জোট ভাঙতেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের খাসতালুকে এসে রাজ্যে এইম্সের ধাঁচে হাসপাতালের দাবিতে সুর চড়া করল কংগ্রেস। শনিবার বিকালে মন্ত্রীর শিলিগুড়ির দফতরের সামনে গাড়িতে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সভা করে কংগ্রেস। তার আগে শহরে কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির নেতৃত্বে মহামিছিল করেন উত্তরবঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্ব। দীপাদেবী সভায় অভিযোগ করেন, “কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেবে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য। কেবল জমি অধিগ্রহণ করতে হবে রাজ্যকে। কিন্তু রাজ্য সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা করছে না। উল্টে জমির দোহাই দিয়ে হাসপাতালটি অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইছে। এটা মানা হবে না।”
দীপাদেবী জানান, রাগঞ্জের পানিশালায় হাসপাতালের জন্য জমি চিহ্নিত হয়েছে। এলাকার ৮২টি পরিবার স্বেচ্ছায় জমি দিতে প্রস্তুত রয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জমি অধিগ্রহণ না করে জমি পাওয়া যাবে না বলছে। আমরা আর কয়েকদিন দেখব। জমি রাজ্যকে নিতেই হবে। নইল কী ভাবে সরকারি নিয়মে জমি অধিগ্রহণ করতে হয় তা কংগ্রেস জানে। এটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। এইম্সের ধাঁচে হাসপাতাল রায়গঞ্জেই হবে। এই বিষয়টি রাজ্য সরকারের কানে পৌঁছে দিতেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে সভা করা হয় বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ বরাবরই কংগ্রেসের শক্তিঘাঁটি বলে পরিচিত। |
পুরসভা থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতিটি ক্ষেত্রেই খাতাকলমে তা প্রমাণিত। আগামী জানুয়ারি মাসেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে। তার উপরে জোট ভেঙে গিয়েছ। সব কিছু মাথায় রেখেই তাই এবার কংগ্রেস রাস্তায় নামছে। এইম্সের ধাঁচে হাসপাতাল নিয়ে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় আন্দোলনের কর্মসূচি কংগ্রেস দিন দশেক আগে নেয়। তার পরে কেন্দ্র এবং রাজ্য রাজনীতির নতুন অঙ্কে সেই আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
যেমন সাংসদ দীপাদেবী এদিন জানান, ৩৫ বছরে বাম সরকার রাজ্যকে যা পিছিয়ে দিয়েছিল। গরিব মানুষের দোহাই দিয়ে এই সরকার তার থেকে বেশি পিছনে ঠেলে দিল। মা-মাটি-মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে। রাজ্যকে ২০০৯ সাল থেকে কংগ্রেস ত্যাগ স্বীকার করে আসছিল। আসন সমঝোতার জেরে অনেক এলাকায় তৃণমূল টিকিট পাওয়ায় আমরা মানুষের কাছে যেতে পারিনি। এবার সেই কাজ করা হবে। ধানের সহায়কমূল্য, সারের মূল্যবৃদ্ধি, এফডিআই-র সুবিধা সব নিয়েই আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাব। সভায় কংগ্রেসের আরেক সাংসদ আবু হাসেন খান চৌধুরী বলেন, “কংগ্রেস আর অন্যায় বরদাস্থ করবে না। মালদহেও আমরা কর্মসূচি নিচ্ছি। লক্ষাধিক মানুষকে নিয়ে রাস্তা নামব।”
এদিনের সভায় দলের বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, সুখবিলাস বর্মা ও গোলাম রব্বানি উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে বাঘাযতীন পার্ক থেকে শুরু হয় মিছিল। একে শহরে তীব্র যানজট হয়। তার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে রাস্তার একপাশ প্রায় ২৫ মিনিট বন্ধ করে সভা গয়। সেখানে শঙ্করবাবু বলেন, “আমরা কারও বিরুদ্ধে কুৎসা করতে আসি। কিন্তু দীপা দাশমুন্সির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করা হচ্ছে। এতে উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আমরা তা মানব না।’’
|
ন্যায্য মূল্যে ওষুধ দিতে আগামী অক্টোবরের মধ্যে দোকান চালু করবেন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ‘জন ঔষধি’ নামে ওই দোকান ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে। শনিবার রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু হাসপাতালের রোগীদের লোক নন, অন্য বাসিন্দারও সেখান থেকে বাজার দরের চেয়ে কিছুটা কম দামেই ওষুধ কিনতে পারবেন। তাতে একদিকে ন্যায্য মূল্যে ওষুধ পাওয়ার পাশাপাশি রাতে অন্য ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নিয়ে যে সমস্যায় পড়তে হত তা মিটবে। শিশুদের চিকিৎসার জন্য ‘নিওনেটলজি ইউনিট’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে ৬ শয্যার ওই ইউনিট চালু করা হবে। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, ন্যায্য দামে বাসিন্দারা যাতে ওষুধ কিনতে পারেন সে জন্য হাসপাতালের মধ্যেই ওই ওষুধের দোকান থাকবে। সম্প্রতি হাসপাতালে স্যালাইন-সহ বিভিন্ন ওষুধ পর্যাপ্ত সরবরাহ না-হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এমনকী রোগী কল্যাণ সমিতির তহবিলে টাকা না থাকায় বিপত্তি ঘটে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক জানান, হাসপাতালে স্থায়ী সুপার না থাকা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সুপার নিয়োগের আর্জি স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছেু। হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে চুক্তিতে কয়েকজন চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টিও তাঁরা ভাবছেন। |