ভরা বর্ষাতেও এ বার পেটপুরে ইলিশ খেতে পারেননি সুমিতবাবু। সুমিতবাবুর মতো ইলিশের দুঃখে কাতর বহু বাঙালিই। মরসুমে বাজারে ইলিশ যা-ও এসেছিল, তাতে হাত ছোঁয়ানো ছিল দায়। সেই দুঃখেই উল্টোডাঙার ইউনাইটেড ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তারা পুজোর থিম হিসেবে তুলে ধরেছেন জলের রুপোলি শস্যকে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভরা মরসুমে ইলিশ না মেলার কারণ জলের দূষণ এবং অপরিণত ইলিশ ধরা। তাই পুজোর থিমে সচেতনতা ছড়াতে চাইছেন তাঁরা। মণ্ডপে থাকছে পরিবেশবান্ধব রং, ফাইবারের তৈরি মাছ ধরার সরঞ্জামও।
শুধু ইলিশই নয়, এ বার উল্টোডাঙা-কাঁকুড়গাছি এলাকায় পুজোকমিটিগুলির থিমের বৈচিত্রে বাদ যায়নি কিছুই। ঈশ্বরের রূপ থেকে রুদ্রাক্ষ, ঠাকুর গড়ার মাটি থেকে ধানের মরাই বা বাংলার বাউল। ভিড় টানার লড়াইয়ে একে অন্যকে টেক্কা দিতে এমনই সম্ভার সাজিয়েছে ক্লাবগুলি।
তেলেঙ্গাবাগানে শিল্পী কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত ধাতুর উপরে এঁকে-ঠুকে মণ্ডপ আর ঠাকুর ফুটিয়ে তুলছেন। মণ্ডপ গড়তে লেগেছে প্রায় ২৫ টন লোহা। তামার পাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেবীমূর্তি। এই কাজে তাঁর অগ্রজ চার শিল্পী পঞ্চানন কর্মকার, রামচাঁদ রায়, বিশ্বম্ভর আচার্য ও লালুপ্রসাদ সাউকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কৃষ্ণপ্রিয়বাবু। তাঁর কথায়, “এঁদের কাজই আমার প্রেরণা।”
করবাগানের থিম ঈশ্বরের স্বরূপ। যার ক্যাচলাইন বহু প্রচলিত একটি প্রবাদের উপরে ভিত্তি করে, “মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী।” কাঠ, মাটি, প্লাস্টার অফ প্যারিস এবং ফাইবারের সমন্বয়ে শিল্পী কৃশানু পাল গড়ে তুলছেন একটি মন্দির।
করবাগানের ‘প্রতিবেশী’, মুরারিপুকুরের বিধান সঙ্ঘ আবার ঠাকুর গড়ার আদি উপাদান, ‘মাটি’কেই তুলে এনেছে থিম হিসেবে। শিল্পী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বললেন, “পোড়া মাটির ফুলদানি, ধুনুচি ইত্যাদি দিয়ে সাজছে মণ্ডপ।”
কাঁকুড়গাছির নবোদয় পল্লিমঙ্গল তুলে এনেছে গ্রাম-বাংলার ধানের মরাইকে। মরাইয়ের মতো দেখতে মণ্ডপ সাজানোর হচ্ছে বেল, মেহগনি ফল, বাকলি, সুপুরি দিয়ে। বালির তৈরি নানা দেব-দেবীর মূর্তিও থাকছে সেখানে। ভিতরে মা দুর্গা আঁচলের তলায় রক্ষা করছেন তাঁর সন্তানদের।
উল্টোডাঙার দাসপাড়ার থিম বাংলার বাউল-ফকিরেরা। উদ্যোক্তারা জানান, বাউল-ফকিরেরা হৃদয়ের কথা বলে, মানুষের বেঁচে থাকার কথা বলে। কিন্তু এই লোকসংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই শিল্পী ভোলানাথ কলসী এবং মনজিৎ কলসী কলাগাছের ছাল, তালপাতা, একতারা, ডুগি, খঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন মণ্ডপ। বাংলার বৈষ্ণবী সনাতনী রূপে প্রতিমা গড়ছেন সনাতন রুদ্রপাল।
হাডকো মোড়ের সংগ্রামী এ বার খুঁটির গায়ে রঙিন কাপড় জড়িয়ে সৃষ্টিশীলতাকে তুলে ধরতে চেয়েছে। সঙ্গে থাকছে এলইডি আলোর সজ্জা। ওই এলাকারই পল্লিশ্রীর থিম ফুলের কুঁড়ি। যার পাপড়ি বিকশিত হবে শান্তি-সম্প্রীতির বার্তা হিসেবে। |