শারোদৎসবের আবেগই
ভরসা পুজোর বাজারে

পুজো আসতে বাকি আর তিনটি রবিবার।
কিন্তু পাইকারি থেকে খুচরো বিক্রেতা, সব ধরনের ব্যবসায়ীরাই এ বার বাজারের হাল দেখে কার্যত হতাশ। সকলেই মনে করছেন, পুজোর বাজার জমেনি। কিন্তু কেন? উত্তরে ব্যবসায়ীরা প্রধানত তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করছেন। এক, পাটের বাজার ভাল না। পাটের মতো অর্থকরী ফসল বাংলার ঘরে পুজোর সময়ে লক্ষ্মীর ঝাঁপি ভরিয়ে তোলে। এ বার সেই নগদ টাকার জোগান নেই। দুই, খাদ্যদ্রব্য সহ দৈনন্দিন সংসার চালানোর খরচ এত বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষ হিমসিম খাচ্ছেন। সেখানে পুজোর বাজারের বাড়তি খরচ করার মতো অবস্থা নেই। তিন, গ্যাস বা অন্য জ্বালানির খরচ বেড়ে যাওয়ার ধাক্কাও পড়ছে সংসারে। তার উপরে উৎসবের মরসুমের প্রতিবারই জিনিসপত্রের কিছুটা মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। তাই নগদ টাকা সকলেই হাতে রাখতে চাইছেন। এই সম্মিলিত প্রভাবেই উৎসবের মরসুম এ বারে অনেকটা জৌলুস কম।
কিন্তু সেই সঙ্গে এই কথাটাও ঘুরে ফিরে আসছে যে, এখন মাসের শেষ। সামনের মাসে মাইনে পাওয়ার পরে সোমবার থেকে বাজার কিন্তু অনেকটা তেজি হবে। বহু জায়গায় বোনাস বা পুজোর জন্য বাড়তি কিছু টাকা দেওয়া হয় কর্মীদের। সেই টাকাটা চাকুরিজীবীদের হাতে আসবে। তারপরে বাজার চড়বে। কিন্তু তাতে যে বিরাট কৃষিজীবী ক্রেতাদের জন্য বাজার চড়চড় করে বাড়ে, তাতে ধাক্কা খাবে।
উৎসবের মুখে। চলছে কেনাকেটা। ছবি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।
নবদ্বীপের বাজারের নাড়ি টিপে সে কথাটা বোঝা যায়। ভাগীরথীর দু’পাড়ের স্থানীয় বিরাট অংশের মানুষ এই বাজারের উপরেই নির্ভর করেন। বিশেষ করে এই বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রামীণ বাজার নবদ্বীপের উপরে নির্ভর করে থাকে। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “পাটুলি থেকে অগ্রদ্বীপ, ধাত্রীগ্রাম থেকে নাদনঘাট বা কৃষ্ণনগর রোড স্টেশন পর্যন্ত কমবেশি ৩০ কিলোমিটার বৃত্তাকার এলাকার মানুষ নবদ্বীপের বাজারের উপরে নির্ভর করেন। তাঁদের বেশিরভাগই কৃষিজীবী বা অন্য পেশার মানুষ। তাঁরা কিন্তু এখনও পুজোর বাজার করতে নামেননি।”
স্বভাবতই ভিড় জমেনি নবদ্বীপের বড়বাজারের কাপড়ের পট্টি, রাধা বাজারের অস্থায়ী স্টল বা তাঁত কাপড়ের হাটে। গ্রামীণ ক্রেতারা প্রধানত এ সব জায়গা থেকেই পুজোর কেনাকেটা করেন। উত্তমবাবুর কথায়, “পাট এখনও মাঠে দাঁড়িয়ে। পর্যাপ্ত জলের অভাবে পাট পচানো যাচ্ছে না। যেটুকু পাট পচানো হয়েছে, তার গুণগত মান খারাপ। তাই চাষি বাজারে আসছেন কম।” কিন্তু এ কথাও সত্যি যে, একই সঙ্গে একটু একটু করে হলেও পুজোর আয়োজন কিন্তু শুরু হয়েছে। বাবুলাল সাহা বলেন, “পুজো বছরে একবারই হয়। বাঙালির আবেগ তার সঙ্গে এতটাই জড়িত যে, সেই শুভ দিনে কিছু না কিছু সে নতুন কিনবেই। সেই জন্য তাঁরা মনে করছেন, দেরি করে হলেও পুজোর বাজার শেষ পর্যন্ত জমবে। তার প্রস্তুতি ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন।” তবে অস্থায়ী ভাবে যাঁরা এই সময়ে কাপড় জামার ব্যবসা করেন, তাঁরা দ্বিধায় রয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, বাজার শেষ মুহূর্তে জমলে আড়তদারের কছ থেকে তাঁরা ঠিক কি হারে জামা-কাপড় পাবেন, তার উপরেই নির্ভর করছে ব্যবসা। বাবুলালবাবু বলেন, “যেমন ধরুন, পাইকারেরা উৎসব এগিয়ে এলে দামে ছাড় দিতে শুরু করবেন। কারণ, তাঁদের ঘরে তখন জামা রেখে লাভ নেই। তাই লাভ কমিয়েই সেই জিনিসপত্র তাঁরা ছেড়ে দিতে চাইবেন।” তখন যদি বাজার জেগে ওঠে, তা হলে খুচরো ব্যবসায়ীদের লাভ। এর মধ্যে উচ্চবিত্ত মানুষ সাধারণত নামী দামি ব্র্যান্ডের পোশাক কেনেন। সেক্ষেত্রে তাঁরা বড় শো রুমে যাওয়াই পছন্দ করেন।
নবদ্বীপের রেডিমেড গার্মেন্টস এজেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মোহন রায় বলেন, “এ বার পুজোর পোশাকে ২৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। নিম্নবিত্ত মানুষ তাই সমস্যায় পড়বেন।” তবে পুজোর মুখে গিয়ে কী পোশাকের কী দাম দাঁড়াবে তা বলা শক্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.