এই গল্প এক সিনেমা-পাগল বালকের। আর এক নাটকের দলের।
দিন কয়েক আগে পঞ্জাবের ফরিদকোটে নাটক করতে এসেছিল আজুকা নাট্যগোষ্ঠী। সুফি সন্ত বাবা ফরিদের জন্মোৎসব উপলক্ষে তাদের আমন্ত্রণ জানান ফরিদকোটের ডেপুটি কমিশনার রবি ভগত। নাটকের নাম ‘বুল্লা’। যে দ্বিপাক্ষিক সম্প্রীতির ছোঁয়া ছিল ডেপুটি কমিশনারের আমন্ত্রণে, তা অন্য এক মাত্রা পেল জেলার দায়রা বিচারক অচর্না পুরীর অনুরোধে।
কী অনুরোধ? অচর্না পুরী ‘আজুকা’র পরিচালক মদিহা গওহরকে জানান, বছর খানেক আগে এক পাকিস্তানি বালক সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে পড়ে। নাম কাসিফ আলি। বয়স তেরো। বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনি। ফরিদকোটের জুভেনাইল হোমে রাখা হয়েছে তাকে। মদিহা যদি পাকিস্তানে ছেলেটির ঠিকানা ও বাড়ির লোকেদের খুঁজে দেওয়ার জন্য সাহায্য করেন।
ফরিদকোটের জুভেনাইল হোমে গওহর ওই ছেলেটির সঙ্গে দেখা করেন। কথা বলে জানতে পারেন তার পুরো নাম কাসিফ আলি। গওহর ও থিয়েটার দল কাসিফের একটা ভিডিও করেন। গওহরের উদ্যোগেই সেই ভিডিও গতকাল পাকিস্তানের একটি খবরের চ্যানেলে দেখানো হয়। পাক পঞ্জাবের পুলিশ অনেক দিন ধরেই ‘নিখোঁজ’ কাসিফের সন্ধানে ছিল। গওহরদের তোলা ভিডিও দেখে তারা কাসিফকে চিনতে পারে, এবং তার মা কুলসুম বিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে। আজ কুলসুম ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন গওহর। জানতে পারেন আসিফের ‘কাহিনি’।
কোথায় বাড়ি কাসিফের? কেনই বা সীমান্ত পার হয়ে এ দেশে চলে এল? এ ব্যাপারে কাসিফ কিছু না বললেও তার এক ভাই গওহরকে জানিয়েছে, ছোট্টবেলা থেকেই বলিউডের সিনেমার পোকা কাসিফ। বিশেষ করে অজয় দেবগণের। বলিউডের এই নায়কের সঙ্গে দেখা করতেই সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে চলে আসে।
কুলসুম গওহরকে জানান, তাঁদের বাড়ি পাক পঞ্জাবের দিপালপুরে। স্বামী মারা গিয়েছেন বছর কয়েক আগে। ছয় ছেলে। কনিষ্ঠ সন্তান কাসিফ। একার রোজগারে সংসার চালানো সম্ভব নয়। তাই ছোট ছেলেকে লাহৌরের এক মাদ্রাসায় দিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রথম থেকেই লাহৌরের মাদ্রাসাতে মন টেঁকেনি আসিফের। আগেও বেশ কয়েক বার সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে কয়েক দিনের জন্য ছুটি ছিল মাদ্রাসায়। সেই সুযোগে পালায় কাসিফ। বাড়ি না গিয়ে সোজা সীমান্ত পেরিয়ে চসে আসে ভারতে। তার পর গত এক বছর ফরিদকোটের হোমেই রয়েছে সে।
বাড়ির ঠিকানা মিলেছে। কাসিফের বিষয়টি পাক বিদেশ মন্ত্রক ও নয়াদিল্লিতে পাক হাই কমিশনারকে জানানোও হয়েছে। কবে তাকে ফেরত পাঠানো হবে, তা এখন নির্ভর করছে দিল্লির উপর।
মা কবে ছেলেকে ফিরে পাবেন, জানে না কেউ। গওহর শুধু বলছেন, “আমারও তো একটা কাসিফের বয়সী ছেলে আছে। বিচারক অর্চনা পুরীরও। দু’জনেই চাইছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন কাসিফ তার মায়ের কাছে ফেরত যায়।”
সিনেমার পর্দা বা নাটকের মঞ্চের সাজানো গল্প নয়। এ তা হলে তিন মায়ের গল্প। অর্চনা পুরী, মদিহা গওহর আর কুলসুম বিবি। বাৎসল্য যে সীমান্তে বাঁধা পড়ে না, তার এক অনন্য কাহিনি। |