মশাবাহিত রোগের চিকিৎসার জন্য যেখানে বাসিন্দাদের সব চেয়ে বড় ভরসা কালনা মহকুমা হাসপাতাল, পরিচ্ছনতার অভাবে সেই হাসপাতালই হয়ে উঠেছে মশাদের আঁতুড়ঘর।
তিন দশক আগে কালনা শহর থেকে হাটকালনা পঞ্চায়েতে উঠে আসে মহকুমা হাসপাতালটি। ১০ বিঘারও বেশি এলাকা জুড়ে তৈরি হয় হাসপাতাল। তার পর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহকুমা হাসপাতালে রোগীদের চাপও বেড়েছে। বর্তমানে কালনা মহকুমার পাশাপাশি নদিয়া ও হুগলি জেলার একটি বড় এলাকার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। অথচ ওয়ার্ডের আশপাশ থেকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভিতর নর্দমায় জমে রয়েছে জল। প্লাস্টিক-সহ নানা বর্জ্য সেখানে জমে রয়েছে। তার উপর উড়ে বেড়াচ্ছে মশা-মাছি। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে হাটকালনা পঞ্চায়েত ১০০ দিনের প্রকল্পে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে পেয়ারা, লেবু, নারকেল-সহ কয়েক হাজার ফলের গাছ লাগায়। এখন সেই গাছের নিচেই বেড়ে উঠেছে আগাছা। হাসপাতালের জল নিকাশির ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে একটি কাঁচা নালার ব্যবস্থা রয়েছে। তা গিয়ে পড়েছে স্থানীয় একটি নয়ানজুলিতে। হাসপাতালের পাঁচিলের গা ঘেঁষা এই নালার উপর তৈরি হয়েছে বেশ কিছু দোকানপাট। প্রতি দিনই এই দোকানগুলি থেকে বর্জ্য পদার্থ ফেলা হয় নালায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতাল কম্পাউন্ডের দূষিত পরিবেশের কারণে মশার উপদ্রব বাড়ছে প্রতিদিনই। মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি এক রোগিনী মায়া সরকারের বক্তব্য, “পাখা চললেও বাইরে থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঢুকে পড়ে ওয়ার্ডে। মনে হয়, চিকিৎসা থাক, বাড়ি যাই।” অপর এক রোগী পূর্বস্থলী ১-এর বগপুরের বাসিন্দা ইসমাইল শেখের কথায়, “হাসপাতালে যাতায়াত করলেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত, অভিলম্বে বাইরের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা।” |
হাসপাতালের চারপাশে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কথা স্বীকার করেছেন হাসপাতাল সুপার অভিরূপ মণ্ডল। তিনি বলেন, “হাসপাতালের বাইরের পরিবেশ দেখার দায়িত্ব পঞ্চায়েতের। ওই জায়গা পরিষ্কার করার জন্য পঞ্চায়েতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কম্পাউন্ডের ভিতর যে সমস্ত নালায় জল জমে সেগুলি উঁচু করার জন্য একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে।” সুপারের দাবি, বছর খানেক আগে হাটকালনা পঞ্চায়েতকে ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। ওই পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়েছে, এর মধ্যে ৮০ হাজার টাকার কাজ হয়েছে। বাকিটা দ্রুত খরচ করা হবে। কালনার বিধায়ক তথা পুরসভার চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ কুণ্ডুও বলেন, “হাসপাতাল চাইলে পুরসভা মশা মারার তেল দেবে। হাসপাতালের পরিচালনার বিষয়টা রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে পঞ্চায়েতকে দেখতে বলা হয়েছে। আবারও তাদের একই ব্যাপারে জানানো হবে।” |