হবে যৌথ বাহিনীর চিরুনি-তল্লাশি। যা টানা চলবে অন্তত ৭২ ঘণ্টা। রাস্তায়-রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চলবে। যে জেলার ঘটনা, সেখানকার এবং রাজ্যের মাওবাদী অধ্যুষিত অন্য দুই জেলাবাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার সব ক’টি থানা এবং যৌথ বাহিনীর শিবিরকে সতর্ক করে মহাকরণের ডিজি-র দফতর থেকে পাঠানো হবে জরুরি বার্তা। দফায়-দফায় বৈঠকে বসবেন রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তারা। রাজ্য পুলিশের কোনও কর্তা কলকাতা থেকে ঘটনাস্থলে, নিদেনপক্ষে সেই জেলা সদরে যাবেন। ঘটনাস্থলে পাঠানো হবে সিআইডি এবং আইবি-র অনুসন্ধানকারী দল।
কিন্তু কোথায় কী? মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। তবে দুই জওয়ানের মৃত্যুতে আপাতদৃষ্টিতে কিন্তু তাল কাটেনি মেটালা জঙ্গলে সিআরপি-র সেই প্রশিক্ষণ শিবিরের। সিআরপি-র ৬৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমাডান্ট আর কে বেহেরা বলেন, “মঙ্গলবার নির্দিষ্ট দিনেই শেষ হয়েছে ওই শিবির।”
সিআরপি-র দাবি অনুযায়ী, রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ মেটালা জঙ্গলে একটি প্রশিক্ষণ শিবির চলাকালীন আচমকা মাওবাদী হামলায় দুই সিআরপি জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মাওবাদী তত্ত্বকে ঘিরে সন্দেহ চেপে রাখেননি অনেকেই। মঙ্গলবার যুব-তৃণমূলের এক ফুটবল প্রতিযোগিতা উপলক্ষে মেদিনীপুরে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “দুই জওয়ানের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এটা মাওবাদী হামলা নয়। ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁরাই জানিয়েছেন, রীতিমতো ঘাঁটি গেড়ে এমন ‘অপারেশন’ চালানোর মতো অবস্থা ওই এলাকায় মাওবাদীদের নেই।” তা হলে কারা রয়েছে ওই ঘটনার পিছনে? তৃণমূল সাংসদের সংযোজন, “পুলিশ ও সিআরপি তদন্ত করছে। নিশ্চয়ই সত্য সামনে আসবে।”
কিন্তু ঠিক কী যে হতে চলেছে তা পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর মন্তব্যে স্পষ্ট হয়নি। তিনি শুধু বলেছেন, “তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু বলব না।” তবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসার বলেন, “এ রকম ঘটনা ঘটলে তো প্রচণ্ড দৌড়ঝাঁপ শুরু হওয়ার কথা। আমাদের সকলের ব্যস্ততার সীমা থাকবে না। মেটালার জঙ্গলের কাছেই বাঁকুড়ার সারেঙ্গা। তাই, বাঁকুড়ার ওই দিকেও জোরালো অভিযান শুরু হবে। কিন্তু কোথাও তো কিছু নেই। সব কিছুই নিস্তরঙ্গ।”
রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের (আইবি) এক কর্তার কথায়, “জঙ্গলে যখন এক দল সশস্ত্র সিআরপি জওয়ান রয়েছেন, সেই সময়ে তাঁদের চেয়ে সংখ্যায় অর্ধেকেরও কম এক দল মাওবাদী গিয়ে দুম করে তাদের আক্রমণ করে ৪০ রাউন্ড গুলি চালিয়ে দু’জনকে মেরে ফেললএমন সাহস ও ক্ষমতা মাওবাদীদের এখন আদৌ আছে কি না, সন্দেহ। বড়জোর তারা নিজেদের যথাসম্ভব লুকিয়ে রেখে একটি-দু’টি ল্যান্ডমাইন কিংবা আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস)-র বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। গেরিলা যুদ্ধে শত্রু যেখানে সংখ্যায় ও শক্তিতে বেশি, সেখানে কখনও তাদের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে যাওয়া উচিত নয়। রাতের অন্ধকারে জঙ্গলেও নয়। সেই জায়গায় মাওবাদীরা কি ওই ঝুঁকি নেবে?”
পুলিশ সূত্রের খবর, সিআরপি-র অফিসারেরা সোমবার সকালে জেলার পুলিশ-কর্তাদের জানান, মাওবাদী নেতা বিকাশের স্কোয়াড ওই হামলা চালিয়েছে। কিন্তু জেলা পুলিশের কর্তাদের পাল্টা বক্তব্য ছিল, তাঁদের কাছে যা খবর, তাতে বিকাশ এখন মেটালা থেকে সম্পূর্ণ উল্টো দিকে, অন্তত ৩০ কিলোমিটার দূরে অন্য জায়গায় রয়েছেন।
লালগড় থানায় একদা কর্মরত এক অফিসার বলেন, “জঙ্গলে অভিযানে গিয়ে সিআরপি জওয়ানেরা নিজেদেরই অন্য একটি দলের গুলির মুখে পড়েছে, এ রকম ঘটনা গত বছর একাধিক বার ঘটেছে। এমন অভিজ্ঞতার পরে আমি ওঁদের সঙ্গে অভিযানে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তার পর থেকে আমি থানার আলাদা দল নিয়ে যেতাম।”
|
|
|
|
|
|