রাজ্য: লাভের ঘরে কার কত, চলছে হিসেব
বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ। এখন শুরু লাভ-ক্ষতির হিসেব।
শনিবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে কংগ্রেসের ৬ মন্ত্রী পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা আগে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে তৃণমূলের মন্ত্রীরা চিঠি দিয়ে জানান, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে তাঁরা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এ দিন সন্ধ্যায় একই ভাবে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে চিঠি দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়ে দিলেন, মমতা-সরকার থেকে তাঁরা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
দুই শরিকই এখন ‘মুক্ত’।
এবং জোট ভাঙার ‘মুক্তধারা’য় কংগ্রেস না তৃণমূল কে লাভবান হয়েছেন, তা নিয়ে দুই শিবিরেই হিসেব কষা শুরু হয়েছে।
রাজ্য কংগ্রেসের বক্তব্য, গত ১৬ মাস ধরে যে বাধ্যবাধকতার মধ্যে তাঁরা আটকে ছিলেন, তার থেকে বেরিয়ে এসে আখেরে লাভই হয়েছে। রাজ্য সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই ‘বাধ্যবাধকতা’য় তাঁরা দলীয় কর্মীদের উপর তৃণমূলের হামলা থেকে শুরু করে সরকারের নানা কাজের ব্যর্থতার প্রতিবাদে ‘জোরদার আন্দোলন’ গড়ে তুলতে পারেননি। এখন দলকে ‘আন্দোলনমুখী’ করতে পারবেন। এর ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় কর্মীরাও চাঙ্গা হবেন। সরকারি নানা দফতরের ব্যর্থতা নিয়ে পুজোর পর থেকেই কংগ্রেস আন্দোলনে নামবে। প্রদীপবাবু বলেন, “আগামী ১২ অক্টোবর প্রদেশ কংগ্রেসের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আন্দোলনের রূপরেখা স্থির হবে।”
মহাকরণে এ দিন যতই সৌজন্যের ছবি থাক, রাজভবন থেকে বেরিয়ে কিন্তু মানস ভুঁইয়াও বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের সিদ্ধান্তে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। এটা সহ্য করা যায় না। তৃণমূল দলের স্বার্থে রাজনীতি করে। আর কংগ্রেস করে দেশের স্বার্থে।” তখন তাঁর পাশে বাকি পাঁচ পদত্যাগী মন্ত্রী আবু হেনা, আবু নাসের চৌধুরী, সুনীল তিরকে, সাবিনা ইয়াসমিন ও প্রমথনাথ রায়। জোট ভাঙার পরে কংগ্রেস-তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাগুলির পরিস্থিতিও ‘অনিশ্চিত’ হয়ে উঠেছে। সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভাতেও। এখানে জোটের অনিশ্চয়তা নিয়ে তৃণমূলকে দায়ী করেছেন জন্য কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল দ্রুত তৈরির দাবিতে এ দিন শিলিগুড়িতে এক সভায় দীপা তৃণমূলের কঠোর সমালোচনা করেন।
জবাবে তৃণমূল নেতৃত্ব কী অবস্থান নিচ্ছেন?
স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের ‘হুমকি’কে গুরুত্ব দেননি তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা। এ দিন উত্তর কলকাতার টালায় একটি জলপ্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই বলেন, “চমকে, ধমকে লাভ হবে না। কেউ চমকালে আমরাও গর্জাব। বাংলা গরিব হতে পারে। কিন্তু মর্যাদায়, সম্মানে অনেকের থেকে বড়।” একই সঙ্গে কংগ্রেসের সমালোচনা করে তাঁর বক্তব্য, “কোনও ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের কাছে মাথা নত করতে রাজি নই।” কংগ্রেসের আন্দোলন নিয়ে তির্যক মন্তব্য করে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওঁদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, স্বাধীনতার পরে ওঁরা আবার যুদ্ধে নামতে চলেছেন। আমার তো মনে হয় ওঁরা যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা খেলবেন! কারণ, আমাদের বিরুদ্ধে কাদের নিয়ে ওঁরা যুদ্ধ করবেন? কারণ, মানুষ তো সব তৃণমূলের দিকেই!” জোট ভাঙার পরে কংগ্রেস ‘লাভের জায়গায় নেই’ বলেই মনে করেন সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “ওঁদের তো লোকসানই। কারণ ওঁদের দলে তো মমতার মতো কোনও জননেত্রী নেই।”
কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, এই ‘বিচ্ছেদে’ তৃণমূলেরই ‘ক্ষতি’ হবে। কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “তৃণমূলের এ রাজ্যে আর কোনও বন্ধু রইল না। কারণ, সিপিএম তো তৃণমূলের বন্ধু নয়। আবার বিজেপিও নয়। এ বার কংগ্রেসকেও ছেড়ে দিল ওরা। ফলে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সময় তৃণমূলকে সমস্যায় পড়তে হবে।” রেল মন্ত্রক ছেড়ে দেওয়ায় ‘চোখে পড়ার মতো উন্নয়নের কাজ’ দেখানোর সুযোগও তৃণমূলের হাতছাড়া হল বলে মনে করেন ওই কংগ্রেস নেতারা। তবে মমতা এই যুক্তিকে আদৌ আমল দিচ্ছেন না। তিনি প্রকাশ্যেই দাবি করেন, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যা কাজ করেছেন, তা মানুষ মনে রাখবেনই। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার ‘দুর্নীতি’তে জড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে গায়ে কালি মাখার কোনও অর্থ হয় না।” বস্তুত, তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মত, কেন্দ্রে কংগ্রেসের দুর্নীতির দায় ভাগ নেওয়ার বদলে একলা চলা অনেক বেশি লাভের। তির্যক সুরেই তাঁরা বলছেন, রাজ্যে তো এত দিন সম্পর্ক যথেষ্ট ‘মধুর’ই ছিল। তা আর কতটা বদলাবে! বরং এত দিন জোট শরিক হিসেবে কংগ্রেস সমালোচনা করলে তার গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। এ বার সিপিএমের মতো ওরাও বিরোধী। আর বিরোধীদের ধর্মই হল সরকারের সমালোচনা করা, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা।
সব মিলিয়ে, পূর্ণ বিচ্ছেদের দিন থেকেই শরিক থেকে প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা দু’পক্ষ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
শেষ পর্যন্ত কারা ‘লাভবান’ হবেন, তা অবশ্য বুঝতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে মানুষকে। কারণ, পরীক্ষার প্রথম ফলটা বার হবে পঞ্চায়েত ভোটে। তা হতে এখনও অন্তত কয়েক মাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.