প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সোমবার স্কুলে তালা দিল ছাত্রছাত্রীরা। ঘটনাটি পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি ব্লকের তালবেড়িয়ায়, পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়ের। তালা দেওয়ার পাশাপাশি সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কাছে গণস্বাক্ষরিত আবেদনপত্র দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিও তুলেছে পড়ুয়ারা।
সাঁতুড়ি ব্লক কার্যালয় চত্বরেই রয়েছে ওই আবাসিক স্কুল। এমনিতেই পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে স্কুলটিতে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, আগে স্কুলের তহবিলে তাদের জন্য বরাদ্দ অর্থ আসত। সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্কুল-তহবিলের পরিবর্তে ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়ুয়াপিছু বরাদ্দকৃত অর্থ জমা করা হবে। তার পর থেকেই হস্টেল বন্ধ করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। ফলে সমস্যায় পড়েছে বহু ছাত্রছাত্রী। দশম শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে জয়দেব সরেন, অসীম বাস্কে, গোবিন্দ মাহালি, সোমনাথ হাঁসদাদের অভিযোগ, “স্কুলের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৩০০। তার মধ্যে হস্টেলে থাকে প্রায় ১৫০ জন। অথচ প্রধান শিক্ষক এত দিন প্রায় আড়াইশো ছাত্রের খাবার খরচ দেখিয়ে অর্থ নয়ছয় করেছেন।”
এই ধরনের আবাসিক স্কুলের জন্য বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে প্রতি মাসে ছাত্রপিছু ৭৫০ টাকা দেয়। পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ, প্রশিক্ষণের জন্য প্রধান শিক্ষক তাদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু দু’মাস পরে প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ সেই টাকা এখনও ফেরত পায়নি ছাত্রছাত্রীরা।
এ দিন স্কুলে তালা দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘসময় ধরে বিক্ষোভও দেখায় ছাত্রছাত্রীরা। স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য কৃত্তিবাস মুর্মু, উত্তম ভক্তারা জানান, ছাত্রদের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে বরাদ্দকৃত অর্থ আসার প্রথা শুরু হওয়ার পরে পরেই প্রধান শিক্ষক হস্টেল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে অভিভাবকেরা হস্টেল পরিচালনা করতে গিয়ে আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরিচালন সমিতির কিছু সদস্যের কথায়, “স্কুলে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার পিছনে প্রধান শিক্ষক নিজের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না।”
ওই অভিযোগগুলির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্কুলে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা। পরে পঞ্চায়েত সমতির সভাপতির উপস্থিতিতে স্কুলের পরিচালন সমতির সম্পাদককে নিয়ে বৈঠকেও সমস্যা মেটেনি। পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা সিপিএমের সাঁতুড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক মনবোধ মুর্মু এ দিন বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা পরিচালন সমিতির কাছে অভিযোগ জানায়নি। তারা পঞ্চায়েত সমিতির কাছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে। এ বিষয়ে পরিচালন সমিতির বিশেষ কিছু করনীয় নেই।”
এ দিন বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। স্কুল সূত্রের খবর, তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তাঁর মোবাইলও বন্ধ ছিল। সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি লক্ষ্মণ সরেন বলেন, “অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য এ দিন প্রধান শিক্ষককে ফোন করেছিলাম। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা যায়নি। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে আমরা সমস্ত বিষয়টি অনগ্রসর শ্রেণি কল্যান দফতর ও জেলা শিক্ষা দফতরকে জানাব।” |