বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মগজের জট ছাড়াতে
আইপ্যাডে আইনস্টাইন

বেশি খরচ পড়বে না দাদা। মাত্র ৫৩৩ টাকা। এতেই পেয়ে যাবেন।
কী ভাবছেন? কীসের দাম?
যদি বলি আইনস্টাইনের ‘মাথার’ দাম।
বিশ্বাস হল না? কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও এ যে একেবারেই সত্যি। আইনস্টাইনের ‘মাথার’ দাম এখন মাত্র ৯.৯৯ ডলার। ভারতীয় অর্থে ৫৩৩ টাকা। আপনার হাতে যদি থাকে আইপ্যাড, পকেটে যদি থাকে শ’পাঁচেক টাকা, তা হলেই মুঠোয় নোবেলজয়ীর জিনিয়াসের বুদ্ধির ‘গোড়া’। মস্তিষ্কের কোন ‘রসায়ন’ সমাধান করেছিল e=mc2, তা জানা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
১৯৫৫ সাল। ৭৬ বছর বয়সে মারা যান অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। মৃত্যুর সাড়ে সাত ঘণ্টার মধ্যেই শরীর থেকে বের করে আনা হয় বিংশ শতাব্দীর সব চেয়ে ‘আলোচিত’ জিনিয়াসের মস্তিষ্ক। আর পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে সে দিন নিপুণ দক্ষতায় গোটা কর্মকাণ্ডটা সামলে ছিলেন প্যাথোলজিস্ট টমাস স্টলথ হার্ভে। এর পর মস্তিষ্ক ওজন করে তার বিভিন্ন অংশ অনেকগুলো পাতলা স্তরে কেটে সংরক্ষণ করে রাখেন তিনি। কয়েকটি টুকরো নিজের কাছে রেখে বাকিটা দিয়ে দেন সতীর্থদের। আর এরই সঙ্গে ক্যামেরায় ‘বন্দি’ করে রাখেন মস্তিষ্কের প্রতিটি স্তরের ‘গোপন’ কারিগরি।
গোপনই বটে। প্রতিভা চাপা না থাকলেও, আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের বিশেষ কারুকাজ তো লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল এর আগে।
এ সময় হার্ভে জানান, ঝাঁকড়া মাথা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ‘পাগলাটে’ লোকটার মাথায় কোনও প্যারাইটাল অপারকুলামই ছিল না। পরে আরও জানা যায়, মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবে যেখানে প্যারাইটাল অপারকুলাম থাকার কথা, সে জায়গাটা পুরো ফাঁকা। ল্যাটেরাল সালসসের (যা ফ্রন্টাল লোব ও প্যারাইটাল লোবকে টেম্পোরাল লোবের থেকে আলাদা করে) বেশ খানিকটা অংশ নেই। বরং সেখানে রয়েছে স্নায়ুকোষের ঘন জাল। বিজ্ঞানীদের মতে, এর জন্যই সম্ভবত সাধারণ মানুষের তুলনায় আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওই অংশে স্নায়ু অনেক বেশি সক্রিয় ছিল। শোনা যায় আইনস্টাইন নাকি নিজেও বলতেন, তাঁর প্রত্যেকটা চিন্তা চোখের সামনে ভেসে উঠে। তাঁর ‘শিল্পী’ মনে সংখ্যার বদলে ছবি হয়ে ওঠে জটিল অঙ্ক। ১৯৯৯ সালে হার্ভে এবং তাঁর সহকর্মীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘ল্যানসেট’ পত্রিকায়। সেখানে বলা হয়েছিল, আইনস্টাইনের প্যারাইটাল লোব গড়পরতা মানুষের তুলনায় ১৫ শতাংশ চওড়া। বিজ্ঞানীদের দাবি, মাথার এমন একটা অংশ, যা কিনা সংখ্যার ‘খেলা’ থেকে শুরু করে ভাষার তত্ত্ব, কিংবা আশপাশের যে কোনও কিছুর গতি-প্রকৃতি-ভারসাম্য ‘সামলায়’, সেই অংশ যদি বাড়তি জায়গা নিয়ে থাকে, তা হলে সেটাই হল আইনস্টাইনের বিশেষ ক্ষমতার সূত্রধর।
সে দিন হার্ভেদের কর্মযজ্ঞের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল একটাই। আরও ভাল করে জানা, মাথার ‘দাম’ ঠিক কোথায়। প্রতিভা আর ক্ষমতার কৃতিত্ব মস্তিষ্কের কোন ‘খাঁচা’য় লুকিয়ে রয়েছে। ৫৭ বছর আগে হার্ভে যা বলেছিলেন, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও দ্বিমত নন। তাই নয়া আইপ্যাড ‘অ্যাপস’ নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়েছেন তাঁরা।
সবটা সামলাচ্ছেন শিকাগোর ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ হেল্থ অ্যান্ড মেডিসিন’-এর বিজ্ঞানীরা। আইপ্যাডে মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্তরের সাড়ে তিনশো স্লাইডের প্রাযুক্তিক কারিগরিতে রয়েছেন মিউজিয়ামেরই বিশেষজ্ঞ স্টিভ ল্যানডার্স। বললেন, ‘আইনস্টাইন যদি জানতেন...’।
বেশ কিছু বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে স্টিভকে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের ছবি যে সময় সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন হার্ভেরা, তখন বিজ্ঞান এত উন্নত ছিল না। ২০১২-য় এসে কোন ছবিটা মাথার ঠিক কোন অংশের, তা বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। তাই ছবিগুলোকে জুড়েও বহুমূল্য মাথার মানচিত্র তৈরি করা এক কথায় ‘অসম্ভব’।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে, বিতর্ক দানা বেঁধেছে ‘দাম’ নিয়ে। মাত্র ৯.৯৯ ডলার। এত সস্তা? তা-ও আবার বিজ্ঞানী হোক বা কেরানি, যে কেউ কিনতে পারেন?
এ সবে আমল দিতে মোটেই রাজি নয় শিকাগোর ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ হেল্থ অ্যান্ড মেডিসিন’। তাদের কথায়, “আমরা জানি, তাঁর দেহাবশেষ নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে, আইনস্টাইনও এটা পছন্দ করতেন না। তবে কি না মস্তিষ্কের রহস্যটা উদ্ঘাটন করা বিজ্ঞান আর গবেষণার জন্য কতটা দরকারি, তা তিনি বুঝতেন। আশা করি, তাঁকে যথার্থ সম্মান দিয়েই আমরা সেটা করতে পারব।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.