কয়লা ব্লক নেই বলে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের জমিতে আর ইস্পাত প্রকল্প গড়তে রাজি নয় শ্যাম স্টিল। কিন্তু শিল্পের জমিকে শিল্পের কাজেই লাগাতে চায় রাজ্য। প্রাথমিক ভাবে সেখানে বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার জন্য অনাবাসী বাঙালি ব্যবসায়ী প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের ইউনিভার্সাল সাকসেস-কে ওই জমি দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য। শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
রঘুনাথপুরে ইস্পাত প্রকল্প গড়তে জয় বালাজি, আধুনিক ও শ্যাম স্টিলকে তাদের চাহিদার কিছুটা করে জমি দিয়েছিল রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। শ্যাম স্টিল পেয়েছে ৬০০ একর জমি। জয় বালাজি ও আধুনিক পেয়েছে যথাক্রমে ১,০৯৪ ও ৫০৫ একর। তিনটি সংস্থার সঙ্গেই নিগমের জমির লিজ-চুক্তি হওয়ার কথা।
কিন্তু কয়লা ব্লক না-থাকায় শ্যাম স্টিল রঘুনাথপুরের জমি ফিরিয়ে দিতে চায় বলে গত মাসে নিগমকে চিঠি দিয়েছে। জমির জন্য তারা যে অর্থ অগ্রিম দিয়েছিল, সুদ-সহ তাও ফেরত চায় নিগমের কাছে। এ নিয়ে এ দিন চেষ্টা করেও শ্যাম স্টিল কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ দিন শিল্প দফতর ও নিগমের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিল্পমন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, “ওঁরা ওখানে প্রকল্প গড়বেন না। নিজেরাই জমি ফেলে রেখেছেন। এই অবস্থায় রাজ্য চুপ করে বসে থাকতে পারে না। ওই জমিকে শিল্পের জন্যই ব্যবহার করব।”
তিনি জানান, ইউনিভার্সাল সাকসেস বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার জন্য রাজ্যের কাছে প্রায় ৭০০ একর জমি চেয়েছিল। সে ক্ষেত্রে শ্যাম স্টিলের কাছ থেকে জমি ফিরিয়ে নিয়ে সেই জমি ও ওই শিল্প তালুক সংলগ্ন এলাকায় আরও কিছু জমি ওই সংস্থাকে দেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রস্তাবটি ক্যাবিনেট পর্যায়ে রয়েছে।” এ নিয়ে ইউনিভার্সাল সাকসেস-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও জবাব মেলেনি।
সরকারি সূত্রের খবর, এর আগে ফেলে রাখা জমি ফিরিয়ে নিয়ে অন্য সংস্থাকে দিয়েছে নিগম। কিন্তু এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে এত বড় মাপের কোনও প্রকল্পের জমি ফিরিয়ে অন্য সংস্থাকে বরাদ্দ করার ঘটনা, বিশেষ করে নতুন সরকারের আমলে এই প্রথম হবে।
উল্লেখ্য, ইউনিভার্সাল সাকসেস নয়াচরে ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্পের সঙ্গে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে চায়। আধুনিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য তাদের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা লগ্নির পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তাতে এখনও কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র মেলেনি।
তবে ওই এলাকাতেই প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা লগ্নি করে দুই পর্যায়ে ১,২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছে ডিভিসি। এ বছরের শেষেই ৬০০ মেগাওয়াটের প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার কথা। পরে আরও ৮০০০ কোটি লগ্নি করে দুই পর্যায়ে ১,৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এ দিন প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি নিয়ে সন্ধ্যায় শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডিভিসি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন।
শিল্পমন্ত্রী এ দিন সকালে বেঙ্গল চেম্বারের বার্ষিক সভায় ও পরে শিল্প দফতরে ফের বলেন, শিল্পের জন্য জমি নিয়ে ফেলে রাখা চলবে না। একই সঙ্গে শিল্পমহলের কাছেও আর্জি জানান, যিনি নিজে শিল্প গড়তে আগ্রহী নন, তিনি যেন জমি ফেলে রেখে অন্যদের পথে অন্তরায় না-হন। |