সুব্রতকে চিঠি জয়রামের
‘অসংযত’ আক্রমণ, তবু বঞ্চিত হবে না রাজ্য
উপিএ-সরকার ছাড়ার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু দিল্লিকে নয়, প্রধানমন্ত্রীকেও নিশানা করছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘অসংযত আক্রমণ’ সত্ত্বেও কেন্দ্র কিছুতেই পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনা করবে না বলে জানালেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। গ্রামোন্নয়ন থেকে অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন যেখানে যে প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের যতটা অর্থ পাওয়ার কথা, ততটাই পাবে রাজ্য। আজ পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে একই কথা জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
বাম জমানায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বারেবারেই সরব হয়েছেন জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা। কিন্তু মমতাও যাতে সেই অভিযোগ তুলতে না পারেন, সে জন্যই এই পাল্টা কৌশল কংগ্রেস তথা ইউপিএ-সরকারের। চিঠিতে জয়রাম সুব্রতবাবুকে লিখেছেন, “সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে অসংযত মৌখিক আক্রমণ সত্ত্বেও আমি আশ্বস্ত করতে চাই, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দিতে থাকবে।”
জয়রাম চিঠিতে যা লিখেছেন, প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সে কথাটাই জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি সরকার ‘খোলা মনে’-ই বিবেচনা করছে। সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যে থেকেই কেন্দ্র সাহায্য করতে চায়। সরকারের তরফে এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দলকেও মাঠে নামাচ্ছে কংগ্রেস। এআইসিসি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, মমতা বামেদের সুরেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফায়দা নিতে চান। তাই রাজ্য কংগ্রেসকে পাল্টা প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছে হাইকম্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা থেকে একশো দিনের কাজ, পানীয় জলের প্রকল্প থেকে জঙ্গলমহলের তিন জেলার জন্য বিশেষ সাহায্য, কোথায় কোন প্রকল্পে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে কত টাকা দিচ্ছে, সেই পরিসংখ্যান তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সব তথ্যপ্রমাণ নিয়ে পুস্তিকা তৈরি করে পাল্টা প্রচারে নামবে রাজ্য কংগ্রেস। উদ্দেশ্য, মমতার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগকে ভোঁতা করে দেওয়া।
পশ্চিমবঙ্গের তিনটি মাওবাদী অধ্যুষিত জেলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্র কী ভূমিকা নিয়েছে, তা জানাতে ১৬ অক্টোবর লালগড়ে যাচ্ছেন জয়রাম। তার ঠিক আগে আজ রাজ্যের গ্রামগুলির সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে তাঁর মন্ত্রক। আজ সুব্রতবাবুকে লেখা চিঠিতেই এ কথা জানিয়ে জয়রাম বলেছেন, এই সম্পর্কে রাজ্যের কাছে যে সব ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তা পেয়ে গেলে দু’তিন সপ্তাহের মধ্যেই অর্থ বরাদ্দে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।
কেন্দ্রের কৌশল ভোঁতা করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যও। সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা এমনিতেই রাজ্যের প্রাপ্য। সুব্রতবাবুর অভিযোগ, প্রাপ্য অর্থ পেতেই রাজ্যকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। যা জেনে জয়রামের পাল্টা যুক্তি, আজ তিনটি মাওবাদী অধ্যুষিত জেলায় ২৫৯৮ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরির জন্য ১৪৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ৮৪১ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নে ৫২৪ কোটি টাকা দেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য উদ্যোগী হলে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় আরও অর্থ পেতে পারে। কারণ এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ ১১ হাজার ৩৭৫ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নের জন্য অর্থ পাওয়ার যোগ্য।
চিদম্বরমকেও জঙ্গলমহলে যাওয়ার জন্য আজ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রদেশ নেতৃত্ব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন চিদম্বরম জঙ্গলমহলে গিয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতারা চাইছেন, এ বারে তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে গিয়ে নিজের মুখেই রাজ্যের অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নে কেন্দ্রের ভূমিকার কথা জানান। তাঁদের যুক্তি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে মমতা কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামলে বা সংস্কারের বিরুদ্ধে যন্তর-মন্তরে ধরনায় সামিল হলে তাঁর নিজের রাজনৈতিক লাভ হতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষের লাভ হবে না। তাই পশ্চিমবঙ্গের জন্য যত বেশি সম্ভব অর্থ আদায় করতে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত মমতার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.