রাস্তার ধারে শোয়াটাই কাল হল চারজনের
সারা দিনের কাজের শেষে রোজকার মতো রাস্তার ধারেই শোয়ার আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। জানতেন রাতে কী বিপদ অপেক্ষা করে আছে তাঁদের জন্য। আর তাই যখন ভোরের আবছা আলোয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘাতক ট্রাক তাঁদের চারজনকে পিষে দিল তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন তাঁরা।
বুধবার ভোরে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির নদিয়া চটকলের কাছে ঘোষপাড়া রোডে ওই ঘটনায় মারা গিয়েছেন তারক সাউ (৫৩), প্রকাশ সাউ (৩২) এবং ধীরাজ মিশ্র (১২)। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় একজনের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান দু’জন। এদের একজন স্কুল ছাত্র। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও একজন। নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয় দিনেশ মাহাতো নামে বছর পঁয়তিরিশের এক যুবককে। দুর্ঘটনায় পাট বোঝাই ট্রাকটি উল্টে গেলেও চালক ও খালাসি পালিয়ে যায়। এই ঘটনার জেরে সকাল থেকেই ঘোষপাড়া রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারাও এই ঘিঞ্জি রাস্তায় ট্রাফিক সমস্যা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে নেমে পড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বললে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মৃত তারক সাউ, প্রকাশ সাউ ও ধীরাজ মিশ্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ও আহতেরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। ধীরাজ নৈহাটির লিচুবাগান আনন্দস্বরূপ হাইস্কুলের ছাত্র। তারকবাবু আখের রস বিক্রেতা। প্রকাশ রিকশা চালাতেন এবং দিনেশ ফেরিওয়ালা। প্রতিদিনের মতো ওই চারজন মঙ্গলবার রাতেও রাস্তার ধারে হনুমান মন্দিরের চাতালে এবং পাশে খাটিয়া পেতে শুয়েছিলেন। ভোর চারটে নাগাদ হালিশহরের দিক থেকে জগদ্দলগামী একটি পাট বোঝাই ট্রাক দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় নদিয়া চটকলের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে বিদ্যুতের স্তম্ভে ধাক্কা মারে। এরপর হনুমান মন্দিরের চাতালে উঠে উল্টে যায়। ট্রাকের ধাক্কায় একটি গুমটি ও প্রকাশের রিকশাও চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যায়। ট্রাকের নীচে চাপা পড়েন চারজনই। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তারকবাবুর। বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ দিকে ট্রাকটি রাস্তার উপরেই উল্টে যাওয়ায় অন্য গাড়িগুলিও আটকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারাই ওই চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ দিকে জনবহুল ঘোষপাড়া রোডে নিয়মিত দুর্ঘটনা ও নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে বাসিন্দারা বিক্ষোভে নেমে পড়েন। ফলে সাতসকালে রাস্তায় যান চলাচল আটকে যায়।
উল্টে যাওয়া সেই ট্রাক।
বাসিন্দারা জানান, সকলেই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের। মূলত বিহার ও উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা হলেও এঁরা কর্মসূত্রে এখানে থাকেন। রাস্তার ধারেই রাতে ঘুমোন। স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ সাউ বলেন, ‘‘আমিও কিছু দূরে শুয়েছিলাম। আওয়াজ পেয়ে দেখি ট্রাকটা উল্টে গিয়েছে। চারজনকেই ট্রাকটা পিষে দিয়েছিল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল দেহগুলো। হনুমান মন্দিরের চাতালের নীচেই পড়েছিল রক্তে মাখামাখি ধীরাজের দেহ। চেষ্টা করেও হাসপাতাল অবধি ওকে পৌঁছতে পারলাম না। তার আগেই মারা গেল।’’
ব্যারাকপুরের এডিসি শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ট্রাকমালিককে ডাকা হয়েছে। চালক ও খালাসির খোঁজ চলছে। কী ভাবে লরিটি নিয়ন্ত্রণ হারাল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

ছবি: বিতান ভট্টাচার্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.