কেউ খুঁটিয়ে দেখেননি। প্রশ্নও করেননি কোনও নিরাপত্তা রক্ষী। আটকানো তো দূরের কথা। জাল পরিচয়পত্র নিয়েই ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর অতিথিশালায় দিব্যি কয়েক রাত কাটালেন এক রহস্যময়ী। ‘কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া’ ইসরোর চত্বরে চার ঘণ্টা ঘুরে বেড়ালেন অবাধে। এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। কী ভাবে সম্ভব হল এটা? তবে কতটা নিরাপদ দেশের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র?
|
বুয়েলা এন শ্যাম |
এই মুহূর্তে তার চেয়েও যেটা বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে, তা হল কে এই মহিলা? লস্কর বা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের মতো কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কি যোগ রয়েছে তাঁর? প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বছর ৪১-এর ওই মহিলা আদতে আমদাবাদের বাসিন্দা। নাম বুয়েলা এন শ্যাম। বিয়ে হয়েছে বেঙ্গালুরুর শিক্ষক আলেকজান্ডারের সঙ্গে। কিছু দিন আগে বুয়েলার বাবার মৃত্যু হয় কেরলে। বুয়েলা সেখানে গিয়েছিলেন বাবার শেষকৃত্যে। কিন্তু তার পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, গত ১০ দিন ধরে বাড়ির কেউই বুয়েলার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। কেরল থেকে বেঙ্গালুরুতে নিজেদের বাড়িতে না ফিরে বুয়েলা কেন ইসরোর অতিথিশালায় গিয়ে রাত কাটালেন, কেনই বা ঢুকে পড়লেন ইসরোর সদর দফতরে, সেটাই বড় প্রশ্ন তদন্তকারীদের কাছে। তবে ভুল করে যে তিনি এ কাজ করেছেন, এমনটাও মনে করা যাচ্ছে না। কারণ ‘নিরাপত্তায় মোড়া’ ইসরোয় ঢোকার জন্য তিনি একটি জাল পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিলেন কেরলের কোল্লম শহরের একটি স্টুডিও থেকে। আলেকজান্ডারের দাবি, তাঁর স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। ইসরোর তরফেও প্রাথমিক ভাবে বলা হয়, ওই মহিলাকে আপাত ভাবে নির্দোষ ও মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হচ্ছে তাদের। যদিও ইসরোর এই মন্তব্যে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে ফাঁক রয়েছে সেটা আড়াল পড়ছে না মোটেই।
নজরদারি উপগ্রহ হোক বা রকেট লঞ্চার, সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরিতে বড় ভূমিকা রয়েছে ইসরোর। শুধু ভারতের নয়, বিদেশের কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাতেও অনেক সময়ে ইসরোর উপর নির্ভর করতে হয়। সাধারণত বেশ কয়েকটা স্তরে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই সেখানে ঢোকার অনুমতি মেলে। ভিতরে টহল দেয় সিআইএসএফ জওয়ানরা। এ হেন নিরাপত্তায় মোড়া ইসরোয় আজ জঙ্গি হানার আতঙ্ক তৈরি হয়। সমস্ত টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ। পরে পুলিশ সূত্রে জানা গেল, ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে সংস্থার দফতরে ঢুকে পড়েছিলেন এক মহিলা। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ আদালতে তোলা হলে বিচারক ওই মহিলাকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। |
দফতরের হলঘরের সামনে ওই মহিলাকে উকিঝুঁকি মারতে দেখে এক সিআইএসএফ সাব-ইনস্পেক্টর রামা রাওয়ের সন্দেহ হয়। মহিলার কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে তাঁকে সিআইএসএফ জওয়ানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তল্লাশির সময় তাঁর কাছ থেকে ইসরোর পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। কিন্তু ভাল করে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, পরিচয়পত্রটিতে লেখা রয়েছে, সংস্থার ম্যাঙ্গালোর শাখায় ‘সিনিয়র সায়েন্টিস্ট’ হিসেবে কাজ করেন ওই মহিলা। অথচ ম্যাঙ্গালোরে ইসরোর কোনও শাখাই নেই। তা হলে পরিচয়পত্রটি দেখেও নিরাপত্তা রক্ষীদের সন্দেহ হল না কেন?
গত ক’দিন বুয়েলা কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন তার কোনও সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। আলেকজান্ডার তাঁর স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশে জানাননি কেন, তা নিয়েও কিছু বলতে পারেননি তিনি।
এই ঘটনায় জঙ্গি যোগ থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিশ কমিশনার জ্যোতিপ্রকাশ মির্জি। কারণ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বা লস্কর-ই-তৈবার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির একাধিক ‘স্লিপার সেল’ ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাতে পারে বলে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছে আইবি-র মতো গোয়েন্দা সংস্থা। প্রশিক্ষণ ছাড়াই ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী পার হওয়া মানসিক
ভারসাম্যহীন কোনও মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলেই পুলিশ মনে করছে। মহিলাকে আপাত ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হলেও গোটা পর্ব নিয়ে ইসরোও আলাদা করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বুয়েলা না হয় কোনও নথি নিতে পারেননি। হয়তো তিনি সত্যিই মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু যদি কেউ ভুয়ো পরিচয়পত্র নিয়ে এ ভাবে ইসরোর মতো সংস্থার সদর দফতরে ঢুকে যেতে পারে, তবে ফের একটা ২৬/১১ বা ৯/১১-র মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি অসম্ভব কিছু নয় বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
|
সঙ্কটে নিরাপত্তা |
• পরিচয়পত্রে ম্যাঙ্গালোর শাখার কথা থাকলেও সেখানে ইসরোর কোনও শাখাই নেই। তা হলে পরিচয়পত্র দেখে সন্দেহ হল না কেন?
• ফোটো স্টুডিওয় ভুয়ো পরিচয়পত্র এল কী ভাবে?
• স্বামীর দাবি অনুযায়ী, ১০ দিন নিখোঁজ ছিলেন বুয়েলা। এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন?
• স্ত্রীর নিখোঁজ থাকার কথা স্বামী পুলিশে জানাননি কেন?
• বুয়েলার উদ্দেশ্য কী ছিল? |
|