অটোরিকশার দৌরাত্ম্য ঠেকাতে রাজ্য সরকার সম্প্রতি ৪ জনের বেশি যাত্রীর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু সেই সরকারি ঘোষণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন মফস্সল এবং গ্রামীণ এলাকায় (কলকাতা এলাকা বাদে) অবাধে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটো। ঘটছে দুর্ঘটনা। রয়েছে বেআইনি অটোর দাপটও। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই।
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “পুলিশকে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই অটোরিকশা দেখলে ব্যবস্থা নিতে।” পুলিশ সুপার সুগত সেনের দাবি, নজরদারি শুরু হয়েছে।
|
কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তাঁরা দেখছেন, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবাধে চলছে অটো। প্রশাসনিক অনুমতি না থাকলেও নানা নতুন রুটে অটো নামছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বসিরহাট, বারাসত, ব্যারাকপুর, বনগাঁ সব মহকুমাতেই একই ছবি। এর সঙ্গে রয়েছে ডিজেল চালিত অটোর দাপট। যা পুরোপুরি বেআইনি ভাবে চলাচল করছে বলে জানিয়েছে পরিবহণ দফতরই। ওই সব অটোতে ১০ জনেরও বেশি যাত্রী তোলা হয়। অনেক সময়ে যাত্রীরা অটোর পিছনে দাঁড়িয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন।
এর সঙ্গে ইচ্ছামতো যাত্রীদের থেকে ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ উঠছে কোথাও কোথাও।
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় বৈধ অটোর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। গত এক বছরে বেআইনি অটোর সংখ্যা প্রায় দু’হাজার বেড়েছে (ডিজেল অটো বাদে)। ওই দফতরের দাবি, দুর্নীতি রুখতে এবং আইনি জটিলতার কারণে রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে জেলায় নতুন করে আর কোনও অটোর জন্য ‘পারমিট’ বা ‘অফার লেটার’ দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও নানা রুটে যে ভাবে অটোর সংখ্যা বেড়ে চলেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। এর পিছনে শাসক দলের নেতাদের একাংশের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। |
হাবরায় ছবি তুলেছেন শান্তনু হালদার। |
সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক নির্মল ঘোষ। তিনি বলেন, “সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে যাত্রী তোলা বা বেআইনি অটো রাস্তায় নামানো আমরা সমর্থন করিনি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাবরা থেকে গাইঘাটা, গোবরডাঙা, কচুয়া, ঝিকরা, কইপুকুর, কল্যাণগড় প্রভৃতি রুটে অটোর সংখ্যা বেড়েছে। যার অনেকগুলিই বেআইনি ভাবে চলছে বলে অভিযোগ। বসিরহাটেরও নতুন নতুন রুটে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে অটো চলছে।
কী বলছেন অটো-চালকেরা?
বনগাঁ-বাগদা রুটের অটো-চালকদের বক্তব্য, এই সব গ্রামীণ এলাকায় নানা রুটে বাস চলে না। তা ছাড়া বাসের সংখ্যাও কম থাকায় যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। সেই কারণে অটোতে ভিড় বেশি হয়। যাত্রীরা উঠতে চাইলে তাঁদের বারণ করা যায় না। হাবরার সিটু অনুমোদিত অটো ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ গণেশ সাহা বলেন, “অটোতে চালকের ডান দিকে যাত্রী তোলা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু বেশি যাত্রী না তুললে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব।”
ডিজেল-অটোর দাপাদাপি রুখতে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থা চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই সংস্থার রাজ্য সরকারের মনোনীত সদস্য গোপাল শেঠ। তিনি বলেন, “বাসের স্বার্থ বিঘ্নিত না করে এবং ওই অটোগুলিকে এলপিজি অটোতে পরিবর্তন করে কী ভাবে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে গ্রামীণ এলাকায় চালানো যায়, সে বিষয়ে তার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিবহণ মন্ত্রী এবং পরিবহণ সচিবের কাছে।” |