মুখোমুখি...
বিয়ে করছেন ‘গুলমিত কৌর’ আর ‘গুলিন্দর সিংহ’
পত্রিকা: উত্তমকুমার-গৌরীদেবীর মতো তোমাদেরও কি ‘লভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’?
অনিন্দিতা: হ্যাঁ, আমার দিক থেকে লভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট।
গৌরব: না, আমার ও সব হয়নি।

পত্রিকা: কবে প্রথম দেখা হয় দু’জনের?
গৌরব: ২০০৮-এ বোধহয়, তাই না? (অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে)।
অনিন্দিতা: না, না, ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারির একটা পার্টিতে। ইনফ্যাক্ট, আমিই গিয়ে প্রথম কথা বলি ওর সঙ্গে। সেই সময় ওর ‘দুর্গা’, আর আমার ‘বৌ কথা কও’ চলছিল। ‘দুর্গা’তে গৌরবকে বেশ ক্যাবলা ক্যাবলাই লাগত। কিন্তু সামনে থেকে আলাপ হয়ে দেখলাম ‘ওয়াও’। ও কিন্তু সেই সময় আমাকে খুব হ্যাটা করত।
গৌরব: আমি আসলে ঠিক মতো গুছিয়ে ন্যাকা-ন্যাকা কথা বলতে পারি না, তো ওটা অ্যাটিটিউড হিসেবে দারুণ কাজ করে। ও ভাবল হ্যাটা করছে, অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছে।

পত্রিকা: তার পর?
গৌরব: অনিন্দিতা আমাকে ফেসবুকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়, ও-ই প্রথম অনলাইন চ্যাট শুরু করে।
পত্রিকা: তার মানে অনিন্দিতার তরফ থেকেই শুরু?
অনিন্দিতা: হ্যাঁ, তা বলতে পার। সেটা একটা বন্ধের দিন ছিল। সকাল সকাল চ্যাটে বসি...যত্ত সব বোকা বোকা কথা তখন।

পত্রিকা: বাড়িতে জানাজানি হল কবে?
গৌরব: আরে নিজেরাই বুঝতে পারিনি, তো বাড়িতে কী জানাব।
অনিন্দিতা: আমি কিন্তু আলাপের এক মাসের মধ্যেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম— হ্যাঁ, এই ‘গুল’কেই আমি বিয়ে করতে চাই।

পত্রিকা: কী বললে নামটা?
গৌরব: সে একটা মজা আছে। আমরা দু’জনেই দু’জনকে ‘গুল’ বলি।

পত্রিকা: কী রোম্যান্টিক! উত্তম যেমন গৌরীদেবীকে গজু বলতেন?
গৌরব: ব্যাপারটা দাদুর মতো নয়। রোম্যান্টিকও নয়। আসলে আমি যখন দার্জিলিং-এ পড়তাম, তখন স্কুলে কেউ ভুলভাল কীর্তি করলেই তাকে আমরা বলতাম ‘গুল face’। সেই গল্পটা আমি অনিন্দিতাকে বলি। তার পরই শুরু হয়ে যায় খেলাটা। আমি ওকে বলি ‘গুলমিত কৌর’ আর ও আমাকে বলে ‘গুলিন্দর সিংহ’।

পত্রিকা: বেশ মজা তো! তা সেই চ্যাট-এর পর কী হল?
অনিন্দিতা: কী আর বলব। আমিই সব সময় শুরু করতাম, তো সে বার বেশ কয়েক মাস আমি কথা-টথা বলিনি। ও-ও বলেনি। কিছু দিন বাদে হায়াতে আরেকটা পার্টি হল...তো আমি খুব অ্যাটিটিউড দেখিয়ে কথা বললাম না। কেন বলব! অনেক পরে গৌরব নিজে এসে বলে গেল ‘গুড নাইট’। ব্যস ওইটুকুই।

পত্রিকা: বাহ্, তার মানে গৌরবের মনে প্রেম ব্যাপারটা তত দিনে শুরু হয়ে গেছে, তাই তো? আচ্ছা, এটা কি অনলাইন প্রেম? ভেবে দ্যাখো তো, উত্তমের সময়ে এই অনলাইন ব্যাপরটা থাকলে উনি কি সুচিত্রা-সাবিত্রী-সুপ্রিয়ার সঙ্গে চ্যাট করতেন?
গৌরব: হা-হা-হা, বাবা বেঁচে থাকলে এটা ভাল বলতে পারতেন। তবে আমাদের প্রেমটাকে অনলাইন প্রেম বলাই যায়। আসলে আমি দেখেছি সামনা-সামনি অনেক কথাই বলা যায় না, এমনকী ফোনেও শেয়ার করা যায় না, কিন্তু চট করে লিখে ফেলা খুব সহজ।

পত্রিকা: ইন্সট্যান্ট প্রেমপত্র, তাই তো? মানে, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর মতো কাউকে দিয়ে পাঠানোরও দরকার নেই, আর বলারও দরকার নেই ‘মাসিমা মালপো খামু’?
গৌরব: এক্কেবারে তাই।

পত্রিকা: প্রথম ডেট করলে কবে?
গৌরব: ওই পার্টির পরে পরেই। তখন দু’জনেই শু্যটিং করছি। আমি ‘ভারতলক্ষ্মী’তে, আর ও ‘ইন্দ্রপুরী’-তে। শু্যটিং শেষে দেখা করলাম। রাত তিনটের সময় বেরোলাম। সোজা চলে গেলাম সল্টলেকের সিসিডি-তে কফি খেতে।
অনিন্দিতা: তার পর ও আমাকে ড্রাইভ করে সল্টলেক থেকে ভবানীপুরে নিয়ে এল। গিরীশ মুখার্জি রোডের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেই রাতে বাড়িটা দেখাল, দাদুর সাদা অ্যাম্বাসাডারটা দেখাল। খুব আবেগের মধ্যে ছিল বুঝতে পারছিলাম। তার পর ভোর ছ’টার সময় আমাকে কসবার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গেল।

পত্রিকা: তুমি কি একাই থাক কসবায়?
অনিন্দিতা: হ্যা। আমার মা-বাবা থাকেন মুম্বইতে। আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি, আমার মায়ের কিন্তু এটা দ্বিতীয় বিয়ে। মানে যাঁকে আমি বাবা বলি। তাঁর নাম গৌরাঙ্গ অরোরা। মা, অণিমা অরোরা। ওঁদের আর কোনও সন্তান হয়নি। আমিই একমাত্র। আমার নিজের বাবা, যাকে আমি ‘পাপা’ বলি তাঁর নাম জয়ন্ত বসু। আমি কিন্তু খুব আদুরে।

আশীর্বাদী হিসেবে গৌরবের বাড়ি থেকে কনেকে দেওয়া হচ্ছে
গৌরীদেবীর জড়োয়ার বড় কানবালা সহ পুরো সেট। সোনার কয়েন দেওয়া রিস্টলেট, নেকলেস ও ভবানীপুরের গয়নার দোকান থেকে বানানো লোহার ওপর নিরেট সোনা দিয়ে মোড়া নোয়া।
(আপাতত যতটুকু স্থির হয়েছে)
উত্তমের উপহার দেওয়া গৌরীদেবীর বেনারসির ভাণ্ডার থেকে বাছাই করা বেশ ক’টা, যা এখন পালিশে দেওয়া আছে।
বিয়ের খাট
‘সাগরিকা’য় ব্যবহৃত বার্মাটিকের সেই খাট, যা পরবর্তিকালে উত্তম-গৌরীর নিউআলিপুরের বাড়ির প্রধান খাট ছিল। বিয়ের জন্য সেই খাটকেই সাজানো হয়েছে।
বিয়ের অনুষ্ঠান
১৭ জানুয়ারি বিয়ে। নদিয়া হাউসে।
নভেম্বরের শেষে রেজিস্ট্রি ও আশীর্বাদ একসঙ্গে, মেনল্যান্ড চায়নায়।
বিয়ের ঠিক আগে সঙ্গীত, পার্ক হোটেলে।
আইবুড়োভাত, যার যার বাড়িতে।
দু’দিন বাদে রিসেপশন, নলবনে।

পত্রিকা: উত্তমকুমারের নাতি বলেই কি বিয়ের সিদ্ধান্তটা তাড়াতাড়ি নিতে পেরেছ?
গৌরব: আমার মনে হয় না, আমাদের বিয়েতে দাদু কোনও ভাবে সাহায্য করছেন বলে (হেসে)। ইনফ্যাক্ট ও কিন্তু দাদু সম্পর্কে তেমন কিছুই জানত না, কোনও ছবিও দেখেনি। আমিই দেখিয়েছি ‘নায়ক’, ‘সপ্তপদী’, ‘হারানো সুর’।

পত্রিকা: ওই ছবিগুলোর রোম্যান্টিক দৃশ্যের মতো করেই কি বিয়ের কথা-টথা হল? কে প্রথম বিয়ে করতে চাইল?
গৌরব: ও তো প্রথম থেকেই বিয়ে ভেবে বসে ছিল। আমাকে বলেনি থ্যাঙ্ক গড। কারণ বিয়েতে আমার ফোবিয়া ছিল। আগের গার্লফ্রেন্ড বিয়ে করতে চেয়েছিল বলে পালিয়ে গেছি, বিয়েটা করিনি। খুব ভয় ছিল বিয়েতে।

পত্রিকা: মুম্বইতে অনিন্দিতার বাড়ি গিয়েছ?
গৌরব: হ্যাঁ, এক বার গেছি। পাঁচ-ছ’দিন ছিলাম। দারুণ জামাই আদর খেয়েছিলাম।
অনিন্দিতা: উফ্ মা-র তো প্রথম থেকেই ওকে পছন্দ। মুম্বই যাওয়ার সময় গৌরবকে বলেও ছিলাম, মা বাড়াবাড়ি করবে, তুই কিছু মনে করিস না।

পত্রিকা: ও বাবা, সুচিত্রা-উত্তমের মতো তোমরাও তুই-তুই করো বুঝি?
গৌরব: এ মা, ওঁদের সঙ্গে তুলনা করবেন না। তবে হ্যাঁ, আমরা তুই-তুই করে কথা বলি।

পত্রিকা: মুম্বইতে একসঙ্গে থাকতে বললে? মানে, লিভ টুগেদার কর নাকি?
গৌরব: ধুর! লিভ টুগেদার আবার কী! আমার বাড়িতে পার্টি শেষ হলে, সব বন্ধুরা চলে গেলেও অনিন্দিতা থেকে যেত। আমরা কোনও দিনই ‘আমি-তুমি’ টাইপ প্রেম করিনি। পুরোটাই বন্ধু বন্ধু। ইনফ্যাক্ট বিয়ে না করলে মা-দিদি-বোন আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিত।

পত্রিকা: তা বিয়ের প্রস্তাবটা কে দিল?
অনিন্দিতা: এ বছর আমার জন্মদিনে (১০ এপ্রিল) ও-ই সারপ্রাইজটা দিল।
গৌরব: হাতে টাকা ছিল না, তাই ভবানীপুরের গয়নার দোকান থেকে তিনশো টাকা দিয়ে একটা রুপোর আংটি কিনলাম। তার পর প্যাকেটসুদ্ধু ওর হাতে দিয়ে বললাম ‘কিপ ইট’। ওটাই প্রস্তাব।

পত্রিকা: উত্তমের নাতি দিল রুপোর আংটি?
গৌরব: তা হলে আরেকটু বলি...তখন আমার হাতে টাকা নেই, কাজ নেই, আর ওর হাতে ‘অদ্বিতীয়া’, ‘গানের ওপারে’... কত সিরিয়াল, তো ওর টাকাতেই তখন গাড়ির তেল কিনতাম, সিনেমা দেখতাম...নাতি-টাতি বললে কী হবে, আমার সবটাই খোলাখুলি।

পত্রিকা: তা বলে রুপোর আংটি?
অনিন্দিতা: এর পরেও মজা আছে। আমি তো মা-কে ফোনে জানিয়ে দিয়েছি। ও কিন্তু নিজের বাড়িতে আর বলতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত আমিই ওর মা-বোনেদের ডেকে বললাম, দ্যাখো, তোমাদের ছেলে আমাকে বিয়ে করতে চায়, কিন্তু বলতে পারছে না। লজ্জায়!
গৌরব: বললাম তো অনিন্দিতাকে বিয়ে না করলে ওঁরা আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিত। বাড়ির সঙ্গে ‘গুল’ দারুণ মিশে গেছে। বিয়ে ঠিক হবার পর তো ফটাফট সব শুরু হয়ে গেল। জামা-কাপড়, এটা সেটা।


নবমিতা ও মৌমিতা হবু দুই ননদের সঙ্গে
গিরীশ মুখার্জি রোডের বাড়িতে অনিন্দিতা।

পত্রিকা: আর হানিমুন?
গৌরব: প্রথমে দার্জিলিং যাব। কারণ, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে দার্জিলিং সেন্ট পলস। ওকে স্কুলটা দেখাব। তার পর গোয়া।

পত্রিকা: এখন তো দু’জনে মিলে করছ ‘ঘরে ফেরার গান’ সিরিয়ালটা। সত্যি সত্যিই সিরিয়ালের গল্প জীবনে চলে এল তা হলে?
গৌরব-অনিন্দিতা: ঠিক বলেছ।

পত্রিকা: বেস্ট অফ লাক।
গৌরব-অনিন্দিতা: থ্যাঙ্ক ইউ।
ছবি: নিবেদিতা দে


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.