ঠাঁই অক্সফোর্ড জীবনীর অভিধানে
মধু কবিকে ভোলেনি বিলেত, কৃষ্ণভাবিনীকেও
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ তাঁর আকুতি ছিল ‘রেখো মা দাসেরে মনে...’। বঙ্গভূমি তাঁকে ভোলেনি। মনে রেখেছে বিলেতও।
মৃত্যুর ১৩৯ বছর পর ব্রিটেনের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে ঠাঁই পেলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কবির আফশোস ছিল, ‘আশার ছলনে’ ভুলে বৃথাই জীবন কাটালেন বিলেতে, যাপন করলেন বিদেশির জীবন। ইংরেজি সাহিত্যের সাধনায় যে যশ তিনি আশা করেছিলেন, তা হয়তো পাননি, তবে বাঙালি কবি হিসেবেই এ বার তাঁর নাম উঠে এল ‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ন্যাশনাল বায়োগ্রাফিতে’।
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু ব্যক্তিত্বই ব্রিটিশ ইতিহাস এবং সমাজে নানা ভাবে ছাপ রেখে গিয়েছেন। তাঁদের সেই অবদানকে সম্মান এবং স্বীকৃতি জানাতেই এই অভিধান। রোমান আমল থেকে শুরু করে একবিংশ শতক পর্যন্ত ব্রিটিশ সমাজে গভীর অবদান রেখে যাওয়া ৫৮,২০২ জনের জীবনী ইতিমধ্যেই স্থান করে নিয়েছে এখানে। তাঁদের মধ্যে নাম রয়েছে মেদিনীপুরের এক কন্যার। কৃষ্ণভাবিনী দাস। বাংলা ভ্রমণকাহিনির প্রথম লেখিকা। বিলেতে আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন ‘ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা’। অবশ্য শুধু লেখিকা নয়, কৃষ্ণভাবিনীকে সমাজকর্মী হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে ‘অক্সফোর্ড ডিএনবি’-তে। ২০০৪ সালে বইয়ের আকারে এবং অনলাইনে প্রথম প্রকাশিত হয় এই অভিধান। তার পর থেকে প্রতি বছর জানুয়ারি, মে এবং সেপ্টেম্বর মাসে নতুন জীবনী জুড়ে আপডেট করা হয় অভিধানটি। এ মাসে যোগ হল দুই বাঙালির নাম। অভিধানে মধুসূদনকে (১৮২৪-১৮৭৩) বর্ণনা করা হয়েছে কবি ও নাট্যকার হিসেবে। তাঁর জীবনীতে লেখা হয়েছে, বর্তমান বাংলাদেশে অবস্থিত যশোহর জেলার সাগরদারি গ্রামে বিশিষ্ট, উচ্চবর্ণের কায়স্থ আইনজীবী রাজনারায়ণ দত্ত এবং জাহ্নবী দেবীর সন্তান ছিলেন তিনি। বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল বয়সে অনেক ছোট একটি মেয়ের সঙ্গে। তিনি রাজি না হয়ে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন ১৮৪৩ সালে। নাম হয় মাইকেল। বাবা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। এই সময়ে বাড়ি ছেড়ে তিনি চলে যান মাদ্রাজে (বর্তমান চেন্নাই)। কয়েকটি ইংরেজি দৈনিকে কাজ করার পাশাপাশি তিনি মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি হাই স্কুলে শিক্ষকতাও করেছিলেন। ১৮৪৮ সালে বিয়ে করেন রেবেকা টমসনকে।
এর পর, কলকাতায় ফিরে আসেন ১৮৫৬ সালে। দু’বছর পর লেখেন ‘শর্মিষ্ঠা’, মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে লেখা পাশ্চাত্য শৈলি অনুকরণে প্রথম বাংলা নাটক। অভিধানে বলা হয়েছে, মধুসূদনের যুগান্তকারী রচনা ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ (১৮৬১) মিলটনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’ দ্বারা অনুপ্রাণিত। বহু বাঙালি সাহিত্যিক মনে করেন এটি বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ আধুনিক কবিতা। যদিও সেই সময়ে রামের বদলে রাবণকে নায়ক বানিয়ে দেওয়ায় ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা যারপরনাই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
কৃষ্ণভাবিনী দাসের লেখা ‘ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা’র প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ।
অভিধানের আর এক বাঙালি কৃষ্ণভাবিনী দাস (১৮৬৪-১৯১৯) ছিলেন মেদিনীপুর জেলার এক হিন্দু জমিদার পরিবারের মেয়ে। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাবা জয়নারায়ণ সর্বাধিকারীর কাছেই লেখাপড়া শিখেছিলেন। ১৮৫৭ সালে দেবেন্দ্রনাথ দাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৮২ সালে স্বামীর সঙ্গে বিলেতে যান। তিন বছর পর প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই ‘ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা’। বাংলা ভাষায় এই প্রথম কোনও মহিলা লিখলেন ভ্রমণকাহিনি। যদিও লেখিকার নাম ছাপা হয়নি তাতে। ১৮৯০ সালে স্বামীর সঙ্গে দেশে ফিরলেও নিয়মনীতির বেড়াজাল না মেনে পাশ্চাত্য পোশাকেই রাস্তায় একা বেরোতে দ্বিধা করতেন না কৃষ্ণভাবিনী। ১৯০৯ সালে দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর অবশ্য হিন্দু বিধবার বেশেই দেখা যেত তাঁকে। সারা জীবন ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। ১৯১০ সালে তাঁর আরও একটি বই ‘জীবনের দৃশ্যমালা’ প্রকাশিত হয়। কৃষ্ণভাবিনীর উদ্যোগে প্রকাশিত হয় তাঁর স্বামীর আত্মজীবনী ‘পাগলের কথা’।
এই দু’জন ছাড়াও অন্য যে ভারতীয়দের নাম এই অভিধানে পাওয়া যাবে তাঁরা হলেন, শ্যামজী কৃষ্ণবর্মা, সংস্কৃত পণ্ডিত এবং জাতীয়তাবাদী জয়ন্তী দাস সগ্গর, চিকিৎসক এবং রাজনীতিবীদ হরবংশলাল গুলাটি প্রমুখের নামও।
ব্রিটেনের যে কোনও গ্রন্থাগারের সদস্যই ‘অক্সফোর্ড ডিএনবি’ অনলাইনে দেখতে পারেন। নতুন আপডেটগুলি-সহ ডিএনবি দেখা যাবে বৃহস্পতিবার থেকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.