সম্পাদকীয় ১...
বামাবস্থা
রিবর্তন? পরিবর্তনের প-ও বাঙালির দিক্চক্রবালে নাই। যাহা রহিয়াছে, তাহার নাম স্থিতাবস্থা। এবং যেহেতু সেই স্থিতির বিধিটি বাম ইহাকে বামাবস্থাও বলা চলিতে পারে। অক্টোবরের প্রথম দিবসটি যেন নাটকীয় ভাবে একাধারে দিল্লি ও কলকাতার যুগ্ম মঞ্চে বাঙালির সেই বামাবস্থাকেই চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া গেল। বুঝাইয়া দিল, রাজনীতির দল-মত বিবাদ-বিভেদ সবই মায়া: প্রকৃতপক্ষে সকল বাঙালি, এবং বাঙালির সকল নেতাই অভ্রান্ত ভাবে বামাবস্থার পদানত। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সি পি আই এম নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, এই দুইয়ের মধ্যে আসলে দূরত্ব নেহাতই স্বল্প, বরং নৈকট্য-প্রসূত প্রতিযোগিতাই বেশি। কে কাহার অপেক্ষা অধিক বাম, তাহারই প্রতিযোগিতা। খুচরা-ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার দিল্লিতে যখন ঝড় তুলিতেছেন, বাঙালির নেতি-রাজনীতির শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হিসাবে রাজধানীতে নিজের পদচিহ্ন আঁকিয়া দিতেছেন ঠিক সেই দিনই কলিকাতায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিমান বসুরা চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী শহরকে মিছিলরুদ্ধ করিয়া, নববামবোধে পুনরুজ্জীবিত হইয়া, পঞ্চায়েত ভোটের যুদ্ধে নামিয়াছেন, কৃষি শিল্প জমি-নীতি সর্ব বিষয়ে বামদীপ্তি জাগাইয়া তুলিতেছেন। তাঁহারাই তো যুগ-পরীক্ষিত, মুখ্যমন্ত্রী তো ‘ভুয়া-বামপন্থী’ দাবি করিয়াছেন। পাশাপাশি, প্রদেশ কংগ্রেসও এই সর্বগ্রাসী বামাবস্থার কবলগত। কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অভিযোগ-বাণ ছুড়িয়াছেন: ‘মেকি-বামপন্থী’। অর্থাৎ সাচ্চা বামপন্থী কে বা কাহারা, রুদ্ধশ্বাস প্রতিযোগী বাঙালি নেতাদের একমাত্র সংকট তাহাই: কংগ্রেস-তৃণমূল-কমিউনিস্ট পার্টি, এ সব কিছুই বাহ্যিক, আপতিক, নিরর্থক। পশ্চিমবঙ্গ একটি বামদশাগ্রস্ত পশ্চাৎমুখী রাজ্য। দলমতনির্বিশেষে পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্ব সে কথাই প্রমাণ করে।
স্বভাবতই, বামাবস্থার এ হেন সর্বব্যাপিতায় সমস্যাও কিছু কম নহে। যেমন, দীপা দাশমুন্সি যখন মুখ্যমন্ত্রীকে মেকি-বাম বলেন, ধরিয়া লওয়া যায় যে তিনি আসলে বলিতে চাহেন, সত্যকারের বাম হইলে তবেই-না এফ ডি আই বিরোধিতার সঙ্গত যুক্তি আছে। যে নেত্রীর মুখে এফ ডি আই-এর পক্ষে যুক্তির কথা শোনাই প্রত্যাশিত, তাঁহার নিকট হইতে এমন মন্তব্য উল্লেখযোগ্য বই কী। আবার, সি পি আই এম নেতা যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভুয়া-বাম বলিয়া গাল দেন, খেয়াল না করিয়া উপায় থাকে না যে তাঁহারাও ঈষৎ সংকটাপন্ন: এফ ডি আই-বিরোধিতায় কী পদ্ধতিতে নিজেদের বিদ্রোহ-স্বাক্ষর প্রতিষ্ঠা করিবেন, তাহা ভাবিয়া। সেই কারণেই, সোমবারের রক্তপতাকা-দৃপ্ত মিছিলের মুখে কিন্তু এফ ডি আই স্থান পাইল না। মুখ্যমন্ত্রী যে আগেভাগেই তাঁহাদের প্রিয় বিষয়টি হাইজ্যাক করিয়া ফেলিয়াছেন!
কেবল এই বিশেষ বিষয়টি নহে, মুখ্যমন্ত্রী গত বাম জমানার সমগ্র রাজনীতিটিই বেমালুম ‘হাইজ্যাক’ করিয়া ফেলিয়াছেন। মুখে পরিবর্তন বলিলেও অপরিবর্তনের ধারায় নিজেকে আগাগোড়া স্নাত করিয়াছেন। রং পাল্টাইয়াছেন, ঢং পাল্টাইয়াছেন, কিন্তু রাজনীতি-ক্ষেত্রে নিতান্ত অনুগত উত্তরাধিকারীর মতোই রাজ্যপাট চালাইতেছেন। উন্নয়ন, বিনিয়োগ, মূলধনবৃদ্ধি, ইত্যাদি বিষয়ে সেই একই শুচিবায়ুগ্রস্ততা লইয়া স্থিতাবস্থার পথে হাঁটিতেছেন। শাস্ত্রমতে তো শত্রুরূপে ভজনাও সিদ্ধ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিন্ন মার্গ ধরিয়া বাম-ভজনা করিতেছেন। তবে কি না, তাঁহার বা তাঁহাদের দোষ নাই। মানুষ যেমন হয়, তেমন নেতাই তো তাহারা নির্মাণ করিয়া লয়। বাঙালির এই অপরিবর্তনের উৎস বাঙালির মধ্যেই। বন্যেরা বনে সুন্দর, বাঙালি বামবাদে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.