ভিন্ রাজ্যে গিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে খরচ নিয়ে আর দু’বার ভাবতে হবে না। আগামী বছর থেকেই উঠে যাচ্ছে এ ক্ষেত্রে ‘রোমিং চার্জ’ বা বাড়তি মাসুল। সোমবার কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বল নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে এই সিদ্ধান্ত জানালেন।
এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোহিতার আশ্বাস দিয়েছে টেলিকম শিল্পমহলও। কিন্তু সরকারের বর্তমান নীতির বদল না-হলে তা কী ভাবে কার্যকর হবে, সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাদের মনে। কারণ, এখন এক একটি সার্কেলে পরিষেবার খরচ এক এক রকম। সাধারণ ভাবে এক সার্কেল থেকে অন্য সার্কেলে গিয়ে ফোন করলে গ্রাহককে রোমিং পরিষেবার জন্য বাড়তি মাসুল গুনতে হয়। অবশ্য কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বাকি এলাকা এবং চেন্নাই ও তামিলনাড়ুর বাকি এলাকার ক্ষেত্রে এই নিয়মটি প্রয়োজ্য নয়। সেখানে আলাদা সার্কেল হলেও গোটা রাজ্যেই মাসুল হার এক।
রোমিং চার্জ তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে একজন গ্রাহকের একই মোবাইল নম্বর (ওয়ান নেশন ওয়ান নাম্বার) চালুর জন্য মে মাসে জাতীয় টেলিকম নীতি অনুমোদন করে কেন্দ্র। এ দিন সিব্বল বলেন, “টেলিকম সচিব জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকেই তা উঠে যাবে।”
সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া-র ডিরেক্টর জেনারেল রাজন এস ম্যাথুজ এ দিন নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বলেন, “আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে তার আগে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।” টেলিকম শিল্পের মতে, এর সঙ্গে প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক বিষয় যেমন জড়িত, তেমনই রয়েছে আইনি দিকও। যেমন, এখন সার্কেলের ভিত্তিতে টেলিকম সংস্থাকে স্পেকট্রামের লাইসেন্স দেয় কেন্দ্র। টেলি-শিল্পের দাবি, এর ফলে পরিষেবার খরচও বিভিন্ন সার্কেলে আলাদা। তাই রোমিং চার্জ তুলে দিয়ে দেশ জুড়ে অভিন্ন মাসুল হার চালু করতে হলে সরকারি নীতিবদলও জরুরি বলে দাবি তাদের।
পাশাপাশি, টেলিকম শিল্পের অভিযোগ, সাধারণ ভাবে মাসুল কম বলে তাদের আয়ের উপর চাপ পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রোমিং চার্জ উঠলে চাপ আরও বাড়বে কি না, এখনই এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে নারাজ টেলিকম শিল্প। তবে রোমিং চার্জ যে আয়ের একটা উৎস, তা মানছে তারা। ম্যাথুজের অবশ্য আশা, কোনও কিছু চূড়ান্ত হওয়ার আগে রীতি মেনে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই) সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মত নেবে। কারণ মাসুল হার সংক্রান্ত সুপারিশ ট্রাই-ই করে থাকে। যদিও রোমিং চার্জ উঠলে সংস্থাগুলির আয়ের উপর খুব একটা চাপ পড়বে না বলেই মনে করছেন উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র কর্তা জয়দীপ ঘোষ। তাঁর মতে, চার্জ উঠলে গ্রাহকেরা আরও বেশি করে ফোন করবেন। ফলে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। এ জন্য সাধারণ ভাবে মোবাইল পরিষেবার মাসুল হার বাড়বে বলেও মনে করেন না তিনি।
ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, আপাতত টেলিকম শিল্প তাকিয়ে রয়েছে টেলিকম দফতরের (ডট) দিকেই। বাতিল টু-জি লাইসেন্স ফের নিলামের জন্য আগ্রহপত্র চাওয়ার নোটিস বেরোবে ২৮ সেপ্টেম্বর। টেলিকম সচিব আর চন্দ্রশেখর জানান, তারপর সংযুক্ত লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবং তা চূড়ান্ত হওয়ার পরবর্তী ধাপে রোমিং তুলে দেওয়া নিয়ে কাজ আরম্ভ করবে ডট।
আপাতত ডটের সেই সব পদক্ষেপের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে টেলিকম শিল্প। |