ডিজেল ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাই এবং খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের পাশে দাঁড়ালেন প্রবীণ সিপিআই নেতা তথা সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মমতা ইউপিএ থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ায় মানুষের আন্দোলন ‘শক্তিশালী’ হবে। এফডিআই-প্রশ্নে সিপিএম ও নিজের দল সিপিআই নেতৃত্বের বিজেপি-র সঙ্গে একমঞ্চে যাওয়ার ঘটনাকেও সমর্থন করছেন না গুরুদাসবাবু।
খুচরো ব্যবসায় এফডিআইয়ের বিরোধিতায় দশ বছর ধরে সরব বামেরা। এখন তৃণমূল নেত্রী সেই প্রশ্নে সরব হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের ‘প্রাসঙ্গিকতা’ বাড়িয়ে তুলে বামেদের পালের হাওয়া কি কেড়ে নিচ্ছেন? এই প্রশ্নের জবাবে এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাসবাবু বুধবার কলকাতায় বলেন, “মমতা ইউপিএ থেকে সরে গিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তাঁর সঙ্গে অনেক মতবিরোধ আছে, থাকবেও। কিন্তু এফডিআই বা পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তাঁর প্রতিবাদের ফলে মানুষের আন্দোলন শক্তিশালী হবে।” একই সঙ্গে সিপিআই সাংসদের বক্তব্য, “কেউ কারও পালের হাওয়া কাড়তে পারে না। মানুষ জানেন, আমরা ১০ বছর ধরে এ সবের বিরোধিতা করছি। আমি বিশেষ বিতর্কে যেতে চাই না।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে ভাবে এই প্রশ্নে অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলছেন, তাকেও ‘ভাল উদ্যোগ’ বলে মন্তব্য করেছেন গুরুদাসবাবু।
এফডিআই-প্রসঙ্গের উল্লেখ করেই গুরুদাসবাবু এ দিন বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, আর্থিক নীতির প্রশ্নে কংগ্রেস এবং বিজেপি-র কোনও ফারাক নেই। তা হলে এফডিআই নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে বিজেপি-র নিতিন গড়কড়ী, মুরলী মনোহর জোশীদের সঙ্গে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআইয়ের এ বি বর্ধন এক মঞ্চে গিয়েছিলেন কেন? গুরুদাসবাবুর জবাব, “কেন রাজনৈতিক নেতারা বিজেপি-র সঙ্গে গিয়েছিলেন, এর উত্তর দিতে পারব না। তবে বিজেপি-র সঙ্গে এক মঞ্চে না-যাওয়াই ভাল। যতটুকু জেনেছি, একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের ডাকে ওঁরা গিয়েছিলেন। তাও বলছি, বিজেপি-র সঙ্গে এক মঞ্চে যাওয়াটা আমার কাছে অভিপ্রেত নয়।” প্রসঙ্গত, আগামী ২০-২১ ফেব্রুয়ারি ১১টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন দেশে দু’দিনের যে সাধারণ ধর্মঘটের (যার জেরে রেল, বিমানে জ্বালানি সরবাহ, বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যন্ত স্তব্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি আছে) ডাক দিয়েছে, তাতে গুরুদাসবাবুর এআইটিইউসি বা সিপিএমের সিটুর সঙ্গে সামিল বিজেপি তথা সঙ্ঘ-প্রভাবিত বিএমএস-ও।
মমতার যে অবস্থানকে এ দিন সিপিআই সাংসদ ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন, সেই প্রতিবাদকেই রাজ্যে আরও প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিতে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাব আনছে তৃণমূল। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিদেশি সংস্থা তো বটেই, দেশি সংস্থার আড়ালেও যাতে বিদেশি পুঁজির ‘অনুপ্রবেশ’ না-ঘটে, তার প্রতিবাদ তাঁরা জানাতে চান এই প্রস্তাবে। যেমন তাঁরা করেছিলেন ২০০৭ সালে বিরোধী দলে থাকার সময়ে। অধুনা বিরোধী বামফ্রন্টও এফডিআইয়ের বিরুদ্ধে। তবে তৃণমূলের প্রস্তাবে তারা আজ কিছু সংশোধনী আনতে চায়, যার মধ্যে সরাসরি ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চাপে’র কথা উল্লেখ করা হতে পারে। তৃণমূল সরাসরি সেই কথা বলতে রাজি কি না, পরখ করে দেখতে চায় বামেরা। প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তাঁদের অবস্থান কী হবে, তা চূড়ান্ত করতে আজ, বৃহস্পতিবার সকালে আলোচনা করার কথা রাজ্য বাম নেতাদের। তবে বামফ্রন্টই কেন বিধানসভায় আগে এই ধরনের প্রস্তাব আনল না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে বাম শিবিরে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, তাঁদের দাবি সত্ত্বেও বেসরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য আলাদা দিন ধার্য করা হয়নি। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের প্রস্তাব হুবহু মেনে নেওয়া সম্ভব নয় কংগ্রেসের পক্ষে। তারা বরং দেখাতে চাইবে, তৃণমূল এবং সিপিএম কী ভাবে এক সুরে কথা বলছে। অর্থাৎ এফডিআই-কে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সচেষ্ট সব শিবিরই। |