জমি গিয়েছে চুরি! তাও আবার আন্তর্জাতিক স্তরে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে কূটনৈতিক উদ্বেগ। সব মিলিয়ে কলম্বোর একটি জমি নিয়ে চিনা ‘আগ্রাসনে’ রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ভারত।
ঘটনা হল, কলম্বোয় একটি স্থায়ী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (‘ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার’) তৈরির জন্য কিছু দিন ধরেই জমি খুঁজছিল ভারত। শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথাও হয়। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী প্রণিত কৌরের কথায়, “শ্রীলঙ্কা কথা দিয়েছিল যে আমাদের একটি সরকারি জমি দেওয়া হবে।” একটি জমি বাছাইও করা হয়। কিন্তু ভারতকে কার্যত অন্ধকারে রেখে সেই জমি চিনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ভারত ওই জমি বাছাই করার পর তার ছাড়পত্র দিতে বেশ কিছু দিন ধরে টালবাহানা করছিল প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকার। কলম্বোর ‘ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টারের’ এক কর্তা জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সালে তৈরি হওয়া এই সেন্টার গোড়া থেকেই রয়েছে ভাড়া বাড়িতে। কিন্তু, সেখানে পরিকাঠামোগত বিভিন্ন অসুবিধা থাকায় এক বছর ধরে সেন্টারটিকে অন্য জায়গায় সরানোর চেষ্টা চলছিল। সে জন্য বাছাই করা জমি চিনা সংস্থার হাতে যাওয়ায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি। ভারতে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে অসন্তোষের কথা জানানোও হয়েছে।
সাউথ ব্লকের কর্তাদের বক্তব্য, বিষয়টি নিছক জমি হারানোর নয়। এই ঘটনার তাৎপর্য যথেষ্ট গভীর। চিনের যে সংস্থাটি এই জমি কিনেছে তার নাম ‘অ্যাভিক ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কর্পোরেশন’। এটি চিনের সামরিক বিমান প্রযুক্তি সংস্থা। শ্রীলঙ্কায় ক্রমশই সামরিক পরিকাঠামো বাড়াচ্ছে চিন। সে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের হাম্বানতোতা শহর গত কয়েক বছরে পরিণত হয়েছে একটি বিশাল বন্দরে। পুরোটাই ঘটেছে চিনা বিনিয়োগে।
ভারত মহাসাগরে বিভিন্ন ঘাঁটি তৈরি করে ভারতকে ঘিরে ফেলার যে কৌশল (‘স্ট্রিং অব পার্লস’) বেজিং নিয়েছে, এ সব তারই অঙ্গ বলে মনে করা হচ্ছে। কলম্বোর এই সাম্প্রতিক জমি কাণ্ড যথেষ্টই ভাবিয়ে তুলেছে নয়াদিল্লিকে। গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক সহজ নয় মনমোহন সিংহ সরকারের। তামিলদের পুনর্বাসন এবং তামিল সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দরবার করে আসছে নয়াদিল্লি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উপরে চাপ রয়েছে ডিএমকে-র মতো দলগুলির।
এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কা প্রকাশ্যেই চিনের হাতে তামাক খাওয়ায় কৌশল নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে নয়াদিল্লি। |