বারাসতে বিপত্তি শর্ট শার্কিটে
আমরির শিক্ষায় আগুনে রক্ষা নার্সিংহোমের
ক টানে খুলে ফেলেছেন হাতের স্যালাইন। কালো ধোঁয়ায় ঘরের মধ্যে তখন শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। ক্যাথিটারের পাউচটা কোনও রকমে হাতে নিয়ে নার্সিংহোমের শয্যা থেকে পড়িমরি করে নেমে পড়েছিলেন চিংড়িঘাটার বাসিন্দা মঞ্জুরানি পাল। জানলার কাচ ভাঙার শব্দ পাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ সব আলো নিভে গেল। শেষ পর্যন্ত দু’জন নার্স স্ট্রেচারে করে তাঁকে বাইরে বার করে আনেন। খোলা আকাশের নীচে, গাছতলায়।
অন্য রোগীরা তখন সেখানে ভয়ে চিৎকার করছেন, ‘আগুন, আগুন’।
আমরি-কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়েই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সম্ভাব্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেল বারাসতের কল্পতরু হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি নার্সিংহোম। কর্মী, দমকল, পুলিশ আর স্থানীয় যুবকদের তৎপরতায় রক্ষা পেলেন রোগীরা। রাত ১টা নাগাদ নার্সিংহোমের পাঁচতলার একটি ঘরে প্রথম লাগে আগুন। কিছু ক্ষণের তা ছড়িয়ে পড়ে। শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে সেই আগুন থেকে রোগীদের রক্ষা করল ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের সাম্প্রতিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে নেওয়া শিক্ষাই।
আগুন লাগার পরে নীচে নামিয়ে আনা হচ্ছে রোগীদের। বৃহস্পতিবার রাতে। —নিজস্ব চিত্র
কী ভাবে? পাঁচতলায় যেখানে প্রথম আগুন লাগে, সেই ঘরে পোশাক বদল করেন নার্সিংহোমের সেবিকারা। ওই তলাতেই আইসিইউ, এইচডিইউ-এর মতো জরুরি বিভাগে ছিলেন ২২ জন রোগী। গোটা নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন মোট ৭৪ জন। আগুন দেখতে পেয়েই প্রথমেই দমকল, পুলিশ আর স্থানীয় ক্লাবের ছেলেদের খবর দেন নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের একাংশ নার্সিংহোমের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। জানলা ও দরজার কাচ ভাঙতে শুরু করেন কিছু কর্মী। বাকিরা নার্সিংহোম থেকে রোগীদের বাইরে বার করে আনতে থাকেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যান দমকল, পুলিশ ও স্থানীয় ছেলেরা। তাঁরাও হাত লাগান কাজে। সব রোগীকেই দ্রুত হাসপাতালের বাইরে বার করে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে আট জনকে পাঠানো হয় আশপাশের নার্সিংহোমে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আগুন আয়ত্তে আসে।
তিন দিন ধরে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন বারাসতের ১১ নম্বর রেলগেটের বাসিন্দা, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র গোকুল নির্ধর। তিনি বলেন, “আমি ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ এক নার্স এসে বলেন, ‘তাড়াতাড়ি ওঠো, বাইরে যেতে হবে। দরকার আছে।’ ঘরটা তত ক্ষণে ধোঁয়ায় কালো হয়ে গিয়েছে। আমি নিজেই নেমে আসি। হাসপাতালের বাগানে গাছতলায় এসে দেখি, অন্য রোগীরা সেখানে শুয়ে-বসে আছেন। চিৎকার-চেঁচামেচি চলছে। ভয়ে কান্নাকাটি করছেন কেউ কেউ।” লক্ষ্মীকান্ত সাহা নামে চিকিৎসাধীন এক রোগী বলেন, “আমিও ঘুমোচ্ছিলাম। নার্স এসে আমাকে তুলে দিয়ে বাইরে যেতে বলেন। ভয় পাব ভেবে তিনি আগুনের কথা বলেননি। বাইরে বেরোনোর মুখে হঠাৎ সব আলো নিভে যায়। তখন পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর ছিল।”
শুক্রবার সকালেও নার্মিংহোমের পাঁচতলায় এলোমেলো শয্যা আর অন্যান্য পোড়া জিনিস স্তূপ হয়ে ছিল। মেঝেতে জল। পোড়া গন্ধ। সুস্থ হয়ে যাওয়ায় এ দিন সকালেই এক রোগীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁকে অন্য নার্সিংহোমে নিয়ে যান আত্মীয়েরা। সকালে নার্সিংহোমে বিক্ষোভ দেখান কিছু রোগীর পরিজন। গোকুলের আত্মীয় শুভ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আগুন যে লেগেছে, নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষ আমাদের তা জানাননি। সকালে টিভিতে আগুনের খবর দেখে আমরা ছুটে আসি।”
শুক্রবার সকালে রোগীদের অন্যত্র সরানো হচ্ছে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
ওই নার্সিংহোমের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ঠিকঠাকই ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে দমকল। তা হলে কী ভাবে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দমকল আধিকারিক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “শর্ট সার্কিট থেকে কী ভাবে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ জানায়, ওই নার্সিংহোমের অগ্নিনির্বাপক এবং সমস্ত লাইসেন্স ঠিকঠাক রয়েছে কি না, তা-ও যাচাই করা দেখা হচ্ছে।
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় নামে ওই হাসপাতালের এক অধিকর্তা বলেন, “আমাদের অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ও লাইসেন্স সবই যথাযথ আছে।
সকলের তৎপরতাতেই বড় দুর্ঘটনা থেকে রেহাই মিলেছে। মাস ছয়েক ধরে আমরা দফায় দফায় আমাদের কর্মীদের আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। সেটাও কাজে এসেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.