পুজোর উত্তাপ এত দিন টের পাওয়া যেত ব্যানার-হোর্ডিংয়ে। সেখানেই নিজেদের থিম তুলে ধরত বিভিন্ন পুজো। এ বার সেই আঁচ নেট দুনিয়াতেও। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকে নিজেদের অ্যাকাউন্ট খুলে প্রচার শুরু করেছে একের পর এক পুজো কমিটি।
নানা কায়দার ছবি আর ছড়ায় ‘ই-দুনিয়াতে’ও চলছে অভিনব ‘লড়াই’। নিজেদের তুলে ধরতে কেউ কেউ আবার খুঁটিপুজোর খুঁটিনাটিও ছড়িয়ে দিয়েছেন ফেসবুকে। প্রচারের লড়াইয়ে সামিল বড়-মেজ-ছোট নানা মাপের পুজো কমিটি। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, এমনকী শহরতলির বহু অনামী পুজোও হাঁটছে ফেসবুকে প্রচারের পথে।
উত্তর কলকাতার একটি পুজো কমিটি এ বার প্রথম থেকেই থিমের প্রচার ছড়ার রহস্যে মুড়ে রেখেছিল। দিন যত গড়িয়েছে, ছড়ায়-ছড়ায় বেরিয়ে এসেছে আসল গল্প। আর এই রহস্যের জন্যই একের পর এক ‘কমেন্ট’ ভেসে এসেছে তাঁদের ফেসবুক-দেওয়ালে। ওই পুজোর কর্তা অভিষেক ভট্টাচার্য বলছেন, “নানা জন ছড়ার নানা মানে করেছিলেন। আর তা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা।” দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাব আবার নানা দিক থেকে মণ্ডপের ছবি তুলে তাক লাগাতে চেয়েছে। ‘শেয়ার’-এর কল্যাণে ফেসবুকে তাদের ছবি ছড়াচ্ছে নানা দেওয়ালে। |
দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পুজোর থিম প্রকাশ অনুষ্ঠান। মঞ্চে মন্ত্রীর সঙ্গে
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, রাইমা সেন এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: রাজীব বসু |
থিম চুরির ভয় নেই! পুজো কমিটির কর্তা সোমনাথ দাসের জবাব, “ছবিগুলো যে ভাবে তোলা, দেখে আগ্রহ জন্মাবে। কিন্তু অনুকরণ করা যাবে না।” হাতিবাগানের একটি পুজো খুঁটিপুজোর নানা দৃশ্য তুলে প্রচার চালাচ্ছে। সঙ্গে থিম ও শিল্পীর নাম দিয়ে বিজ্ঞাপন। আর তাতেই একের পর এক ‘লাইক’ পড়ছে দেওয়ালে। কয়েকটি ছবি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে শ’য়ে শ’য়ে দেওয়ালে।
শুধু তা-ই নয়, নিজেদের ছবি অন্যদের দেওয়ালেও সেঁটে দিচ্ছেন অনেকে। হাতিবাগানের এক পুজোকর্তার কথায়, “এতে অন্য পুজোর দর্শনার্থীদের কাছেও পৌঁছনো যাচ্ছে।” এই ফন্দি নিয়ে অবশ্য মনোমালিন্য নেই কমিটিগুলির মধ্যে। দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোর কর্তা বলছেন, “প্রচারে নিজেদের তুলে ধরার লড়াই আছে, কিন্তু তাতে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হচ্ছে না।”
কেন এই পরিবর্তন? উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যানার-হোর্ডিংয়ের তুলনায় ফেসবুকে বিনা খরচে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। এ ছাড়া, নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে ব্যানার-হোর্ডিং লাগানোটাও সম্ভব নয়। কিন্তু ফেসবুকে গোটা শহর তো বটেই, জেলা-রাজ্য, দেশ-বিদেশের মানুষের কাছেও নিজেদের তুলে ধরা যায়। আর বিপণন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, শহরের রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে ব্যানার-হোর্ডিং-এ যত নজর কাড়া যায়, ফেসবুকে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে পুজো কমিটিগুলি। উদ্যোক্তারাও স্বীকার করছেন, নিখরচায় বিজ্ঞাপনের এমন সুযোগ হাতছাড়া না করতে চাওয়ার কারণেই ফেসবুকে এত প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা।
তবে কি বদলাচ্ছে এত দিনের চেনা ছবিটা? না। ব্যানার-হোর্ডিং আগের মতোই রয়েছে। যাদবপুর থানার সামনে বা গড়িয়াহাট মোড়ে পুজো কমিটির হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ। এক ছবি হাতিবাগান, শ্যামবাজারেও। বরং, ব্যানার-হোর্ডিংয়ের পাশাপাশি নতুন মাধ্যম ব্যবহার করাই এ বার অন্যতম উদ্দেশ্য। এক পুজোকর্তা বলছেন, ফেসবুকে যে ভাবে প্রচারের প্যাকেজ করা যাচ্ছে, তা ছাপার অক্ষরে করা দুঃসাধ্য।
তবে, পুজো কমিটিগুলি ফেসবুকে নিজেদের তুলে ধরলেও শহরের তারকা-শিল্পীরা অনেকেই ফেসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে। কেউ বলছেন, “আমি ফেসবুকে নেই।’ কেউ বলছেন, “কাজের ব্যস্ততায় প্রচারের সময়ই পাচ্ছি না।” অনেকে গত বছরের কাজ তুলে ধরেছেন ফেসবুকে। তবে ব্যতিক্রম সনাতন দিন্দা। ফেসবুকে কাজের নিয়মিত ‘আপডেট’ দেওয়া সনাতন বলছেন, “পুজোকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে এই প্রয়াস। আমার বিদেশি বন্ধুদের কাছে শহরের পুজো পৌঁছচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ছে।” ফেসবুকে পুজোর প্রচার শুরু হয়েছিল মাস তিনেক আগেই। পুজোর মুখে এসে এখন তার পাতায়-পাতায় শুধুই উৎসবের গন্ধ। |