পরিকাঠামোর অভাব সদর হাসপাতালে,
প্রসূতির তুলনায় চিকিৎসক কম
রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হয় নদিয়া জেলা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগকে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন বহু রোগীকে ‘রেফার’ করে পাঠানো হয় জেলাসদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে। তার মধ্যে বহু প্রসূতি একেবারেই মুমূর্ষু অবস্থায় আসে।
১৯৯১ সালের সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে ওই বিভাগের শয্যা সংখা ৯৫। কিন্তু হাসপাতালে আড়াইশো থেকে তিনশো রোগী ভর্তি থাকেন। এই বিশাল সংখ্যক রোগীর সুচিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো ওই হাসপাতালে নেই। আর সেই নেই-এর তালিকায় আছে শয্যা থেকে শুরু করে চিকিৎসকও। শয্যার অভাবে একই বেডে দু’জন প্রসূতি ও দু’জন সদ্যোজাত শিশুকেও রাখা হয়।
প্রসূতিদের বাড়ির লোকের দাবি, তারা কষ্টটুকু সহ্য করতে রাজি, যদি চিকিৎসাটুকু ঠিক মতো হয়। আর সেটা নিয়েই জেলা সদর হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বারবার। কখনও কোনও চিকিৎসক কোনও অন্তঃসত্ত্বার পেট চিরে সন্তান নয়, সন্ধান পেয়েছেন ‘গ্যাস’-এর। তার সাত দিন পরেই অবশ্য সেই মহিলাই মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। কখনও বা অবস্থা গুরুতর বলে প্রসূতিকে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করেছেন চিকিৎসক। শহরের নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে টাকার জন্য বিতাড়িত হয়ে ফেরত আসা সেই প্রসূতিকে রাস্তায় ছটফট করতে দেখে স্থানীয় কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী তাঁকে আবার একই হাসপাতালে নিয়ে গেলে চাপে পড়ে ওই চিকিৎসকের হাতেই সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন সেই মহিলা। এ ভাবেই বার বার খবরের শিরেনামে উঠে এসেছে জেলাসদর হাসপাতাল।
প্রায় দিনই চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতি বা সদ্যজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কেন এমন হয়? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রসূতি বিভাগের কর্তব্যরত এক চিকিৎসকের দাবি, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক কম থাকার কারণেই চিকিৎসকের উপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। আর কখনও কখনও চিকিৎসকেরা সেই চাপ নিতে পারেন না। ফলে মাঝে মধ্যেই অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে যায় চিকিৎসকদের। কর্তব্যরত এক চিকিৎসক বলেন, “কখনও কখনও রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিনশো হয়ে যায়। কিন্তু ওই রোগীর চিকিৎসার মতো পরিকাঠামো নেই। বেডের সংখ্যা রোগীর সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। তার উপরে চিকিৎসক নেই। একজন মাত্র রেডিওলজিস্ট থাকায় বিকালের পর ইউএসজি হয় না। তখন যাবতীয় চিকিৎসা, জরুরি অস্ত্রোপচার সাধারণ জ্ঞান বা আন্দাজের উপর ভর করেই করতে হয়।” তিনি বলেন, “এ সব কারণে অনেক সময়ই ভুল করে ফেলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোক এত কিছু বোঝেন না। তাঁরা চিকিৎসকের উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়েন। মারধর করেন।”
জেলা সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে এখন চিকিৎসকের সংখ্যা ৬। এর মধ্যে এক জনের বদলির নির্দেশ চলে আসায় চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫ জনে। চিকিৎসকদের দাবি, ৫ জনের পক্ষে সাড়ে তিনশো প্রসূতির চিকিৎসা সম্ভব নয়। যদিও চিকিৎসকের ওই দাবি মেনে নিতে রাজি নন অনেকেই। তাঁদের দাবি, চিকিৎসকেরা নিজেদের সুবিধার জন্য এই চাপ নেন। কারণ, তাঁদের দাবি, চিকিৎসকরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে রাখেন। এক জন চিকিৎসক একদিনে রোগী ভর্তি, বহির্বিভাগ, অন কল সামলানোর পাশাপাশি সেই দিনের জরুরি অস্ত্রোপচারও করেন। বাকি দিন গুলো গুরুত্ব অনুযায়ী অস্ত্রোপচার ও রাউন্ড দেন। ফলে তাঁরা এক দিন করেই চাপ নেন। তাঁরা যদি এক দিনে ভর্তি, বহির্বিভাগ না সামলাতেন এবং যদি টানা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি না করে ১২ ঘণ্টা করে দু’জন সেটা ভাগ করে নিতেন তবে এক এক জনের উপরে চিকিৎসকের উপর এমন চাপ পড়ত না। এক জন চিকিৎসককে এক দিনে এতগুলো করে সিজার করার চাপ নিতে হত না।

অভিযোগ সাফাই
• ‘অন্তঃসত্ত্বা’র পেটে অস্ত্রোপচারে
মিলেছিল ‘গ্যাস’।
• শয্যা রয়েছে ৯৫টি। গড়ে রোগী
থাকেন আড়াইশো-সাড়ে তিনশোরও বেশি।
• অস্ত্রোপচারের সময় সদ্যোজাতের মাথায়
আঘাত। মারা যায় ওই সদ্যোজাত।
• চিকিৎসক রয়েছেন গড়ে মাত্র ৫ জন।
• কলকাতায় ‘রেফার’ করার কিছুক্ষণের
মধ্যেই সন্তানের জন্ম দেন প্রসূতি।
• রেডিওলজিস্ট একজন।
• একাধিকবার রোগীকে মারধরের অভিযোগ। • আগুন লাগার কারণ যান্ত্রিক ত্রুটি।
• ওয়ার্ডে দু’বার আগুন। • হাতুড়ের কবল থেকে উদ্ধার পেয়ে শেষ
মুহূর্তে হাসপাতালে আসেন অনেক প্রসূতি।

হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা কমিটির নদিয়া জেলা সভাপতি দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “রোগীর সংখ্যার তুলনায় চিকিৎসক কম আছেন এটা ঠিক কথা। কিন্তু এটাও ঠিক যে, নিজেদের স্বার্থেই চিকিৎসকেরা এক দিনে সমস্ত দায়িত্ব পালন করে দায় সারেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়।” তিনি বলেন, “আসলে সপ্তাহের বাকি দিন গুলো নিশ্চিন্তে নিজের চেম্বার সামলানোর জন্য চিকিৎসকরা এটা করে থাকেন। আর তার জন্য চিকিৎসার গাফিলতি বা ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হয় দরিদ্র মানুষকে।”
হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দত্ত বলেন, “ডাক্তারদের এক দিনে সব দায়িত্ব পালনের রীতি দীর্ঘ দিন ধরে এই হাসপাতালে চলে আসছে। সেটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আস্তে আস্তে সেটা করাও হচ্ছে। চিকিৎসকদের পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, ভর্তি ও বহির্বিভাগ একদিনে করা চলবে না।” তিনি বলেন, “ভর্তির বিষয়টিও ১২ ঘণ্টা করে দু’জন চিকিৎসকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। তাতে চিকিৎসকেরা কম চাপে রোগীদের ভাল পরিষেবা দিতে পারবেন।”
রাজ্যের উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি। তিনি বলেন, “রাজ্যে নতুন সাতশো চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। তার পর ওই হাসপাতালে আর চিকিৎসক সমস্যা থাকবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.