মাওবাদী নাশকতায় জড়িত থাকা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনগণের কমিটির এক নেতা-সহ ৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। শুক্রবার বাঁকুড়ার খাতড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শ্যামলেন্দু ঘোষাল এই রায় দেন। এ দিনই মাওবাদী নেতা হিমাদ্রি সেনরায় ওরফে সোমেনকে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক রাখা এবং দেশদ্রোহের মামলায় বেকসুর খালাস দিল বারাসত আদালত। ২০০৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার হৃদয়পুর স্টেশন থেকে সোমেনকে ধরে সিআইডি। তবে, অন্য একাধিক মামলা চলায় এখনই জেল থেকে মুক্তি পাবেন না এই মাওবাদী নেতা।
খাতড়া আদালতে এ দিন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন: বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার শীতলপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা জনগণের কমিটির সারেঙ্গা ব্লকের নেতা আদিত্য রাউত, বেনাশোলি গ্রামের বিদ্যাসাগর তন্তুবায়, খয়েরপাহাড়ির রাজীব কিস্কু, নতুনডি গ্রামের গদাই মাহাতো, রাইপুর থানার শিরোমণিপুর গ্রামের বাসিন্দা সুদীপ্ত মণ্ডল, বেগুয়াশোল গ্রামের মনোহর হেমব্রম এবং বারিকুল থানার কেষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবুরাম সোরেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী অসীম রায় জানান, যাবজ্জীবনের পাশাপাশি, ওই ৭ জনকে ৫০০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৫ মাস জেলের সাজা দিয়েছে আদালত। এই মামলার আরও কয়েকটি ধারায় তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করে ৬ মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে। সব সাজা একই সঙ্গে চলবে। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাইপুরের বেগুয়াশোলের জঙ্গল থেকে আদিত্য রাউত-সহ ৬ জনকে ধরেছিল পুলিশ। পর দিন নতুনডি গ্রাম থেকে আরও এক জনকে ধরা হয়।
পুলিশের দাবি, বেগুয়াশোলের জঙ্গলে জড়ো হয়ে ধৃতেরা মাওবাদী নাশকতার ছক কষছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে ১৮৭টি ডিটনেটর, ৩২টি জিলেটিন স্টিক, একটি পাইপগান, ৪টি থ্রি নট থ্রি কার্তুজ এবং বেশ কিছু মাওবাদী লিফলেট ও পোস্টার মিলেছিল। ৩ মাসের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। ধৃতেরা জামিন পাননি। জেল হাজতে থাকাকালীন বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হয়। বৃহস্পতিবার বিচারক ওই ৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এ দিন সাজা ঘোষণা হয়।
খাতড়া আদালতে সাজাপ্রাপ্তদের পরিবারের লোকজন এসেছিলেন। প্রচুর পুলিশ আদালত চত্বরে ছিল। এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় আদিত্য দাবি করেন, “মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাদের সাজা দেওয়া হল।” সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো একটি চিরকুটে ৭ সাজাপ্রাপ্ত অভিযোগ করেছেন, বেগুয়াশোলের জঙ্গল নয়, তাঁদের সবাইকে নিজেদের বাড়ি থেকে তুলে এনে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।
আদিত্যর ছেলে বরুণ রাউতের অভিযোগ, “বাবা বরাবর সিপিএম বিরোধী রাজনীতি করতেন। সেই আক্রোশে স্থানীয় সিপিএম নেতারা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে মাওবাদী তকমা দিয়ে বাবাকে গ্রেফতার করায়।” তাঁর দাবি, “২০১০ সালের ২৪ জুলাই আমাদের জমি থেকে বাবাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। ৬ দিন খাতড়া থানায় বাবাকে আটকে রেখে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার দেখায়।”
জেলা সিপিএম নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর এক সাজাপ্রাপ্ত বিদ্যাসাগর তন্তুবায়ের মা মিনতিদেবীর দাবি, “২৫ জুলাই রাতে বাড়ি থেকে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। ৫ দিন ওর খোঁজ পাইনি। পরে জানতে পারি, পুলিশ মাওবাদী সাজিয়ে ছেলেকে জেলে পুরেছে।”
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মিথ্যা মামলার ব্যাপার নেই। আদালতে সব প্রমাণ হয়েছে।” |