ফের প্রশ্ন উঠল নিরাপত্তা নিয়ে
‘আনন্দমঠ’ হোম থেকে উধাও দুই কিশোরী
ফের বিতর্কের কেন্দ্রে পুরুলিয়ার সরকারি হোম ‘আনন্দমঠ’। এ বার হোমের ঘেরাটোপ থেকে নিখোঁজ হল বাঁকুড়ার দুই কিশোরী আবাসিক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দু’জনের নাম প্রিয়াঙ্কা রায় ও টুম্পা ঘোষ। প্রথম জন বাঁকুড়া সদর এবং টুম্পা গঙ্গাজলঘাটি থানা এলাকার বাসিন্দা। দু’জনেই চলতি সেপ্টেম্বরে বাঁকুড়া আদালতের নির্দেশে পুরুলিয়া শহরের উপতণ্ঠে শিমুলিয়ার ‘আনন্দমঠ’ হোমে আসে। বুধবার সকালে হোম কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, ওই দু’জন উধাও।
হোমের সুপার ডালিয়া আচার্য বলেন, “আবাসিকদের সকালে জল নেওয়া, বাসন ধোওয়া-সহ বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব থাকে। অল্পদিন হোমে এলেও এই দু’জনের উপরে কিছু কাজের দায়িত্ব ছিল। সকালে ওদের অনুপস্থিত দেখে খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি।” সকাল থেকে আবাসিক উধাওয়ের খবর জানলেও পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করতে করতে এ দিন বিকেল গড়িয়ে দেন হোম কর্তৃপক্ষ।
থাকার পরিবেশ নেই, খাবারের মান খারাপ, শিশুরা দুধ পায় না, পর্যাপ্ত আলো নেইআনন্দমঠ হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন নানা অভিযোগ তুলে গত ১৯ জুন হোমের ৪২ জন আবাসিক মেয়ে রাস্তায় নেমে এসে বিদ্রোহ দেখিয়েছিলেন। পাঁচ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া শহরে এসে আবাসিকেরা জেলা আদালতের বারান্দায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখান। আবাসিক-বিদ্রোহের জেরে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। হোমের সংস্কারকাজ শুরু হয়। তৈরি হয় নজরদারি কমিটিও।
সংস্কারের জন্য হোম চত্বরে বাঁধা হয়েছে বাঁশ। প্রশাসনের অনুমান,
এই বাঁশ বেয়েই পালিয়েছে দুই আবাসিক। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।
তার পরেও দুই আবাসিকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ওই সরকারি হোমের অবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বস্তুত, হোমের নানা অব্যবস্থার ফাঁক গলেই ওই দুই কিশোরী পালিয়েছে বলে মনে করছে প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রের খবর, বর্তমানে হোমে ৮৫ জন আবাসিক (‘ভিকটিম গার্ল’) রয়েছেন। তাঁদের সকলেরই থাকার ব্যবস্থা দোতলায়। নীচে নামার দরজা রাতে বন্ধ থাকে। তাহলে কী ভাবে দু’জন উধাও হয়ে গেল? সুপার বলেন, “এখন সংস্কারের কাজ চলছে। তার জন্য বাঁশ বাঁধা রয়েছে। সব দেখে শুনে মনে হয়েছে বাঁশ বেয়েই ওরা নীচে নেমে পালিয়েছে। পালানোর জন্য ওরা ভোরবেলার সময়টা বেছেছে।” দু’জনেরই পরনে শাড়ি ছিল বলে সুপার জানান।
ঘটনা শুনে এ দিন হোমে সরজমিনে তদন্তে যান পুরুলিয়ার মহকুমাশাসক (সদর) শঙ্কর নস্কর ও জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক স্বপন মুখোপাধ্যায়। তাঁরা আবাসিক-সহ বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন। মহকুমাশাসক বলেন, “সংস্কারের কাজের জন্য বারান্দায় ভিতরে ও বাইরে বাঁশ বাঁধা রয়েছে।
সেখানে গ্রিল বসানোর ফাঁক রয়েছে। কথা বলে ও ঘটনাস্থল দেখে মনে হয়েছে, সেই ফাঁক গলে নীচে নেমে পালিয়ে যেতে পারে।” হোমের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে গলদ রয়েছে, এ দিন ফের তা প্রমাণিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ মহকুমাশাসক। তাঁর কথায়, “নানা অব্যবস্থা রয়েছে ওখানে। নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বলছেন কেউ কিছু জানেন না। কিন্তু, কেউ তো দায়িত্বে ছিলেন! তিনি দায় এড়াতে পারেন না।”
জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা হোমের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁদের ব্যর্থতার জন্যই এমন ঘটনা। কেন পরপর হোমে বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে থাকবে?” হোমের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি বলেন, “মহকুমাশাসককে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূর্ত দফতর যদি সংস্কারের কাজ করে থাকে এবং তার জন্য বাঁশ বাঁধার প্রয়োজন হয়, তা বাঁধতে হবে। কিন্তু সেখানে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। নিরাপত্তার গাফিলতি এ বার কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.