সম্প্রতি উত্তর চব্বিশ পরগনার শ্যামনগরের কাছে রাহুতা গ্রামে তাঁর জন্মভিটা দেখে এলাম। অবশ্য ভিটা বলতে আছে একটি জীর্ণ ঘর। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাকি সব কালের কুক্ষিগত। অযত্ন আর অবহেলায় কোনও রকমে টিকে-থাকা ঘরটিও সম্পূর্ণ ভাবে বিপর্যস্ত। দেওয়ালের গায়ে সবুজ শ্যাওলার আস্তরণ। কড়িবরগায় মরচে ধরেছে। ছাদের দখল নিয়েছে বিচিত্র গাছ-গাছালি। মাথায় আগাছার বোঝা নিয়ে যে কোনও মুহূর্তে ধূলিসাৎ হওয়ার জন্য যেন প্রহর গুনছে। বাড়ির সামনের নেমপ্লেট থেকে মালুম হয়, ‘বিশ্বকোষ’ নামে বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ অভিধান-প্রণেতা রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায় ২৪ আষাঢ়, ১২৫০ সালে এবং ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ৬ শ্রাবণ, ১২৫৪ সালে এখানে জন্মগ্রহণ করেন। ত্রৈলোক্যনাথের উত্তরপুরুষগণ স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হলেও বাড়িটির সংরক্ষণে উদাসীন। মর্যাদার সঙ্গে রসসাহিত্যিক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধায় ও বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায়ের জন্মভিটার রক্ষণের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই।
উজ্জ্বলকুমার মণ্ডল। শেওড়াফুলি, হুগলি
|
১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে রাজ্যে আয়োজিত ছাত্র-যুব উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আমন্ত্রণ করায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন আলিমুদ্দিনের কর্তারা। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবসে বিমান বসু মন্তব্য করেছেন, ‘কোনও ভাবেই ওবামাকে আমরা কলকাতায় নামতে দেব না।’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়ার উপর আমেরিকা আক্রমণ হানছে। এ বার তাদের নজর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে। এর বিরুদ্ধেই আমাদের মিছিল’ (২-৯)। সাম্রাজ্যবাদের মতো আপাত ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয় নিয়ে বাজার গরম করা ছাড়া বিমানবাবুদের সামনে আর কোনও রাস্তা যে খোলা নেই, সেটা ওঁরা ভাল ভাবেই জানেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জন মেজরকেও তো জ্যোতিবাবুরা এক সময় লাল শালুর কার্পেট পেতে কলকাতার বুকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন (৯-১-১৯৯৭)। ব্রিটেন কি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ছিল না! ১৯৯৫ সালে জ্যোতিবাবু পুঁজির সন্ধানে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন। সে দিন কি আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ছিল না? প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন শিল্পের খোঁজে কত বার মার্কিন সফর করেছিলেন?
রতন চক্রবর্তী। উত্তর হাবড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা
|
‘লন্ডন’ বানানো শেষ হলে এ দিকেও তাকাবেন |
কয়েক দিন আগে বর্ধমানের ওরগ্রামে গিয়েছিলাম। বর্ধমান স্টেশনে নেমে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে গুসকরাগামী বাসে উঠলাম। গন্তব্য ওরগ্রাম হাটতলা। সময় লাগে এক ঘণ্টা দশ মিনিট। প্রায় এক ঘণ্টা যাওয়ার পর জানা গেল যে, রাস্তা খারাপ, বাসকে ঘুরে যেতে হবে। অবশেষে গন্তব্যস্থল পৌঁছালাম নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় পঞ্চাশ মিনিট পর। গ্রামের রাস্তা যে কী পরিমাণ খারাপ তা কলকাতায় বসে আন্দাজ করা কঠিন। আমার দু’ঘণ্টা যাত্রাপথে বাস ক্রমাগত হেলে পড়েছে এক বার ডান দিকে আর এক বার বাঁ দিকে। বিরাট বিরাট গর্তে-ভরা রাস্তা। শুধু তাই নয়, রাস্তা এত সরু যে পাশাপাশি দু’টি গাড়ি যাওয়া কঠিন। পথের দু’ধারে বাঁশঝাড়, জঙ্গল। বাঁশঝাড় থেকে লম্বা ডাল এমন ভাবে এগিয়ে রয়েছে পথের ওপর যে, তা ঢুকে পড়ছে চলমান বাসের জানালার ভিতর। একটু অসতর্ক হলেই বাঁশগাছের খোঁচায় আঘাত পেতে পারেন যাত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা শহরকে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। সাধু প্রচেষ্টা। কিন্তু কলকাতা এমনিতেই সুন্দর শহর। রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি মোটামুটি সন্তোষজনক। কিন্তু কলকাতা-কেন্দ্রিক উন্নয়ন না-ঘটিয়ে প্রাধান্য দেওয়া উচিত গ্রামবাংলাকে। শুধু বর্ধমান জেলাই নয়, হাওড়া, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলার গ্রামগুলিরও রাস্তাঘাট, আলো, যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নিন্দনীয়। হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়া থেকে হাওড়া স্টেশনে আসার শেষ বাসটি ছাড়ে প্রতিদিন সন্ধে সাড়ে পাঁচটায়। সন্ধে নামলেই গভীর আঁধারে ডুবে যায় গ্রামগুলো।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও গ্রামবাংলার এই ছবি দেখতে ভাল লাগে না। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাজেটে গ্রামবাংলার পরিকাঠামোগত উন্নতি বিধানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। কলকাতার ওপর সব দিক থেকে চাপ কমানোর জন্যও গ্রামের দ্রুত উন্নতি দরকার। একমাত্র কলকাতা শহর উন্নয়নের অভিমুখ হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, পিছিয়ে-পড়া গ্রামবাংলা পশ্চিমবঙ্গের অন্ধকার রূপেরই প্রতিফলন।
সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। হাওড়া-৬ |