উজানি ও নামনি অসমের পাশাপাশি আজ মেঘালয়ের পশ্চিম গারো হিল জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ল বন্যা। বন্যায় আজ অবধি অসমে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪। নিখোঁজ অন্তত ১০ জন। বন্যা কবলিতের সংখ্যা ২৯ লক্ষ ছাড়িয়েছে। নামনি অসমের বরপেটা, গোয়ালপাড়া, বঙ্গাইগাঁওতে জল কমতে শুরু করলেও ধুবুরিতে এখনও ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে। নামনি অসমে ৫ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে। সরকারি হিসেবে, বন্যা কবলিত ২০টি জেলার মধ্যে বাক্সা ও উদালগুড়িতে জল সরে গিয়েছে।
নামনি অসমে গদাধর নদীর জলের ধাক্কা ও ভূমিক্ষয়ে কানুরি গ্রাম থেকে ডিমাগুড়ির রাস্তা ও রহমতগঞ্জ থেকে গোলোকগঞ্জের রাস্তা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ভালুকমারি, সুন্দরপাড়া, ফকিরগঞ্জ, পঞ্চরত্ন, মেদেরতারি, জলেশ্বর, বুড়াবুড়ি, মোইসা, কুমারগঞ্জ, বিন্নাচরা, রাভাতারি, মোতিরচর, গাসপাড়া, নিউঘাট, শিশুমারায় ব্যাপক ভূমিক্ষয় চলছে। ব্রহ্মপুত্রের ভূমিক্ষয়ে ভারত-বাংলাদেশের বেড়াও ভেঙে পড়ার দশা। এ দিকে, অসমের পাশাপাশি মেঘালয়ের পশ্চিম গারো হিলেও বন্যা দেখা দিয়েছে। সমতল ও নীচু অংশগুলিতে গত রাত থেকে জল ঢুকে পড়ে। অবস্থা ক্রমেই সঙ্গীণ হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। |
গুয়াহাটি-সহ কামরূপ মহানগরের বিভিন্ন অংশ এখনও জলের তলায়। ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার উপরে। আপাতত ৪,৩২,৯৬৭ জন মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। মানুষের পাশাপাশি ছোটবড়ো মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। লখিমপুরে ছ’টি সড়ক, ৩টি সেতু, তিনসুকিয়ার শদিয়ায় ৮টি সেতু জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। বন্যার জল সরার পরেই, অবিলম্বে সড়ক, সেতু মেরামতি ও ভূমিক্ষয় রোধে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ত্রাণ শিবিরে খাদ্য, পানীয়, ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন গগৈ। বানভাসি অরণ্যগুলির পশুসম্পদ বাঁচাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়। গগৈ আজ মরিগাঁও জেলার বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মায়ং এলাকায় দুটি শিবিরে যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন খাদ্য ও গণ বন্টনমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, মৎসমন্ত্রী বসন্ত দাস, জেলাশাসক বিশাল সোলাঙ্কি। অবিলম্বে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার করা ও ত্রাণ বিলির উপরে জোর দেন তিনি। মায়ং-এ ১,৮২,১৯৮ জন মানুষ বন্যা কবলিত। খোলা হয়েছে ১৩২টি ত্রাণ শিবির। এর পর মুখ্যমন্ত্রী মরিগাঁও, দরং, শোণিতপুর, লখিমপুর ও ধেমাজি জেলার বন্যা পরিস্থিতি আকাশ থেকে দেখেন। সন্ধ্যায় যোরহাটে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে জলসম্পদমন্ত্রী রাজীবলোচন পেগুর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। কাল তিনি শিবসাগর, ডিব্রুগড় ও তিনসুকিয়া যাবেন।
বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় অরুণাচলের বন্যা পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে। লোয়ার দিবাং ভ্যালি ও লোহিতের কিছু অংশে যোগাযোগ স্থাপন করা গিয়েছে। তবে দিবাং, আনিনির প্রত্যন্ত এলাকাগুলি এখনও বিচ্ছিন্ন। নামসাই, তেজু, সুনপুরায় বিদ্যুৎ যোগাযোগ ফিরেছে। অরুণাচলের লোহিত জেলায়, স্বপ্না থাপা ও বাদাং চাই নামে দুই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে। লোহিতে পরিস্থিতি সামান্য উন্নত হলেও নামসাই, পাগলাম, ও পাসিঘাটে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। |