সম্মেলন সরিয়ে নিয়ে পাল্টা আঘাত কেন্দ্রর
লকাতা থেকে আগরা। সমর্থন প্রত্যাহারের পাঁচ দিনের মধ্যে ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’ মমতার রাজ্য থেকে সরে মুলায়মের রাজ্যে চলে গেল। এবং তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, এই স্থানবদল কি রাজনৈতিক? নাকি তৃণমূলের বিদেশি লগ্নি নিয়ে ছুঁতমার্গই দিল্লিকে বাধ্য করল ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’ সরিয়ে নিয়ে যেতে?
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বোঝাতে আজ মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মা। যুক্তির সঙ্গে তাঁর কথায় ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো সামালোচনাও। কোনও রাখঢাক না করে আনন্দ শর্মার বক্তব্য, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কলকাতার পরিবেশ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পক্ষে অনুকূল নয়। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে
রাস্তায় নেমে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারে না কেন্দ্র।”
যুব কংগ্রেসে তাঁর এক সময়কার সহযোদ্ধা যে এখন তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র বাগিয়ে নেমে পড়েছেন, তাতে মমতা কী বলছেন? মহাকরণে মমতা বলেন, “সব বোগাস। কলকাতায় সম্মেলন করতে চেয়ে কোনও চিঠিই আসেনি। এখন যা বলা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ প্রতিহিংসা থেকে।” পাশেই ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁকে ‘সাক্ষী রেখে’ মমতা বলেন, “অমিতদাকে জিজ্ঞাসা করুন না, এই রকম কোনও চিঠি (কেন্দ্র) রাজ্য সরকারকে দিয়েছে কি না। তা হলে সম্মেলন সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?” যদিও কলকাতাকে সম্মেলনের জন্য বাছা হয় বলে কার্যত মেনে নিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন করেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে এমন কী ঘটল যে শিল্প সম্মেলন সরিয়ে নিয়ে যেতে হল?”
ঘটনা হচ্ছে, গত নভেম্বরে হাওড়ায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন আনন্দ শর্মা। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সে দিনই তিনি জানান, বিদেশি লগ্নিদের নিয়ে কলকাতায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে ঘরোয়া বিনিয়োগকারীদের নিয়েও ২০১৩ সালে এই শহরে আর একটি সম্মেলন হবে। কিন্তু বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহারের পর সেই সিদ্ধান্ত রাতারাতি বদলে ফেলেছেন তিনি। আগরায় ওই সম্মেলন করার ব্যাপারে গত কালই তিনি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে চিঠি লিখে প্রস্তাব দেন। অখিলেশ সঙ্গে সঙ্গে তা লুফে নেন।
কিন্তু একে কোনও ভাবেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলতে নারাজ আনন্দ শর্মা। তাঁর কথায়, “প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে না কংগ্রেস। বরং বিদেশি পুঁজি টানতে পশ্চিমবঙ্গের পাশেই থাকতে চেয়েছিল কেন্দ্র।” তাই বিদেশি লগ্নি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য যে তিনি কলকাতায় আসেন, আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার প্রস্তাব দেন, সে কথা জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, “তবে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির যে উগ্র বিরোধিতা করছেন মমতা, তার পর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে ফেলার অর্থ হয় না।”
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের সঙ্গে এই সম্মেলনটি যৌথ ভাবে আয়োজন করে বণিকসভা সিআইআই। তারা কিন্তু অবস্থান বদলের সিদ্ধান্ত নিজেদের ঘাড়ে নিতে নারাজ। সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান হলেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী। কোথায় সম্মেলন হবে, সে ব্যাপারে তিনি তথা সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।” ঘটনার আঁচ যাতে সিআইআই-এর ওপর এসে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে তিনি এ-ও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সিআইআই-এর অ্যাজেন্ডায় রয়েছে। সেখানে বিনিয়োগের সুযোগও রয়েছে। আমরাও চাই সেখানে বিনিয়োগ আসুক।” রাজ্যের শিল্পমহলের একাংশের অবশ্য স্পষ্ট মত, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সমীকরণ বদলেছে বলেই অবস্থানও বদলেছে সম্মেলনের। যদিও এই মতের সঙ্গে নেই ভারত চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট অশোক আইকত। বরং তিনি মনে করেন, কলকাতায় সম্মেলন করার সিদ্ধান্তই ছিল রাজনৈতিক। তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে কোথাও রাজনীতি নেই।
রাজনীতি না অন্য কারণ, এই বিতর্কের মধ্যে এ দিন আরও প্রশ্ন ওঠে, মুলায়মও তো খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছেন, তা হলে আগরায় সম্মেলন সরানো হল কেন? জবাবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “মমতা যেমন সব ধরনের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে, মুলায়ম তেমন নন। বরং মুলায়ম অনেক পরিণত ও দূরদর্শী।” কিন্তু মমতা তো বিমান ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি নিয়ে আপত্তি করেননি? এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে আনন্দ শর্মার বক্তব্য, “অখিলেশ যাদবের সঙ্গে আজ কথা হয়েছে। তিনি কেন্দ্রের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।” এত রাজ্য থাকতে উত্তরপ্রদেশই বা কেন? মন্ত্রীর জবাব, “উত্তরপ্রদেশ বড় রাজ্য। আগরায় এই সম্মেলন নিয়ে যাওয়াটা ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরই জয়।”
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহারের পর এখন মুলায়মের ওপর নির্ভরশীল ইউপিএ সরকার। তাই তাঁকে খুশি করার প্রয়াস আনন্দ শর্মার পদক্ষেপে প্রতিফলিত হচ্ছে। কংগ্রেস অবশ্য এ ব্যাপারে আজ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, রাজনীতিতে এমনই হয়। যত ক্ষণ বন্ধু রয়েছ, তত ক্ষণ বন্ধুতা। মুলায়ম পরে সুযোগ বুঝে বেঁকে বসতেই পারেন। কিন্তু এই মুহূর্তে কংগ্রেসের তাঁকে প্রয়োজন। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাজ্য কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। তবে মমতাই এর জন্য দায়ী।”
কেন্দ্রের প্রস্তাব পেয়ে সপা-ও উচ্ছ্বসিত। বিশেষ করে অখিলেশ। আনন্দ শর্মা তাঁকে বুঝিয়েছেন, আগরায় ওই সম্মেলন হলে উত্তরপ্রদেশের জন্য বিনিয়োগের দরজা খুলে যাবে। চলতি বছরের গোড়ায় হায়দরাবাদে ওই সম্মেলন হয়। বিদেশি লগ্নিকারীদের সঙ্গে অন্ধ্র সরকার ওই সম্মেলনে ৬ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের চুক্তি সই করে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্যের পরিকাঠামো বিদেশি লগ্নিকারীদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া যাবে এ বার। বিশেষ করে আগরায় সম্মেলন হলে তাজ এক্সপ্রেসওয়ের মতো পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সাফল্য বিদেশি লগ্নিকারীদের নজরে পড়বে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.