|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
কর্মী নন, পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য |
সম্পাদকীয়তে প্রকাশিত ‘বিনা বেতনের দাসী’ (১৩-৯) প্রবন্ধটির বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করছি। সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে বলা যায় যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এক সংসারের অঙ্গ। সেটা তাদের নিজেদের গড়ে তোলা স্বপ্নের সংসার। ভালবাসার সংসার। সেই সংসারে অর্থের বিনিময়ে কাজ করতে হবে। এখন প্রশ্ন, তা হলে কি শুধু স্ত্রীরাই মুখ বুজে সংসারের সব কাজ করে যাবেন কোনও স্বীকৃতি ছাড়াই? না, তা কখনওই হতে পারে না। পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সংসারের প্রতিটি সদস্যের কর্তব্য কাজ ভাগ করে নেওয়ার। সেই অভ্যাসটটিকে বাধ্যতামূলক করে তোলা অনেক বেশি জরুরি। বিগত প্রজন্মের ক্ষেত্রে যে ধারণা চলে এসেছে, তার থেকে বেরিয়ে এসে ছোটবেলা থেকে যদি এই দায়িত্ব নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তা হলে অন্তত এখনই না-হলেও আগামী প্রজন্মের ক্ষেত্রে সেটা একটা স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হবে। তার জন্য প্রথমেই চাই মানসিকতার আমূল পরিবর্তন। আমরা আধুনিকতার বড়াই করি, অথচ লিঙ্গ-বৈষম্য ভুলে সংসারের কাজে হাত লাগাতে এখনও বেশির ভাগ পুরুষের সম্মানে লাগে। বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে নয়, পরিবারের এক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে স্ত্রীকে গ্রহণ করা অনেক বেশি কাম্য।
এখনও কর্মরত মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে সারা দিনের কাজের পরেও সংসারের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয়। আর কর্মরত না-হলে তো কথাই নেই। তাঁর নিজের জন্য কোনও অবসর থাকার অধিকার থেকে তিনি বঞ্চিত।
উক্ত প্রবন্ধে স্ত্রীকে বেতন দেওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়বে সে সম্পর্কে কিছু কথা বলা হয়েছে। পরিবারের ন্যূনতম সহযোগিতা পেলে স্ত্রীরাও অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারেন। যেটা শুধু মাত্র জাতীয় আয়কেই সমৃদ্ধ করে না, সংসারের অর্থনীতিতেও জোয়ার আনে। কিন্তু তার জন্য সবথেকে বেশি দরকার তার কাছের মানুষজনের সমর্থন ও সদিচ্ছা, আর অবশ্যই কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকারি উদ্যোগ। গৃহবধূদের বেতন দিয়ে দাক্ষিণ্য দেখানো নয়, তাদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া অনেক বেশি কাম্য। এর মাধ্যমেই নারীর প্রকৃত ‘ক্ষমতায়ন’ সম্ভব।
স্ত্রীকে বেতন দেওয়ার প্রস্তাব কার্যকর হলে স্ত্রীদের নিরন্তর একতরফা পরিশ্রম করাটাকে বাধ্যতামূলক করার অপচেষ্টা সার্থক হবে। অন্যথায় স্বামী-স্ত্রীর সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ককে অর্থের মাধ্যমে বেঁধে ফেলে এক ধরনের পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতার জন্ম দেবে। যা এক সামাজিক বৈকল্যেরই নামান্তর। বেতনভুক কর্মচারী করে স্ত্রীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ না-করে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ককে রক্ষা করাটা অনেক বেশি অভিপ্রেত। |
তনিমা চট্টোপাধ্যায়। দ্য নেদারল্যান্ডস |
|
|
|
|
|