গরু পাচারকারীদের উপদ্রবে অনেক দিন ধরেই বিরক্ত উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার মানুষ। রবিবার ওই পাচারকারীদের এক জনই স্থানীয় এক ছাত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় এলাকার মানুষের। ওই ছাত্রীকে কটূক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্থানীয় এক যুবক পাচারকারীদের হাতে প্রহৃত হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা এক লাফে বেড়ে যায়। পাচারকারী সন্দেহে গাইঘাটার ছোট সেহানা গ্রামে কয়েক জনের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় জনতা। একটি ক্লাবঘরের সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার মণ্ডলপাড়ার কাছে অবরোধ করা
হয় ট্রেনও। সেই সময়ে পাশের গ্রাম বড় সেহানায় এক যুবককে পাচারকারীরা পাল্টা মারধর করে বলে অভিযোগ। তখন সেখানেও উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ, বিএসএফ, কমব্যাট ফোর্স গিয়ে দু’জায়গায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। পাচারের জন্য জড়ো করা শ’দুয়েক গরু এবং ১৫টি মোষ আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কটূক্তি, মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে বলেও জানিয়েছে তাঁরা।
বনগাঁর মহকুমা শাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “এই মহকুমায় সীমান্ত প্রায় ৯৪ কিলোমিটার। তার মধ্যে ২০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নেই। সেখান দিয়েই গরু পাচার হয়। গরু পাচার রুখতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সমস্যা পুরোপুরি মেটানো যায়নি।” তাঁর কথায়, “পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে এলাকার উপরেও। যে কারণেই এমন ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাই পুলিশকে বলা হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নিতে।” জেলার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “এই দিন রাত পর্যন্ত ১৯৬টি গরু আটক করা হয়েছে। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে রয়েছেন। পাচারকারীদের গ্রেফতার করতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “যাদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে তারা পাচারকারী কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গাইঘাটা এলাকার মানুষ গরু পাচারকারীদের দাপটে দীর্ঘ দিন ধরেই অতিষ্ঠ। খেতের মধ্যে দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়ায় চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়। মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে পাচারকারীরা, এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে। ঝাউডাঙা গ্রামে কয়েক মাস আগে পাচারকারীদের রুখতে রাতপাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন সাধারণ মানুষ। পাহারাদারদের লক্ষ্য করে সেবার পাচারকারীরা বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। পাল্টা পথ অবরোধ করেন বাসিন্দারা। বাগদায় এক হাতুড়ে চিকিৎসকের বাড়ির উঠোন দিয়ে গরু পাচারের প্রতিবাদ করায় তাঁকেও মারধর করে দুষ্কৃতীরা। ইদানীং অবশ্য মানুষ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কিছুটা সংগঠিত হতে শুরু করেছেন। শনিবার রাতে ছোট সেহেরায় এক দল পাচারকারীকে তাড়া করেছিলেন গ্রামের মানুষ। উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল।
এরপরে কী হয়েছিল রবিবার সকালে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দশম শ্রেণির এক কিশোরী গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাচ্ছিল। অভিযোগ, তাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন মন্তব্য করে পাচারকারীদের একাংশ। তার প্রতিবাদ করলে স্থানীয় ওই যুবককে মারধর করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। পাচারকারীদের খোঁজে লাঠি-সোটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে জনতা। ভাঙচুর চলে। সকাল ১০টা নাগাদ রেললাইনে গরু বেঁধে ট্রেন অবরোধ করেন মানুষ। আপ-ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বনগাঁর এসডিপিও রূপান্তর
সেনগুপ্ত মারধর, কটূক্তির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। পাচার বন্ধেও পুলিশ সচেষ্ট হবে বলে জানান। ঘণ্টা দু’য়েক পরে অবরোধ ওঠে। পুলিশ-বিএসএফ পাচারের জন্য জড়ো করা গরু ধরতে বেরোয় গ্রামে।
তত ক্ষণে পাশের গ্রাম বড় সেহানায় পাচারকারীরা গরু নিয়ে এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করছিল। স্থানীয় মানুষ বাধা দিলে গোলমাল বাধে। অভিযোগ, সেই সময়ে স্থানীয় আর এক যুবকের মাথায় বাঁশ দিয়ে মারে দুষ্কৃতীরা। ওই যুবক পেশায় ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। তাঁর বাবা বলেন, “বাইরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বেরিয়েছিল ছেলে। ওকে বিনা কারণে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।” তারপরেই ভাঙচুর চালায় জনতা। একটি গাড়ি ও একটি মোটর বাইকও ভাঙা হয়। পুলিশ-বিএসএফ-কমব্যাট ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বেশ কিছু গরু-মোষ আটক হয়েছে এই গ্রাম থেকেও। |