বলছে পর্ষদের রিপোর্ট
গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষায় গাফিলতি, বেড়েই চলেছে দূষণ
লকাতায় বায়ুদূষণ মাপার যন্ত্রগুলি বন্ধ করে দেওয়ায় দূষণের প্রকৃত মাত্রা জানার উপায় নেই। পাশাপাশি, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষায় গাফিলতি। কারণ, কলকাতা এবং শহরতলিতে গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা (পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল সার্টিফিকেট) ব্যবস্থাটাই কার্যত ভেঙে পড়েছে। ধোঁয়া পরীক্ষার ভুয়ো সার্টিফিকেটের অভিযোগও বিস্তর। কলকাতায় বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ গাড়ির ধোঁয়া। ধোঁয়া পরীক্ষার গাফিলতির ফলে এই দূষণ দ্রুত বেড়ে চলেছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক রিপোর্ট থেকেই এর সমর্থন মিলেছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে রাতের শহরে অভিযান চালাচ্ছে পর্ষদ। কলকাতা পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের সহযোগিতায় প্রতি মাসে ওই অভিযান চললেও পর্ষদ-কর্তারা মাসে গড়ে ৮১টির বেশি গাড়ি পরীক্ষা করতে পারেন না। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত যে ৪৯০টি গাড়ি তাঁরা পরীক্ষা করেছেন, তার মধ্যে ১২৬টি গাড়িতে ধোঁয়া পরীক্ষার ছাড়পত্রই ছিল না। ২০১১ সালে সারা বছরে মোট ৯৫৯টি গাড়ি পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৩৪১টি গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষার ছাড়পত্র ছিল না। আবার, ওই গাড়িগুলিরই ধোঁয়া পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাদের দূষণ মাত্রাতিরিক্ত।
একই ছবি দিনের কলকাতাতেও। সব মিলিয়ে কলকাতায় ৭০ শতাংশেরও বেশি গাড়ি ধোঁয়া পরীক্ষার ছাড়পত্র ছাড়াই রাস্তায় বেরোয়। যানদূষণ বিশেষজ্ঞ সোমেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কলকাতায় ১১০টি ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র। অথচ কলকাতা শহরে নথিভুক্ত গাড়ি সাড়ে ২০ লক্ষেরও বেশি।” এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, কেন শহরের বেশির ভাগ গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষার ছাড়পত্র নেই।
সোমেনবাবু জানান, একটি কেন্দ্র পেট্রোল এবং ডিজেল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৮০টি গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা করতে পারে। কলকাতায় ছ’মাসে এক বার গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা করালেই চলে। মুম্বই বা দিল্লিতে তা করতে হয় তিন মাস অন্তর। এটাও কলকাতায় বায়ুদূষণ বাড়ার একটি কারণ।
কেন্দ্রগুলির কাজে গাফিলতি বা অসঙ্গতি পেলে হাইকোর্টের নির্দেশে পর্ষদ তাদের ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে। পরিবহণ দফতর দোষী কেন্দ্রের শংসাপত্র বাতিলও করতে পারে। কয়েকটি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরে ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ অটো এমিশন টেস্টিং সেন্টার’ ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যায়। আদালত আগের নির্দেশই বহাল রাখে। পর্ষদ দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসছে, সমস্ত গাড়িকে অবশ্যই ধোঁয়া পরীক্ষার ছাড়পত্র রাখতে হবে। ছাড়পত্র ছাড়া কোনও গাড়িকে যেন তেল দেওয়া না হয়। কিন্তু রাজ্য বা কেন্দ্র সে কথায় কর্ণপাত করেনি।
রাজ্য পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুষার সেনের অভিযোগ, শহরতলির কেন্দ্রগুলি তো বটেই, কলকাতারও বেশির ভাগ ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট গাড়ি পায় না। তাঁর কথায়, “পুলিশ এবং পর্ষদের তৎপরতার অভাবের জন্যই এত কম গাড়ি ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকে।”কত কম গাড়ি ধোঁয়া পরীক্ষা করায়, তার হিসেব পর্ষদের রিপোর্ট থেকেই জানা গিয়েছে। তুষারবাবু জানিয়েছেন, হাওড়ায় ৬০টি ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টির লাইসেন্স নবীকরণ করেনি পরিবহণ দফতর। তাঁর কথায়, “ওই কেন্দ্রগুলি গত এক বছর ধরে আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনে বসে রয়েছে, অথচ পরিবহণ দফতর কিছুতেই তাদের কাজটুকু করছে না।”
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, “দূষণ রোধে কলকাতা এবং শহরতলিতে যখন আরও বেশি ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র প্রয়োজন, তখন প্রশাসনের এই গাফিলতি একেবারেই কাম্য নয়। তা ছাড়া গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা নিশ্চিত করে শহরের দূষণ কমাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পুলিশের উদ্যোগও যথেষ্ট নয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.