শেষ ওঁরা বেতন পেয়েছিলেন গত মার্চ মাসে। তা-ও পুরোটা নয়, শুধু মূল বেতনের টাকা। তার পরে ছ’মাস আর কিছুইমেলেনি। যার প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে আস্তে আস্তে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছিলেন কিংফিশার বিমানসংস্থার ইঞ্জিনিয়ারেরা। সঙ্গে যোগ দেন পাইলটদের একাংশও।
শেষ পর্যন্ত সংস্থায় আংশিক লক-আউট ঘোষণা করলেন কর্তৃপক্ষ। সোমবার কিংফিশারের যাবতীয় উড়ান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উড়ান বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কিংফিশার কর্তৃপক্ষ।
উড়ান বাতিল হওয়ার জন্য এক শ্রেণির কর্মীর ‘বাধাদানের’ দিকেই এ দিন আঙুল তুলেছেন কিংফিশার কর্তৃপক্ষ। সরকার কী বলছে? বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) জানিয়েছে, ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতির দিকে তারা নজর রাখছে। সংবাদসংস্থার খবর: আজ, মঙ্গলবার কিংফিশারের কর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন ডিজিসিএ-প্রধান অরুণ মিশ্র। বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ সম্প্রতি বলেছেন, অন্তত ৫টা বিমান চালাতে না-পারলে কিংফিশারের লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।
ক’মাস আগে কিংফিশার সারা দেশে ৬৪টি বিমান চালাতো। সংখ্যাটা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১৪। অধিকাংশই চলে দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-চেন্নাইয়ে। কলকাতায় কিংফিশারের উড়ান বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাঁচ মাস আগে, সেই এপ্রিলে। কলকাতায় কিংফিশারের যে ইঞ্জিনিয়ারেরা ছিলেন, তাঁদের মুম্বই-দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওঁদের বাদ দিয়েও কলকাতায় অবশ্য সংস্থার ৫০ জন কর্মী-অফিসার রয়েছেন। তাঁরা আপাতত বিমানবন্দরে আসেন না। কলকাতায় কিংফিশারের যে দু’টো ছোট এটিআর বিমান দীর্ঘ দিন বসে রয়েছে, সেগুলোও এখন ওড়ার অবস্থায় নেই বলে সংস্থা-সূত্রের খবর।
সাম্প্রতিকতম অচলাবস্থা প্রসঙ্গে কিংফিশার কর্তৃপক্ষের কী বক্তব্য? সংস্থার কর্পোরেট কমিউনিকেশন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকাশ মিরপুরী এ দিন অভিযোগ করেন, এক শ্রেণির কর্মী নিজেরাই তো কাজ বন্ধ করেইছেন, অন্যদেরও কাজে আসতে বাধা দিচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন। এবং এরই জেরে অনেকগুলো উড়ান বাতিল করতে হয়েছে বলে সংস্থা-কর্তৃপক্ষের দাবি। নিয়ম অনুযায়ী, ইঞ্জিনিয়ারেরা ‘ফিট সার্টিফিকেট’ না-দিলে কোনও বিমান উড়তে পারে না। গত এক বছর ধরে বিশাল আর্থিক লোকসানের বোঝা চেপে বসেছে কিংফিশারের ঘাড়ে। ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। কিংফিশারের কর্ণধার বিজয় মাল্যের আশ্বাস ছিল, বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি পেলে সংস্থার হাল ফিরবে। কেন্দ্র সম্প্রতি ভারতীয় বিমানসংস্থায় ৪৯% বিদেশি লগ্নিতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। তবু এই অবস্থা কেন? কিংফিশারের এক অফিসারের অভিযোগ, “কেন্দ্রের ঘোষণার পনেরো দিন পরেও কোনও উন্নতি চোখে পড়ছে না। কারা এই কোম্পানিতে টাকা ঢালছেন, কত টাকা ঢালছেন কিছু স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। উপরন্তু মাইনেও হচ্ছে না। কত দিন সহ্য করা যায়?”
সুরাহার কোনও আভাসও তাই এই মুহূর্তে চোখে পড়ছে না। |