মৃতদেহ সৎকার করে মিনিট্রাকে ফিরছিলেন শ্মশানযাত্রীরা। বোঝেননি, পথেই অপেক্ষা করছে মৃত্যু।
সেচখালের সেতু ভেঙে ট্রাকটা যখন প্রায় বিশ ফুট নীচে দোকানের উপরে আছড়ে পড়ে, তাতে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী ছিলেন। সকলেরই বাড়ি হুগলির পোলবায়। ঘটনাস্থলেই সাত জনের মৃত্যু হয়। পরে বর্ধমান ও কলকাতার হাসপাতালে আরও তিন জন মারা গিয়েছেন। গুরুতর আহত ৩৪ জন।
বছর চারেক আগে বর্ধমানের জামালপুরে ওই চৌবেড়িয়া সেচখালের সেতু থেকেই গাড়ি নীচে পড়ে এক পরিবারের দশ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সোমবার রাতের ঘটনা কার্যত তার চেয়েও ভয়াবহ। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন কেষ্ট সোরেন (৪০), মিহিলাল হেমব্রম (২৪), আব্দুল সোরেন (২৫), দুখু মান্ডি (২৫), ভিলু মান্ডি (৪৫), বুধন মুর্মু (৩০), বাপি হেমব্রম (২৭), বাদল হেমব্রম (৫০), অনন্ত মুর্মু (৩৫) ও অমর মুর্মু (১৭)। ১১ জন আহতকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানেই অমর মুর্মুর মৃত্যু হয়। |
স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ পোলবার সারাংপুর গ্রামের বৃদ্ধ বাণেশ্বর মুর্মুর মৃতদেহ নিয়ে জামালপুরের তেলকুপি শ্মশানের দিকে রওনা দিয়েছিলেন আত্মীয়-প্রতিবেশী মিলিয়ে অন্তত ৯০ জন। বর্ধমান মেডিক্যালে শুয়ে আহত সনাতন সোরেন বলেন, “দাহকাজ শেষ করে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আমরা শ্মশান থেকে বেরোই। আমরা চৌবেড়িয়া সেতুর পথ ধরি। আর একটা ট্রাক অন্য রাস্তা ধরেছিল।” মিনিট পনেরো বাদেই ঘটে দুর্ঘটনা। আর এক আহত রবিলাল সোরেনের অভিযোগ, “চালককে বারবার বলেছিলাম আস্তে গাড়ি চালাতে। কিন্তু তিনি তাতে কান না দিয়ে প্রচণ্ড জোরে চালাতে থাকেন। হঠাৎ ট্রাকটা রাস্তা ছেড়ে ডিগবাজি খেয়ে নীচে গিয়ে পড়ে।”
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর নীচে বাজারের একটি দোকান দুমড়ে গিয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রক্তমাখা জুতো। গাছের ডালে আটকে ছেঁড়া জামাকাপড়। প্রত্যক্ষদর্শী সোম মান্ডি, সুখলাল কিস্কুদের কথায়, “প্রচণ্ড শব্দ পেয়ে ছুটে এসে দেখি, লোকজন সমেত একটা ট্রাক কাত হয়ে পড়ে। লোকজন আর্তনাদ করছে। অনেকে নীচে চাপা পড়েছেন।” এলাকার লোকজনই উদ্ধারে নামেন। পরে পুলিশ ক্রেন এনে গভীর রাতে ট্রাকটি সরায়। তার নীচেই সাতটি মৃতদেহ মেলে। চালক পালিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। |