চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠল কালনা শহরের সাহু সরকার মোড়ের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলে কালনা থানা ও মহকুমাশাসকের কাছে ওই নার্সিংহোম ও এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের হয়। নার্সিংহোমের তরফে অবশ্য গাফিলতির অভিযোগ মানা হয়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে প্রসববেদনা নিয়ে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হন শহরের অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষিকা স্নিগ্ধা সাহা। বিকেল ৩টে নাগাদ নার্সিংহোম থেকে তাঁকে কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ঘণ্টাখানেক পরে সেখানেই মৃত্যু হয় স্নিগ্ধাদেবীর। তাঁর স্বামী, ওই স্কুলেরই শিক্ষক দেবাশিস সাহা পুলিশ ও মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেন, রবিবার সকালেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন স্নিগ্ধাদেবী। প্রসবের ৬-৭ ঘণ্টা পরে চিকিৎসক তাপসরঞ্জন ঘোষ জানান, কয়েক বোতল রক্তের প্রয়োজন রয়েছে। ওই চিকিৎসকের নির্দেশেই স্নিগ্ধাদেবীকে কালনা হাসপাতালে পাঠান নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। দেবাশিসবাবু অভিযোগ করেন, যাওয়ার আগে তাঁর স্ত্রী যখন শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তখন স্যালাইন ও অক্সিজেনের নল খুলে নেন নার্সিংহোমের লোকজন। সেই অবস্থাতেই স্নিগ্ধাদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। বিকেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দেবাশিসবাবুর আরও অভিযোগ, সদ্যোজাতকেও রাখতে অস্বীকার করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে তাকেও হাসপাতালে পাঠাতে হয়। ওই শিক্ষকের দাবি, “বেলা ১১টা নাগাদও চিকিৎসক ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, স্ত্রী ও শিশু সুস্থ রয়েছে। তার আড়াই ঘণ্টা পরে হঠাৎ জানানো হয়, স্ত্রীকে বাঁচাতে প্রচুর রক্ত প্রয়োজন।” অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিন্ময় সাহার বক্তব্য, “ঘটনার তদন্ত হোক।”
অভিযুক্ত চিকিৎসক তাপসরঞ্জনবাবু বলেন, “আচমকা প্রসূতির রক্তচাপ কমতে শুরু করে। প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। নার্সিংহোমে রক্ত মেলেনি। রক্ত জোগাড়ের চেষ্টা করেও না মেলায় তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।” চিকিৎসকের দাবি, শহরের কোনও নার্সিংহোমেই রক্ত এনে রাখার পরিকাঠামো নেই। প্রয়োজনে জোগাড় করা হয়। নার্সিংহোমের তরফে জানানো হয়, স্নিগ্ধাদেবীকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। স্যালাইন ও অক্সিজেনের নল খুলে নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য, সেই সময়ে ওই প্রসূতির সে সব প্রয়োজন ছিল না। কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, “অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” |