চলতি মরসুমে বাংলাদেশের ইলিশ থেকে বঞ্চিতই থাকতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য-রসিকদের। রমজান মাসের গোড়ায় দেশীয় বাজারে দাম কম রাখার কারণ দেখিয়ে ইলিশ-সহ সব সামুদ্রিক মাছ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক। আজ নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে আর সব সামুদ্রিক মাছ রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও ইলিশ রফতানি বন্ধই রাখা হল। এমনিতেই ইলিশের মরসুম এখন শেষের মুখে। এখনও রফতানি শুরু না হওয়ায় বলা যেতে পারে, চলতি মরসুমে ও বাংলায় আর ইলিশ পৌছনোর আশা রইল না।
বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া ইলিশের দুই-তৃতীয়াংশই যায় পশ্চিমবঙ্গে। বাকিটা ‘ফ্রোজেন’ হিসাবে যায় ইউরোপের নানা বাজারে। অনাবাসী বাঙালিরাই মূলত তার খরিদ্দার। ইলিশ রফতানি বন্ধ রাখায় বাংলাদেশ প্রচুর বিদেশি মুদ্রা হারাচ্ছে বলে দাবি রফতানিকারীদের। হিলসা ফিস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ইউসুফ শিকদার বলেন, ইলিশ রফতানি বন্ধ রাখাটা বাণিজ্য মন্ত্রকের একটা ‘ভুল ও অবাণিজ্যসুলভ’ সিদ্ধান্ত। এই রফতানি থেকে সরকার প্রচুর বিদেশি মুদ্রা ও রাজস্ব পায়। তা তো মিলছেই না, উল্টে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে চোরাচালান উৎসাহিত হয়েছে।
শিকদারের দাবি, রফতানি বন্ধ করে দেশে ইলিশের দাম যে কমানো যায়নি, খরিদ্দাররা হাত পুড়িয়ে তা বুঝেছেন। বাজারে এক কিলো বা তার চেয়ে বড় ইলিশও নেই। বড় আর ভাল মানের ইলিশ গেল কোথায়? শিকদার জবাবে বলেন, বড় ও ভাল ইলিশ যে ওঠেনি তা নয়। জেলেরা মণ মণ বড় ইলিশ ধরেছেন। কিন্তু এক দল অসৎ ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে সে সব দিব্যি দেশের বাইরে চোরাচালান হয়ে গিয়েছে। অথচ বৈধ রফতানি ব্যবসায়ীরা মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছেন। সরকারের সিদ্ধান্তে তাঁদের রুটি-রুজি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। শিকদার বলেন, বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রকের গোচরে এনেও যে লাভ হয়নি, আজকের নতুন বিজ্ঞপ্তি তার প্রমাণ।
রমজান মাসের সময়ে বাড়তি চাহিদার কারণে সব জিনিসের সঙ্গে মাছও বাংলাদেশে অগ্নিমূল্য হয়ে ওঠে। এ বারই প্রথম সরকার দাম নিয়ন্ত্রণের যুক্তি দেখিয়ে চিংড়ি ছাড়া সব ধরনের মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করে। ৩১ জুলাই এই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাছ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। ফলে রমজান মাস কেটে যাওয়ার পরেও এ বার আর পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রফতানি করা যায়নি। ইলিশ রফতানি শুরু করার জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে বারে বারে দাবি জানিয়ে এসেছেন। তার পরে আজ নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও শুধু ইলিশ রফতানিতেই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রইল। |