|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
কাসভ আর চে, এক কথা? |
রবিবাসরীয়তে দেবজ্যোতি জানিয়েছেন যে, তিনি কাসভের ফাঁসি চান না (১৬-৯)। মৃত্যুদণ্ডের তিনি বিরোধিতা করতেই পারেন। সে জন্য কেউ তাঁকে ভারতে অন্তত দেশদ্রোহী বলবে না। কিন্তু তিনি বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত ছিলুম কাসভের মৃত্যুদণ্ডই হবে। তা হলে আর বিচারটিচার এত কাণ্ড হল কেন?” বিচারে আদালত কাসভকে আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দিয়েছে। কাসভের কথা শোনা হয়েছে এবং আমাদের আইন অনুযায়ী এত জন মানুষকে খুন করা বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ফলে, মৃত্যুদণ্ড। গাঁধীজির হত্যা, ইন্দিরা গাঁধির হত্যা ইত্যাদি ঘটনাতেও অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডই হয়েছিল। তারা কেউ পাকিস্তানি ছিল না। আর, চে গেভারা আর কাসভ কী করে এক হলেন। কাসভের উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষ, মহিলা, শিশু খুন করা এবং শুধু মাত্র হত্যা করার আনন্দে। গেভারা চেয়েছিলেন গরিব মানুষদের সংগঠিত করে বিপ্লব। লেখক বামপন্থা বিরোধী হতে পারেন, তবে তিনি কোত্থেকে জানলেন যে, চে সাধারণ মানুষ, মহিলা, শিশু খুন করেছিলেন। শ্রমিক-কৃষকদের বিপ্লব আর সন্ত্রাসবাদী হামলা এক করে কাসভকে বড্ড বেশি সম্মান জানানো হয়ে গেল না কি? মতাদর্শের জন্য লড়াই করলেই মুড়ি-মিছরি এক দর। হিটলার, ক্ষুদিরাম, নেতাজি, নেপোলিয়ন, লেনিন, ভগৎ সিংহ, লাদেন, কাসভ সবাই এক? মতাদর্শের সারবস্তুর কোনও দামই নেই?
শরণ্য চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-৩৮
|
২ |
‘কাসভের ফাঁসি চাই না’ পড়লে বোঝা যায় যে, বর্তমানে বুদ্ধিজীবীদের একাংশের মধ্যে জনপ্রিয় উত্তর আধুনিক মানবতাবাদ কী ভাবে গণতন্ত্রকে ক্রমশ দুর্বল করে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রবন্ধ লেখক কাসভকে কার্যত বিপ্লবী বানিয়েছেন। তাঁর তুলনা করেছেন চে গেভারার সঙ্গে। জানি না, গেভারা-ভক্তরা এর প্রতিবাদ করবেন কি না। কিন্তু কোন কারণে আজমল কাসভ বিপ্লবী? কারণ, ‘নিজের আদর্শের প্রতি তার একটা সততা আছে। যার জন্য সে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত হয়েছে।’ অর্থাৎ আদর্শের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকলেই সে বিপ্লবী। তা হলে একই যুক্তিতে হিটলার, মুসোলিনি ও তাঁদের সাঙ্গোপাঙ্গরাও বিপ্লবী? আদর্শের জন্য প্রাণ কি তাঁরা দেননি? লেখক মন্তব্য করেছেন, ‘দুনিয়ায় স্ট্যান্ডার্ড মতবাদ বলে কিছু নেই।’ এটি মোটামুটি সমস্ত পোর্স্ট মডার্ন পণ্ডিতেরই মত। কিন্তু এটা সকলের মত নয়। |
|
চিঠির শুরুতেই বলেছিলাম যে, দিশাহীন উত্তর আধুনিক চিন্তা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে তাকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একের পর এক আঘাত আসছে মৌলবাদী শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে। শিকার হচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ। আর রাষ্ট্র তার প্রতিকারের ব্যবস্থা না করে মূলত হাত গুটিয়ে বসে থাকছে। আর যদি বা জনমতের চাপে কদাচিৎ কোনও প্রতিকারের উদ্যোগ নিচ্ছে, তো রে-রে করে উঠছেন এই ধরনের পোস্ট মডার্ন পণ্ডিতরা। তাঁদের বক্তব্য, যেহেতু নৈতিকতার বাজারে মুড়ি-মিছরি, কাক-কাকুড় সকলেরই এক দর। তাই মৌলবাদী, সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি মানুষের ক্রোধ আদপে পরমত অসহিষ্ণুতা মাত্র। তা হলে প্রশ্ন, যে মানুষগুলো অঙ্গ হারাল, স্বজন হারাল, জীবন হারাল তাদের প্রতি ন্যায় করার কোনও দায় কি রাষ্ট্রের নেই? ভারতের বুকে যদি ‘আজমল কাসভের সন্তান-সন্ততিরা হেসেখেলে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়, তবে মানুষ কি ক্রমশ গণতন্ত্রের উপরেই আস্থা হারাবে না? তারা কি মনে করবে না যে, বাপু বজরঙ্গীরাই হল আজমল কাসভদের একমাত্র দাওয়াই!
সূর্যদীপ্ত নাগ। কলকাতা-১৩৬
|
৩ |
‘এর মতবাদ আমি মানি, তাই একে মারা চলবে না। আর ওর আদর্শ আমি মানি না, তাই ওকে মারা চলবে, এটা যুক্তি হতে পারে না।’ ঠিকই। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে লাদেন, কাসভ চে গেভারা, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ কোথায় যেন একীভূত হয়ে যান। হত্যা, আর তার প্রতিবাদ-প্রতিরোধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে হত্যা। মানবসভ্যতাকে কোথায় নিয়ে চলেছে? জানি, কাসভের ফাঁসি না-চাওয়া দিবাস্বপ্ন। তবুও সমর্থন করতে ইচ্ছা হয় লেখককে।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের উত্তরসূরি হিসাবে সুবিশাল শক্তিশালী মৌর্য সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র সম্রাট অশোক ক্ষমাধর্ম অনুশীলন করে ধর্মাশোকে পরিণত হওয়ার যে রাজনৈতিক, সামরিক সুবিধা পেয়েছিলেন। সেই অনুকূল পরিস্থিতি কি আছে? ১৯৪৭-এর পর খণ্ডিত দাঙ্গাবিধ্বস্ত দারিদ্র-পীড়িত সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে বিপর্যস্ত আধুনিক ভারতের রাষ্ট্রনেতাদের? আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রনেতারা বরং অনুসরণ করুক চাণক্যের নীতিতে অনুপ্রাণিত ঘোর সাম্রাজ্যবাদী চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আদর্শকে। যাতে আমাদের উত্তরপুরুষ ধর্মাশোকের মহত্ত্ব দেখাতে পারে বিশ্ববাসীকে।
কাসভকে ফাঁসি দিতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। আবার না-কোনও কান্দাহর কাণ্ড ঘটে যায়!
শংকরলাল সরকার। চুঁচুড়া, হুগলি |
|
|
|
|
|