কংগ্রেসকে হুমকি ছুড়ে জাতীয় মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী
রাজনীতিতে তাঁদের যোজন দূরত্ব। কিন্তু প্রকাশ কারাটের পথেই যেন হাঁটছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে সমর্থন তুলে প্রথম ইউপিএ সরকার ফেলার পণ করেছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তোলার পরে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
২০০৮ সালে মুলায়ম সিংহ যাদবের উপরে নির্ভর করেছিলেন কারাট। ২০১২ সালেও মমতার ভরসা সেই মুলায়মই। আজ দিল্লির যন্তর-মন্তরে দলের প্রতিবাদ সভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “মুলায়ম এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে সংসদের আসন্ন অধিবেশনে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে।”
কারাটের বিদ্রোহের পরিণতি মমতার জানা। তাঁর বিদ্রোহের পরিণতি আপাতত ভবিষ্যতের গর্ভে।
তৃণমূলের একাংশ অবশ্য মমতার পদক্ষেপকে ইতিহাসের সমাপতন হিসেবে দেখতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, ইউপিএ সরকার ফেলে দেওয়া মমতার উদ্দেশ্য নয়। তাঁকে ছাড়াও যে সরকার চলবে, সে কথা সমর্থন তোলার দিনই বলে দিয়েছিলেন মমতা। এখন তাঁর লক্ষ্য কংগ্রেসকে চাপে রাখা। নিজের লড়াইকে জাতীয় স্তরে তুলে এনে আঞ্চলিক দলগুলির জোট বাঁধা।
নতুন আঙিনায়। যন্তর মন্তরে প্রতিবাদ সভায়। ছবি: এপি।
সেই লক্ষ্য আজ কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। তৃণমূলের মঞ্চে হাজির হয়েছেন জেডি(ইউ) নেতা তথা এনডিএ-র আহ্বায়ক শরদ যাদব। সুর চড়া করেছে ইউপিএ শরিক ডিএমকে। (যা জেনে মমতা ঘোষণা করেছেন, তিনি নিজে যাবেন দক্ষিণ ভারত) জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে দুই সাংসদের শরিক ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা (প্রজাতান্ত্রিক)।
জাতীয় নেত্রী হওয়ার নয়া ইনিংসে আজ নিজের সেই অগ্নিকন্যা ছবিটাই তুলে ধরেছেন মমতা। কারণ এই ছবিতেই গোটা দেশ তাঁকে সব চেয়ে ভাল চেনে। ক্রুদ্ধ মমতা আজ বলেছেন, “কেউ মারলে মার খাব। কিন্তু দেশকে বেচতে দেব না।” নিজে রাগ দেখিয়েছেন। আবার পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, দিল্লিতে তাঁকে দেখে কেন রেগে যাচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মমতা বলেন, “দিল্লি এলেই প্রশ্ন ওঠে, আমি কেন এসেছি? দিল্লি কি ভারতের বাইরে? সরকারের এত রাগ কেন? কংগ্রেসেরই বা এত রাগ কেন? প্রতিবাদ করার অধিকার সকলেরই রয়েছে।”
কংগ্রেসের রাগের তোয়াক্কা না করে তিনি যে এর পর বারবার দিল্লি আসবেন, সে কথা আজ জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। নভেম্বরের শেষের দিকে রাজধানীর বুকে টানা ৪৮ ঘণ্টা ধর্না দেবে তৃণমূল। সেই উপলক্ষে ফের দিল্লি আসার কথা রয়েছে মমতার। তবে শুধু দিল্লি নয়, কংগ্রেস-বিরোধী জোট গড়ার লক্ষ্যে গোটা দেশে ঘুরতে চান তৃণমূল নেত্রী। দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার কথা নিজেই আজ জানিয়েছেন। বিহার এবং হরিয়ানায় জনসভা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। উত্তরপ্রদেশেও সভা করতে চান মমতা। বলেছেন, “মুলায়ম সিংহ ও অখিলেশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লখনউতে জনসভা করা হবে। পটনায় জনসভা করা নিয়েও নীতীশ কুমারের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার।”
ফিল্মি মমতা
আই উইল বি ব্যাক
মমতা বললেন, ফিরে আসবেন। দ্য টার্মিনেটর-এ থানায় ঢুকতে না পেরে আর্নল্ড সোয়ার্ৎজেনেগার যেমন বলেন: “আই উইল বি ব্যাক!” পরে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েন সেখানে।
অ্যালবার্ট পিন্টো
মমতার প্রশ্ন, তিনি দিল্লি এলে সরকারের এত রাগ হয় কেন? অ্যালবার্ট পিন্টো কো গুস্সা কিঁউ আতা হ্যায়! মনে পড়ালেন ’৮০ সালে তৈরি সৈয়দ মির্জার ছবি।
নীতীশের দলের নেতা শরদ যাদব আজ তৃণমূলের মঞ্চে এসে মমতার লড়াইয়ে অনেকটাই অক্সিজেন জুগিয়েছেন। মমতার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এর আগেও মমতার জন্য খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি ভারতে আসতে পারেনি। এ বারও তিনি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তাঁর আন্দোলনের প্রতি আমাদের দলের সমর্থন রয়েছে।” পাশাপাশি বিজেপি-র ধাঁচেই শরদের প্রশ্ন, “আমেরিকায় নির্বাচন এলেই মনমোহন সিংহ সংস্কারের প্রশ্নে কড়া সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে পরমাণু চুক্তির সময়ে। আর এখন এফডিআই নিয়ে। এর মাধ্যমে কি আসলে ওবামা প্রশাসনকেই সাহায্য করতে চাইছেন মনমোহন?”
প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। আগামী লোকসভা নির্বাচনের পর মনমোহন আমেরিকা চলে যাবেন। কিন্তু তার আগে গোটা দেশ কার্যত বেচে দিয়ে যাচ্ছেন।” দলের অন্য নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “গত ৩৪ বছরের বাম শাসনের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার দিল্লিকেও ধসিয়ে দেবেন তিনি।”
তৃণমূল চাইছে যত দ্রুত সম্ভব লোকসভা নির্বাচন হোক। কিন্তু সেই সঙ্গে মমতার এই আশঙ্কাও রয়েছে যে জনমোহিনী বাজেট পেশ করে নির্বাচনে যাবে ইউপিএ সরকার। তার গায়ে দুর্নীতির যে দাগ লেগেছে, তা মুছতে কৃষকদের জন্য কিছু ফাঁপা প্রতিশ্রুতি থাকবে ভোটের আগের বাজেটে। পাশাপাশি, সরকার বাঁচাতে কংগ্রেস এখন টাকা দিয়ে সমর্থন কিনতে ব্যস্ত, এই অভিযোগ করে আজ মমতা বলেন, “কংগ্রেস টাকা দিয়ে সমর্থন কেনে। আমি রাজনৈতিক দলগুলির কাছে মিনতি করছি, ওরা যেন কংগ্রেসের ফাঁদে পা না দেয়।”
আজ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার মতো বিষয়গুলি ছাড়াও সরকারের অন্যান্য কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আগামী মাস থেকে চারটি মেট্রো শহরে কেবল পরিষেবা ডিজিটাল হয়ে যাবে। মমতার অভিযোগ, “এর ফলে গরিব মানুষদের টিভি দেখা কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। কাজ হারাবেন কেব্ল পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষ।” সরকার কেন এত তাড়াহুড়ো করছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। সংসদের আগামী অধিবেশনে পেনশন বিল আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের সঞ্চিত অর্থ নয়ছয় হওয়ার আশঙ্কার কথা বলে সরকারি কর্মচারীদেরও প্রতিবাদের সুর চড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.