নজরে পঞ্চায়েত ভোট, রাজ্যে ফিরল সিপিএম
ক্ষণাত্মক খোলস ছেড়ে আক্রণাত্মক হল সিপিএম। সোমবার রানি রাসমণি রোডের সমাবেশ থেকে সিপিএম জানিয়ে দিল যখনই পঞ্চায়েত ভোট হোক, তারা প্রস্তুত।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিলেন, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য এখন থেকেই সংগঠিত হতে হবে। তাঁর কথায়, “কোনও ভাবেই আমরা বিরোধীদের জমি ছাড়তে পারব না।” গত ১৬ মাস সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে কুঁকড়ে থাকা সিপিএমের এই ভূমিকা নতুন।
নতুন আর এক অর্থেও। অবশেষে স্বধর্মে ফিরল সিপিএম। গত ১ সেপ্টেম্বর এই শহরেই মিছিল করেছিল তারা। উদ্দেশ্য সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা। ২০ সেপ্টেম্বর ছিল তাদের বাংলা বন্ধ। লক্ষ্য মনমোহন সিংহের সরকারের নীতির বিরোধিতা। কিন্তু প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে অস্ত্র শানানোই যে তাদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত, সেটাই যেন এত দিন ভুলে ছিল সিপিএম। যা নতুন করে মনে পড়াল সোমবারের সমাবেশ। পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে তৃণমূলকে ঠেকানোর ডাক দিলেন সিপিএম নেতারা।
পুরনো পথে। কলকাতায় সোমবার।—নিজস্ব চিত্র
ঘটনা হল, পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাস প্রতিরোধ করে কত আসনে ঠিকমতো লড়তে পারবেন, তা নিয়ে সিপিএম নেতারা এখনও যথেষ্ট চিন্তিত। কিন্তু সেই চিন্তার বহিঃপ্রকাশ এ দিন তাঁদের কথায় ছিল না। বরং গ্রাম থেকে আসা কর্মীদের মনে সাহস জোগাতে সাহসী মুখ তুলে ধরতে তৎপর ছিলেন দলীয় নেতারা। এত দিন তাঁরা তৃণমূল সরকারের সক্রিয় বিরোধিতা করেননি, জানিয়ে সভার অন্যতম উদ্যোক্তা সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব বলেন, “সরকার নীতি না পাল্টালে গণ-প্রতিরোধ হবে। যদি তৃণমূল একতরফা ভাবে কলেজ নিবার্চন করে তা হলে বামপন্থী ছাত্ররা সোজা রেল লাইন বা রাস্তায় বসে পড়বে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এ ধরনের সক্রিয় প্রতিরোধ দেখানোর সাহস সিপিএম নেতারা দেখায়নি। বরং প্রতিবাদ সভা করে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। দলের একাংশ বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ভেঙে যাওয়ায় সিপিএম কর্মীরা বাড়তি মনোবল পেয়েছেন। গৌতমবাবু থেকে তড়িৎ তোপদার সকলেই এই মতের শরিক। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই বাড়তি সাহসকেই কাজে লাগাতে চান দলীয় নেতৃত্ব। তা করতে আপাতত তাঁদের দলের গোষ্ঠী রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়েছে। বক্তার তালিকায় সূর্যবাবুর নাম না থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধ-বিমানের নির্দেশে তাঁকে বক্তৃতা করতে ডাকা হয়। আবার রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়া অমিতাভ নন্দীও ছিলেন বক্তার তালিকায়। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দিতেও যান অমিতাভবাবু।
নামে উত্তর ২৪ পরগনার সিপিএমের সভা হলেও এ দিনের সমাবেশ কার্যত রাজ্য বামফ্রন্টের সভায় পরিণত হয়েছিল। সিপিএমের প্রথম সারির নেতাদের পাশাপাশি ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষ, সিপিআই-এর রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার এবং আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীও মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন। সভায় ৫০ জন শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাতে এক লক্ষ করে টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। বিমানবাবু জানান, মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে রাজ্যে ৭৯ জন বাম কর্মী খুন হয়েছেন।
খুন-জখম থেকে মহিলা নির্যাতন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যর্থতা থেকে কৃষকদের ফসলের দাম না পাওয়া তৃণমূল সরকারের এই সব ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করেই সিপিএম পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাবে। সভায় দলের নেতারা তা স্পষ্ট করে দেন। সিঙ্গুরের ব্যর্থতার কথা মেনে নিয়েও বুদ্ধবাবু জানিয়ে দেন, তাঁদের শিল্পায়ন নীতিই সঠিক ছিল। তৃণমূলের জমি নীতির সমালোচনা করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এদের জমি নীতির ফলে রাজ্যে একটিও নতুন কারখানা গড়ে ওঠেনি। বরং জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পও আটকে যাচ্ছে। উন্নয়নে এ রাজ্য পিছিয়ে যাচ্ছে।”
বুদ্ধবাবুর মতে, এই সরকারের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বাস্তব পরিস্থিতি স্বীকার না করে তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দেনার দায়ে ৫০ জন কৃষক আত্মহত্যা করলেও সরকারের মতে মাত্র এক জন আত্মহত্যা করেছেন। ডেঙ্গিতে ৫০ জন মারা গেলেও সরকার বলছে সাজানো অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বুদ্ধবাবুর মন্তব্য, “তৃণমূল সরকার আছে, তাই ডেঙ্গির মশা কামড়াতে পারে না?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.