তিন বছর আগেও একশো দিনের কাজ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মাথাব্যথা ছিল ব্লককে ঘিরে। এ বার পুরনো সমস্ত হিসেব উল্টে দিয়ে বছরে কাজের নিরিখে জলপাইগুড়ি জেলার তেরোটি ব্লকের মধ্যে সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিল ফালাকাটা ব্লক। সম্প্রতি জেলাশাসকের দফতর থেকে প্রকাশিত পুস্তিকায় বলা হয়েছে ২০১১-১২ আর্থিক বছরে গড়ে প্রতি পরিবারকে ৬১ দিন কাজ দিতে সক্ষম হয়েছে ওই ব্লক। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জেলার সবচেয়ে বড় ব্লক ধূপগুড়ি। সেখানে বছরে ২৯ দিন কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তালিকার শেষে রয়েছে নাগরাকাটা ব্লক। ওই ব্লকের জব কার্ডধারীদের বছরে কাজ মিলেছে মাত্র ১৬ দিন। একশো দিনের কাজে ফালাকাটা ব্লকের সাফল্যে খুশি জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র। তিনি বলেন, “খুবই ভাল খবর। ফালাকাটায় সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। অন্য ব্লকের আধিকারিকরা যেন একশো দিনের কাজে বেশি সংখ্যক মানুষকে সামিল করে সে জন্য বিডিও-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ২০০৬ সালে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম থেকে জেলায় পিছিয়ে ছিল ফালাকাটা ব্লক। বারো নম্বর স্থানে নাম ছিল। এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যিনি দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেছেন সেই ফালাকটার বিডিও সুশান্ত মণ্ডল বলেন, “তিন বছর আগে একশো দিনের কাজ তেমন ভাবে হয়নি। প্রতিটি বৈঠকে জেলা প্রশাসনের কর্তারা আধা ঘণ্টা শুধু ফালাকটার পিছিয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা করতেন। মানুষ তেমন ভাবে ওই প্রকল্প নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। অনেক চিন্তা করে উপায় বের করে লেগে থাকায় ফল মিলছে।” এত দিন কী সমস্যা ছিল? একশো দিনে কেন বাসিন্দারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না সেটা খুঁজে বের করতে গিয়ে বিডিও দেখেন, ব্লক অফিস থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত স্তরে প্রকল্প নিয়ে সবিস্তার জানানো হয়নি। অনেক পঞ্চায়েত সদস্য জানতেন ওই প্রকল্পে শুধুমাত্র কাঁচা রাস্তা তৈরি ও মেরামত করা যায়। এর পরে বিডিও সভা করে বোঝাতে শুরু করলেন একশো দিনের প্রকল্পে শুধু রাস্তা তৈরি নয়। নালা তৈরি, পুকুর খনন ও বাঁধ নির্মাণ করা সহ নানা কাজ সম্ভব। গ্রামবাসীদের বোঝাতে নাটকের সাহায্য নেওয়া হয়। গ্রামগঞ্জের হাটে বাজারে নাটক পরিবেশন করা হয়। এ ভাবে এক সময় বাসিন্দারা এগিয়ে আসতে শুরু করে। শুধুমাত্র সভা ও প্রচার নয়। কাজ কেমন হচ্ছে সেটাও প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে ঘুরে দেখতে শুরু করেন বিডিও। ২০০৯ সালে ব্লকে ৪৪৭৪০ পরিবারের সদস্য জব কার্ড পেয়েছিলেন। কাজ পেয়েছিলেন ১১৭৮০টি পরিবার। গত আর্থিক বছরে জব কার্ডধারী পরিবারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩২১ জন। তাঁদের মধ্যে কাজ পেয়েছেন ৩০ ৫৩০টি পরিবার। এক বছরে ১৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই টাকায় ৫৩৮টি পুকুর খনন, ৫২১টি রাস্তা তৈরি ও সংস্কার সহ ১৯৮টি নদী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্লকে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে গুয়াবরনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতে। |