সম্পাদকীয় ২...
বন্দির অধিকার
মাওবাদী সন্দেহে কারাবন্দি কিছু ব্যক্তিকে আদালত ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা দেওয়ায় রাজ্য সরকার কারা-আইনটিই সংশোধন করিয়া ফেলিতে মনস্থ করিয়াছে, যাহাতে এই বন্দিরা অতঃপর পৃথক সেল, বাড়ির রান্না করা খাবার, সংবাদপত্র, বইখাতা পাওয়ার, আত্মীয়স্বজনদের সহিত দেখা করার অনুমতি, ইত্যাদি রাজবন্দির প্রাপ্য সুযোগসুবিধা না পান। যাহারা সন্ত্রাস সৃষ্টি কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহে লিপ্ত থাকার দায়ে বন্দি, তাহারা কেন বিশেষ সুবিধা পাইবে, রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দৃষ্টিভঙ্গি সেটাই। প্রশ্ন হইল, শুধু এই কারণে, অর্থাৎ কিছু বন্দিকে মানবিক কিছু অধিকার মঞ্জুর করার পথ আটকাইতে রাজ্যের কারা-আইন সংশোধন করার উদ্যোগটি কি খুব মানবিক? রাজ্য সরকারের তথা শাসক দলের অভিপ্রায় সম্পর্কে কি এই উদ্যোগ যথাযথ বার্তা পাঠাইবে? ইহা কি তাঁহাদের পক্ষে সম্মানজনক?
ভারতের বিচারনীতি বলে, আইনের চক্ষে কেহই তত ক্ষণ অপরাধী নয়, যত ক্ষণ তাহার অপরাধ বিচারপ্রক্রিয়া মারফত নিঃসংশয়ে প্রমাণিত না হইতেছে। বস্তুত, তত ক্ষণ থানা লক-আপে ধৃত কিংবা জেলখানায় বন্দি সকলকেই সম্পূর্ণ নির্দোষ নাগরিক রূপেই গণ্য করা উচিত। সে ক্ষেত্রে বিচারাধীন সকল কারাবন্দিরই সেই সকল সুযোগসুবিধাই পাওয়া উচিত, যাহা নিরপরাধ ব্যক্তিদের প্রাপ্য। অর্থাৎ তাঁহাদের সকলেরই আত্মীয়পরিজনদের সহিত দেখাসাক্ষাতের, উকিল-আইনজীবীদের সহিত শলাপরামর্শ করার, সংবাদপত্র ও অন্যান্য বইপত্র পাঠের সুযোগ থাকা উচিত। যাঁহাদের বিরুদ্ধে এমনকী রাষ্ট্রদ্রোহের অর্থাৎ চলতি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করিয়া ভিন্নতর কোনও ব্যবস্থা কায়েম করার লক্ষ্যে সশস্ত্র লড়াই বা সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ রহিয়াছে, তাঁহাদেরই বা এই সুযোগসুবিধাগুলি থাকিবে না কেন? অভিযোগ যত ক্ষণ প্রমাণিত না হইতেছে? ভারত কোনও পুলিশ-রাষ্ট্র নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্রে যাহারা অন্তর্ঘাতে অভিযুক্ত, তাহাদেরও সুবিচার পাওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার থাকা উচিত। এখানেই গণতন্ত্রের উৎকর্ষ। জেলখানাই তেমনই স্থান, যেখানে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুযোগসুবিধা অনুশীলনের পরীক্ষা হইতে পারে।
বিচারে যদি কোনও বন্দির মৃত্যুদণ্ড ধার্য হয়, তবে সেই দণ্ড তাঁহাকে বুঝাইয়া দেওয়া যাইতেই পারে। কিন্তু যত দিন তাহা বলবৎ না হয়, তত দিন সেই বন্দির অন্য সব সুযোগসুবিধা বা অধিকারই ভোগ করা উচিত। ভারতীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত ভাবে একটি মানবিক বন্দোবস্ত। তাহার জেলখানাগুলিই বা স্বৈরাচারের নিগড় হইয়া থাকিবে কেন? যাঁহাদের দণ্ড দীর্ঘমেয়াদি কারাবাস কিংবা যাবজ্জীবন, তাঁহারাই বা বাহিরের খবর পাওয়া, সংবাদপত্র পাঠ, বই পড়া, গান শোনা, সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইবেন কোন যুক্তিতে? এ ধরনের সুযোগ যে তাঁহাদের সংশোধনেও সহায়ক হয়, তাহা তো প্রমাণিত। যাহারা বড়-সড় অপরাধের পাণ্ডা, মাফিয়া-ডন কিংবা আন্তর্জাতিক বা আন্তঃরাজ্য অপরাধচক্রের মাথা, জেলখানার অভ্যন্তরে তাহারা কিন্তু সব রকম সুবিধাই ভোগ করে, এমনকী সমান্তরাল কারা-প্রশাসন চালায়। কারা-কর্তৃপক্ষ তাহাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করিতে পারে না। সংশোধন যদি কিছু দরকার হয়, তবে তাহা এই দাগি অপরাধীদের যথেচ্ছাচার মঞ্জুরকারী কারা-প্রশাসনের দুষ্কৃতী-তোষণের বন্দোবস্তে, সাধারণ কিংবা রাজনৈতিক বন্দিদের প্রাপ্য সুযোগসুবিধার সঙ্কোচনে নয়। সন্ত্রাস বা রাষ্ট্রদ্রোহে ‘অভিযুক্ত’দের সহিত মানবিক আচরণেই গণতন্ত্রের অন্যতম সার্থকতা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.